বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

সরলতার জটিলতা



মানুষ তার শেকড়ের সাথে বেইমানি করতে বেশ আরামবোধ করে। শূন্যে মাথা উঁচু করে ডাল-পালা মেলতে শেখা মাত্রই সে নিজেকে বিরাটাকার মুন্সি টাইপ কিছু একটা ভেবে নিজ শেকড়কে অস্বীকার করে বসে। সে ভুলে যেতে চায় নীরব-নিভৃতে যে শেকড় তার জন্মলগ্ন থেকে আজকের এই অবস্থানে আসতে সাথী হয়েছে তাকে আদতে দেখা না গেলেও এই শেকড়টাকে ছাড়া সে আসলে মূল্যহীন। স্রেফ পুড়িয়ে ফেলা খড়িকাঠ মাত্র। 

যে ছেলেটা নতুন নতুন শহরে এসে আসসালামু আলাইকুম কে চালামালাইকুম বলতো সে ছেলেটা যখন বছরখানেকের শহুরে লু হাওয়ায় গা ভাসিয়ে ইয়ো ব্রো বলতে চায় তখন কাক আর ময়ুরের গল্পটাই সবাই আওড়ায়। ছেলেটাকে খুব বেশি স্মার্ট ঠাওড় করে না। ওভার স্মার্টনেস কখনওই কোনো কাজের কথা নয়। জীবনে ভাত আর পরিমিতিবোধ এই দুই জিনিস বর্তমান থাকাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। 

কলেজ জীবনে নতুন ঢাকায় আসা ছেলেগুলোকে রুটিন করে আমরা র‍্যাগিং দিতাম (এখন বুঝি কাজটা অতি ঘৃণিত অপরাধের পর্যায়ে পরে)। আসলে কারণটা এমন ছিল না যে তারা ঢাকায় নতুন তাই মজা নেয়া হচ্ছে। বরং তাদেরকেই বেশি র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে হত যারা ঢাকা এসেই নিজের জসিম নামটাকে জাস-সিম বলে সবার কাছে পরিচয় দিতে চাইতো (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)। 

সরলতার একটা সৌন্দর্য আছে, এর একটা মমতাময় ছায়া আছে। নিজেকে স্মার্ট বানাতে স্রেফ শরীরটাতে লুঙ্গি-ফতুয়ার বদলে সুট-বুট চড়ালেই হয় না, মনের মাঝেও সুট-বুট চড়ানোর প্রয়োজন আছে। আমি আজ সো কলড স্মার্ট(নিজ চোখে) বলে বাকিদের চোখ সরু করে ইউ ব্লাডি বিলেজ পিপুল বলে কটাক্ষ করলে নিজেরই সম্মান যাবে। 

শেকড় ধরে লোকে যদি পরে টানাটানি শুরু করে তখন কিন্তু ইজ্জত বাঁচাতে শেষ-মেশ স্যুট ত দূর কী বাত লুঙ্গীটাও খুঁজে পাবেন না দাদা…

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন