মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭

জাজমেন্ট



ট্রেন চলছে। পিতা-পুত্র পাশাপাশি বসা।
মায়াবী চেহারার ছেলেটার বয়স সতের কি আঠারো হবে। সরল চেহারা, উৎসুক দৃষ্টি। হাতের কনুইয়ে ভাঁজে থুতনি রেখে সে তার সতর্ক দৃষ্টি মেলে দিয়েছে জানালার ওপারে।
হঠাৎই ছেলেটা চেঁচিয়ে উঠলো-- "বাবা! গাছগুলো আমাদের ছেড়ে পেছনের দিকে ছুটছে। হা হা হা, কী চমৎকার! পাশে থাকা বাবা মুচকি হেসে সেদিকে তাকালেন।
বগির অন্যেরা নড়েচড়ে বসলো। কেউ কেউ চশমার ফাঁক গলে প্রশ্নের নজর ছুঁড়লো--পাগল নাকি?
ঘটনার আকস্মিকতা কাটতে না কাটতেই ছেলেটা আবারও— "বাবা, দেখ! দেখ! মেঘগুলো আমাদের সাথে সাথে ছুঁটছে।
এবারে পাশের সিট থেকে এক অতি উৎসাহী প্রফেসর গোছের জ্ঞানদাতা ব্যক্তি বলেই ফেললেন— সমস্যা কী এই ছেলের? একে ডাক্তার দেখাতে পারেন না? এই বয়সেও ঢং। এতো হাউকাউয়ের অর্থ কী?
ছেলেটির বাবা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন— আসলে আমরা হাসপাতাল থেকেই ফিরছি ভাই; আমার এই ছেলেটা খুব ছোট বেলাতেই তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। আজই সে প্রথম তার চোখ দিয়ে এই বিচিত্র পৃথিবীটাকে দেখছে। আজই তার প্রথম পরিচয় ট্রেন থেকে ছুটে যাওয়া মেঘ আর গাছগুলোর সাথে। এই জানালাটার বাইরেও যে এক অতি বিচিত্র আর রঙ্গিন পৃথিবী আছে তা সে বুঝতে পেরেছে আজ ১৮ বছর পর।
বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা করবেন ভাই।
===================
এ পৃথিবীর আট বিলিয়ন মানুষের প্রত্যেকের জীবনের একটা আলাদা গল্প আছে। আলাদা একটা সত্ত্বা আছে। এই প্রতিটা গল্প প্রতিটা থেকে আলাদা, একেবারেই অন্যরকম। আমরা সেসব জানি না, জানার পরোয়াও করি না। আমরা শুধু জানি তার ওপরের মোড়কটা দেখে তার প্রতি তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে।
হয়তো তার বাহ্যত করা কাজের পেছনে এমন কোনো কিছু রয়েছে যা তাকে কাজটা করতে বাধ্য করেছে, অথবা সেটা ছিল তার মানবিক ভুল, অচিরেই সে তা শুধরে নিয়ে হয়ে উঠবে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার অতি প্রিয় বান্দা। আর টেবলের অন্যপ্রান্তে বসে আমি আর আপনি চায়ের সাথে সমালোচনার যে টোস্ট বিস্কুটটা গিলে যাচ্ছি সেটা হয়তো নিজেদের আমলগুলোকেই পাঠিয়ে দিচ্ছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। কে জানে?
মুসলিমদের উপর সুধারণা পোষণ অতি গুরুত্বপূর্ন এক দায়িত্ব। যা বিচ্ছিন্ন হলে সমস্যার শেকড় পৌঁছে যায় সমাজের অতি অতি গভীরে। যদি আমরা তা বুঝতাম!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন