বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

সরলতার জটিলতা



মানুষ তার শেকড়ের সাথে বেইমানি করতে বেশ আরামবোধ করে। শূন্যে মাথা উঁচু করে ডাল-পালা মেলতে শেখা মাত্রই সে নিজেকে বিরাটাকার মুন্সি টাইপ কিছু একটা ভেবে নিজ শেকড়কে অস্বীকার করে বসে। সে ভুলে যেতে চায় নীরব-নিভৃতে যে শেকড় তার জন্মলগ্ন থেকে আজকের এই অবস্থানে আসতে সাথী হয়েছে তাকে আদতে দেখা না গেলেও এই শেকড়টাকে ছাড়া সে আসলে মূল্যহীন। স্রেফ পুড়িয়ে ফেলা খড়িকাঠ মাত্র। 

শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

চেতনা ব্যবসা



রাসুল(সা.) কিছু কিছু মানুষের কথাকে 'সিহর' বা জাদু বলেছেন। জাদু শব্দটা বাংলা ভাষায় কখনও কখনও পজেটিভ অর্থ নির্দেশ করলেও আরবি কিংবা ইসলামি পরিভাষায় সর্বদাই জাদু মন্দ বা ক্ষতিকর অর্থ নির্দেশ করে। 

জাফর স্যার কিংবা শাহরিয়ার কবিরেরা অতি মার্জিত, সুন্দর ভাষা আর শব্দ নিয়ে খেলতে পারেন। কথার জাদুতে কেমন মায়া মায়া একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাদের তারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান সেই কৈশোর থেকে। ভালো-খারাপের ফিল্টার শেখান হাতে-কলমে। 

আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভয়াবহ রকমের দুর্ভাগা। যে পত্রিকায় জাফর স্যারের মুক্তিযুদ্ধের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ গল্প পড়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সবক নিতে শিখি সেই একই পত্রিকায় বিনা চিকিৎসায় তড়পাতে তড়পাতে মুক্তিযোদ্ধার মরে যাবার গল্পটা এড়িয়ে যাই। 
যেন এ ত হবারই ছিল। কিচ্ছু না বস...অতি স্বাভাবিক ব্যাপার! 

বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারেরা আজ কোথায় কেমন ভাবে ভিক্ষার জীবনযাপন করে তার খন্ডিত কাটখোট্টা সংবাদ আমাদের নাড়া দেয় না। নাড়া দেয় ‌কথার যাদুতে মুক্তিযুদ্ধের গল্পকারদের আলা-ভোলা কাহিনি। গল্পের আসরগুলো কখন যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতেও এর গল্পকারদের শ্রেষ্ঠ বানিয়ে দিয়েছে তা আমরা টেরও পাইনি। 

বুক ফুলিয়ে খাটের তলা আর মুরগী সাপ্লাই সেক্টরের লোকেরা আজ বিজয় দিবস নিয়ে বীরত্বগাথা রচনা করেন। সেই বীরত্বগাথা পড়ে আকণ্ঠ চেতনা গেলা জেনারেশন 'ভিজে দিউয়াস' কে ভ্যালেন্টাইনস ডে ভেবে হিন্দি গান ছেড়ে রাস্তায় নাচানাচি করে। অবশ্য এমনটা হওয়াই স্বভাবিক। 

যে স্যার রোবট দেখে বলে উঠেন ড্যান্স করো ত, সেই স্যারের চেতনাধারী ভাইদের কাছে এর চাইতে আর বেশি কিছু আশা করাটাই বোকামি.... আফটার অল চেতনাজীবি-চেতনাজীবি ভাই ভাই।

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

নিঃস্বার্থ চাঁদ



লিখতে বসেছি। বহুদিন পর। ঔদাসিন্যের সময়গুলোতে লিখতে বসিনা অনেকদিন। ভুল হলো কোথাও? বসিনা? নাকি পারিনা? নিশ্চিত নই সত্যিই!
একজন বললেন, আপনার সাহিত্যভাব আছে, একটা পজেটিভ টাইপ উপন্যাস লিখে দেন। ছাপাই!
নিজের সাথেই নিজে যুদ্ধ করি

শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭

পকেট ভরা সুখ আমার





রাত ১২.৩০।

নগরীর ব্যস্ততম রাস্তাটা খুব আদুরে ধরণের চুপচাপে ব্যস্ত। অদ্ভুত নীরবতা সবখানে....
সারাদিনের ভিক্ষা শেষে ৭/৮ বছরের পথশিশুটা বন্ধ দোকানটার সিঁড়িতে বসা। একা!

ওপাশ থেকে বেলুনওয়ালার চিৎকার-- কিরে বাড়ি যাইবি না?
প্রচন্ড একা মেয়েটা তার ছলছলে চোখের ভাষায় শব্দহীন কোন একটা জবাব দেয়।

চোখের ভাষার জবাবটা বুঝে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে হাতের কোল্ড কফিটাতে টান দিতে দিতে গুণগুনিয়ে ফিরতে লাগলো বেলুনওয়ালা। হয়তো নিজ বাড়ি।

ভালোবাসতে জানতে হয়। প্রচন্ড অসুন্দর এই পৃথিবীটায় অদ্ভুত সুন্দরেরা সবসময় লুকিয়ে থাকে অতি গোপনে। 

সারাদিনের খাঁটুনি শেষে ক'জন পারে বুক পকেট ভর্তি সুখ নিয়ে বাড়ি ফিরতে?

শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭

আত্মামৃত





গুগল সার্চ করলেই সবচেয়ে কাছের এটিএম বুথটার অবস্থান জানা যাবে। কিন্তু সার্চ করলেই জানা যাবে না সবচাইতে কাছের শিউলি ফুল গাছটার অবস্থান।
বস্তুগত আনন্দ লাভের হাহাকার এই দুনিয়াজুড়ে। শুধু আত্মিক আনন্দটার কোন ব্যবস্থা নেই। হালকা চোটে হাসপাতাল-ডাক্তার-নার্স সবকিছু ডেকে একাকার করে ফেলা যায়। কিন্তু বিষে-বেদনায় কারও ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে-মরে নি:শেষ হয়ে গেলেও সারাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই....

প্রতিদিন মানুষ দেখি। মৃত মানুষ। দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু ভেতরটা মরে গেছে; বহু আগে, বহুকাল আগে...

শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭

ঝিলমিলে মতিঝিলে...


মোগল সাম্রাজ্যের সময়ে মতিঝিল এলাকাটি মির্জা মোহাম্মদের মহল হিসাবে গণ্য হতো, যার মধ্যে ছিলো একটি ঝিল। শুরুতে সুকাকু মহলের ঝিল হিসাবে খ্যাত হলেও পরে এই ঝিলটি মতিঝিল নামে পরিচিত হয়ে উঠে, এবং এর নামানুসারেই এলাকাটির নামকরণ করা হয়।

মজার ব্যাপার হলো দেশ থেকে বহু হাতি-ঘোড়া বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এ ঝিলটির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। এক সময় এ ঝিলটি মুগদার মান্ডা এলাকার খালের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে একে নালা বললেও ভুল বলা হবে না। ছোট হতে হতে এর দৈর্ঘ্য বর্তমানে বড় জোর ৬০ থেকে ৭০ গজে এসে ঠেকেছে।

ছবিতে এই ঝিল নামের নালাটা দেখা যাচ্ছে...

বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭

পদ্ম-মেস


ছোট ভাইয়ের মেস। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফেনা ভর্তি টুথপেস্ট মুখে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এরা শাপলা দেখে।

বাড়িওয়ালাদের মন তাদের বাড়ির বারান্দার পরিমাপের সমানুপাতিক। একটা কৃপণ বাড়ির বারান্দায় কখনো পা মেলে বসা যাবে না, উঠোনও থাকবে না; কেবল শিকহীন এক খাঁচায় মাথা গুঁজে বেঁচে থাকা....

এমন মেসে থাকতে পারাটা ভাগ্যি বলতে হবে...

শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

আমার নাগরিক জোছনা





শহুরে চাঁদের মধ্যে মেকি মেকি একটা ভাব থাকে। ভাগ্য ভালো হলে এছাদ ওছাদের ফাঁক গলে উঁকি দিলে তার দেখা পেলেও পাওয়া যেতে পারে। আর দেখা গেলেও তেমন একটা আরাম নেই; টিউব লাইট আর জোছনার আলো পৃথক করাটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।
শহুরে চাঁদ দেখলে আমার মনে হতে থাকে পাশের বাড়ির ৬ তলা ছাদটায় ডেকোরেটর ওয়ালারা বাঁশ দিয়ে বাতি জাতীয় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছেন। ও বাড়ির বিশেষ অনুষ্ঠানটা শেষ হলেই তড়িঘড়ি আবার খুলে নিয়ে চলে যাওয়া হবে ডেকোরেটর ওয়ালাদের ঠেলায় চড়িয়ে।

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এই ধ্রুব এই....


সুনয়না,
তুমি কী জানো রাত বাড়ার সাথে সাথে ধ্রুবতারাটাকে একা রেখে বাকি সব তারারা যে পৃথিবীর আকাশ থেকে সরে যায়? এই তারাটা ঠিক ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা নিরীহ বোকা ছেলেটার মতো-- হাজার জ্বালাতনেও ছলছল চোখে জগতের নিষ্ঠুরতাগুলোকে যে গিলে নিত নীরবে, নিভৃতে।

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কুরবানি-মেহেরবানি





আদম(আ.) এর সময়ে কুরবানি কবুল হলে আকাশ থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিতো। কুরবানি করার সাথে সাথেই তাই রেজাল্ট হাজির-- কার কুরবানি কবুল হলো আর কার হয়নি ফলাফল হাতেনাতে।

এখন কুরবানি হয় লাখে-হাজারে। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের দয়া করে গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তা না হলে এই অসততার বাজারে মানুষের কাছে ধরা খেয়ে যাবার ভয়ে কুরবানি দিতো ক জনে?

এখন কুরবানি হয় একে অপরকে বড় গরুর ঠাঁট দেখাতে; ফলাফল টা যদি হাতেনাতে সে সময়ের মতো পাওয়া যেত তাহলে নিজের ভন্ডামি আর অসততা প্রকাশ হয়ে পড়ার ভয়ে কুরবানি হত অতি সামান্যই।

সপ্ত আসমানেরও উপরে যিনি আছেন, তিনি কিন্তু ঠিক ই জানেন আপনার কুরবানির গরুটা কিভাবে কেনা, কি টাকায় কেনা। জেনেও সুযোগ দিচ্ছেন বারবার। হাপুশ হুপুশ গোশত খেতে দিচ্ছেন বিনা বাঁধায়।

মানুষকে ভয় করার চাইতে আল্লাহকে ভয় যদি আমরা করতাম, হয়তো দু কূল রক্ষাই হত। ধরা কিন্তু খেতেই হবে, হয় এখন নাহয় তখন। নগদ কিংবা বাকি।

মাটির নিচে ধরার খাবার চাইতে উপরে ধরা খাওয়াটা অনেক অনেক গূণে উত্তম। যদি আমরা তা বুঝি....

রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭

মাটি!


আকাশে কিছু চিল পাক খাচ্ছে বারবার! ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ।

রহমত মিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দীর্ঘ রাতের ক্লান্তি আর বিষন্নতায় কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছেন মনে নেই। চারদিকে কেমন শান্তি শান্তি একটা ভাব। ভয়ংকর ঝড়ের শেষ কিংবা উৎসব শেষের হাহাকারের মতো চারদিক শান্ত। নিথর। সুর্যটা সবে আড়মোড়া ভাঙা শুরু করেছে। গা জুড়ানো বাতাস আর শব্দ বলতে কেবল কলাগাছের ভেলাটার গায়ে আছড়ে পড়া পানি। ছলাৎ ছলাৎ!

শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

মোটিভেশনাল জীবন...



অদ্ভুত একটা সময়ে বেঁচে আছি। অতৃপ্ত আত্মার খেলা সর্বত্র। এত এত কম্প্যারিজনের খিস্তি-খাউরে নিজ আত্মা, নিজ জীবনটাকে নিয়ে ভাববার ফুরসৎ নেই কারও।
স্বামী-স্ত্রীতে, বন্ধুত্বে, ভ্রাতৃত্বে সবখানে কী যেন একটা মিসিং। কি যেন একটা নেই...কি যেন একটা...অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে হতে কখন যে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"- এর প্রকাশ ছেড়ে কোলন ডি আর কোলন অ্যাস্টেরিক্সে আটকা পড়ে গেছে আমরা তার থোড়াই খবর রাখি।
আমার প্রিয় কাজ মানুষ দেখা। দেখি। ঘুরেফিরে দেখি। বারবার দেখি। শুনি। ঘুরেফিরে শুনি। বারবার শুনি। কথা। কত কথা। অনেক কথা। কারও কারও অনুভূতিতে বিলীন হই কিছুটা সময়ের জন্য। যার কাছেই যাই, যেখানেই দেখি, অল্প একটু মনোযোগে ভেতর টা উঁকি দিলেই পরিষ্কার দেখি হাহাকার। এক বুকভরা হাহাকার। আমার মনটা বিষিয়ে ওঠে দিন দিন। প্রতিটাদিন।
প্রায়ই আমাকে শুনতে হয় আপনি ভাববাদী। ভাবের কথা বলেন, দুঃখের কথা লেখেন কেবল। আমি আমার সাথে যে এক পৃথিবী রহস্য আর মানুষের গোপন দীর্ঘশ্বাঃসের বাক্স নিয়ে বসে আছি, সেটা কেউ বুঝবে না কোনোদিন। আমার কবরে ঠিক কতগুলো মানুষের গোপন কষ্টের সাক্ষী হয়ে আমি যাবো সেটা হয়তো কেউ কোনোদিন টেরও পাবে না। একেকটা দিন আত্মাটা বিষিয়ে থাকে।
বিশ্বযুদ্ধগুলোর পর পর গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রচন্ড ডিপ্রেশন কাবু করে ফেলেছিলো। রাজনৈতিক সমস্যা যে যুদ্ধের সুচনা করেছিল, সে যুদ্ধ প্রভাব ফেলেছিলো সমাজে। রাজনৈতিক সমস্যাটা সীমাবদ্ধ থাকেনি রাজনীতিতে। ছড়িয়ে পড়েছিলো প্রতিটা পরিবারে, প্রতিটা মৌলিক পারিবারিক সম্পর্কে। মানবতা-আদর্শ-নীতিবোধের খুঁটিগুলো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়ে গেলো গোটা সমাজে।
আমাদের বর্তমান এই সমাজটার জন্য কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। নীতি-উৎসাহ-জীবনবোধ এসবকে আমরা গলা টিপে হত্যা করেছি টেলিভিশন -মিডিয়া, ইন্টারনেট কিংবা ফেসবুককে ঠিকাদারি দিয়ে। কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারিনা, জানিনা, নিজেকেও হয়তো না।
মোটিভেশনাল স্পিচ, ভিডিও, লেখা, লাইক, শেয়ার বিক্রি হয় আজ অর্থে বিনিময়ে। ভাবা যায়? একটা মানুষের মন কতটা বিষিয়ে গেলে, কতটা একাকি হয়ে গেলে তাকে অর্থের বিনিময়ে মন ভালো করা কথা কিনতে হয়?

কিন্তু তবু শান্তি টা কোথায়? আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে ডাকাতিয়া নদীর তীরে বসে সুপারি বিক্রি করা আমার দাদাকে কে মোটিভেশন দিয়েছিলো এগারো সন্তানকে এত ভয়ানক সুন্দর করে মানুষ করতে? এই জীবন সায়াহ্নে এসে কোনোদিন একটা সেকেন্ডের জন্যও তাকে নিজের জীবনটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করতে হয়নি। হতাশ মনে হয়নি। জীবন ছিল সরল, মানুষগুলোও। ডাকাতিয়া নদীটা নেই। প্রায় শুকিয়ে মরে গেছে। মরে গেছে আমাদের ভেতরটাও। শুকনো খড়খড়ে মাটির মতো।
শান্তি পেতে চাইতে হয়। চোখটা বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নিজেকে আশ্বস্ত করতে হয় আসলেই আমি শান্তি চাই! লিখতেও বিরক্ত লাগছে। লাভ কী? এর বিরুদ্ধেও একদল দাঁড়িয়ে যাবে। আমাদের সবার ই কিছু একটা বলার আছে। বোঝার কিসসু নেই। পড়া শেষ হবার আগেই অস্থিরতায় লাইক পড়বে। স্ক্রল করে দ্রুত আরেকটা লেখায় চলে যেতে হবে। অস্থিরতা...অস্থিরতা...অস্থিরতা...

কেউ বদলায় না আসলে। এইসব মোটিভেশনাল কথা-বার্তা কেবল দিনশেষে নিজেকে বুঝ দিয়ে সময় কাটানোর ই নামান্তর মাত্র। ধুর!

সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭

বিপ্লবী জোছনা



অফিস থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা পেরুলো। জুতোর ফিতাটা বেঁধে ওপরে চোখ তুলেই টের পেলাম ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে গেছে। আজ শহরের বিশেষ একটা দিন! শ্রাবণের আকাশটা অতিমাত্রায় ফকফকে; আর তার বুকে প্যারাসিটামল আকৃতির গোলগাল একটা হলদে চাঁদ ঝুলে আছে। ভয়ানক সুন্দর এক আকাশ। জগতের যে হাতে গোণা কয়টি বিষয় নিয়ে আমি অতিমাত্রায় আহ্লাদিত হয়ে পড়ি তার অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে—পূর্ণিমা।
শহরের পূর্ণিমা বরাবরই আমার কাছে শো-পিস টাইপ লাগে।ডেকোরেটরের কাছ থেকে বিশেষ দিনে ভাড়া করে আনা প্যান্ডেল টাইপের ব্যাপার। বিল্ডিংয়ের ফাঁক-ফোঁকর গলে তিলো-স্পেস টাইপ লুকোচুরি খেলা দিয়েই চাঁদ তার অস্তিত্ব জানান দেবার বৃথা চেষ্টা করে যায় আমাদের কাছে।

জোছনা দেখতে হয় গাছ-গাছালিকে সাথে নিয়ে। প্রকান্ড অশ্বত্থ টাইপ গাছের ডাল-পাতার আড়াল ঠিকঠাক চাঁদটা দেখতে দেবে না, নিজের মধ্যে একটা প্রবল ঘোরময় তৃষ্ণা তৈরি হবে চাঁদটাকে ঠিকমতো দেখবার মতো, কিন্তু ইচ্ছে করেই দেখা হবে না। অসহ্য সুন্দর চাঁদের আলোগুলো তরতর করে গড়িয়ে পড়তে থাকবে গাছের প্রতিটা পাতা, প্রতিটা ডালের ফাঁক গলে। এক অদ্ভুত রহস্যময় গা ছমছমে রাত!

অথবা জোছনা দেখতে হয় ভাদ্র মাসের শান্ত-কালো নদীর মাঝ-বুকে! একটা ডিঙ্গি নৌকায় কিছুটা দূর অভিসারে চলে যাওয়া, যতটা দূর গেলে সেখান থেকে আর তীর দেখা যাবে না, ততটা দূর। চারদিকে কুচকুচে কালো পানি আর তার বুকে কুঁচকে থাকা সাদা চাদরের মতো চাঁদের আলো বেছানো। অসাধারণ দৃশ্য!

এক প্রবল হাহাকার আর নিজের তুচ্ছতার অসহায়ত্ব যে কতবার এসময় আমার চোখ ভিজিয়েছে তার হিসেব করা মুশকিল। এ পৃথিবীর বুকে এর চাইতে সুন্দর, অপার্থিব কোনো দৃশ্য আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

আজ প্রচন্ড সুন্দর একটা চাঁদ অপেক্ষা করছে আকাশে। আর আমি আমাদের জরাজীর্ণ পুরোনো বাড়িটার শহুরে ছাদে বসে নিজের দীর্ঘশ্বাস গুণছি। এই বিচ্ছিরি শহরটাতে বসবাস করে আমার একজীবনের কত সাধকে যে প্রতিনিয়ত গলা টিপে হত্যা করে যাচ্ছি তার হিসেব কেউ কী রাখে? জান্নাতে যাতে কোনো কমতি না থাকে এই আশায় বুক বেঁধে বসে থাকি, এটাই একমাত্র ভরসা, ইনশাল্লাহ। আপাতত ভাড়া করা চাঁদ দিয়েই প্রয়োজন মেটাই। শো-পিসেরও একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। 

চারিদিকে ছড়ানো হাজারটা অসুন্দরের মাঝে বসে মোটামুটি বিপ্লব করে তাকে তার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হয়। এও আর কম কিসে?

মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭

এমন ঘনঘোর বরিষায়...



প্রিয় স্বাতী,
"বৃষ্টি ছাড়া তোমাকে আমি কখনো লিখি না।"  
তোমার অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতেই আজ লিখতে বসেছি। গত দুদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে-- একঘেয়ে, একটানা। রাস্তা-ঘাটে পানি-টানি উঠে বিশ্রী অবস্থা, থলথলে কাঁদা, জুবজুবে ভেজা শার্টে ছেয়ে গেছে গোটা শহরটা। পত্রিকার ভাষায়-- "টানা বর্ষনে নাকাল শহরবাসী।" কথা ঠিক! আমি নাকাল হয়ে পড়ছি। আমি নাকাল পড়ছি এক অদ্ভুত ভালো লাগার ঘোরময় বিষন্নতায়, ঘরের জানালার কাছে থাকা গাছটার একটানা সরসর শব্দটায়, হীম করা বাতাস আর মাটির সোঁদা গন্ধটার মাদকতায়। 
জানো স্বাতী? কিছু কিছু গন্ধ আমাকে পুরোনো স্মৃতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় বারবার। আমি আজ পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম মাটির সোঁদা তীব্র ঘ্রাণটার প্রবাহ আমার নাক দিয়ে ঢুকে বুকের সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে...যাচ্ছে...যাচ্ছে; শেষমেশ গিয়ে অনেকটা বুকে জমাট বেঁধে থাকা কফের মতো করে বাঁ পাশটাতে জমাট বেঁধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কি অদ্ভুত! আমার মনে পড়ে যেতে থাকলো আমার শৈশবে কাটানো লালমাটিয়ার দিনগুলোর কথা। বৃষ্টির দিনগুলোয় স্ট্যাম্প, ব্যাট সবকিছু গ্যারেজে গুছিয়ে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলতে নেমে যেতাম রাস্তায়। কি উত্তেজনা! কি প্রবল উৎসাহ! অবশ্য আমাদের বেশিরভাগ উৎসাহ ছিল বারান্দায় দাঁড়ানো কিশোরি মেয়েগুলোকে ইম্প্রেস করার জন্যই। হা হা হা.....কি রাগ হচ্ছে খুব? কি প্রাণান্ত চেষ্টা থাকতো একেকজনের। দুর্দান্ত, ঘোরলাগা সময়গুলো। আহ!
আমি বরাবরই একটু ভাবালু টাইপের। খেলার ফাঁকের বিরতিতে কিংবা মাঝেমধ্যে অযথাই লাল রঙা ইঞ্জিনিয়ার বাড়ির চালতা গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে পানির ঝাপটাগুলো উপভোগ করতাম প্রচন্ডভাবে। অঝরধারার বৃষ্টিগুলো আমার চুল হয়ে গড়িয়ে চোখের পাতার ওপর এসে স্থির হতো, চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যেত বারেবার… সে ঝাপসা চোখের পানিগুলো হাতের তালু দিয়ে সরিয়ে দিতে যে কি এক অদ্ভূত ভালো লাগা কাজ করতো…অসহ্যকর এক ভালো লাগা!
জানো স্বাতী? আমার খুব ইচ্ছে করে ওই অনুভূতিগুলোকে ফিরে পেতে। যদি পারতাম আমার সর্বস্ব দিয়ে সে সময়গুলোকে আমি আঁকড়ে ধরতাম। এতো তীব্র করে কীভাবে আমি অনুভব করতে পারতাম সবকিছু? কীভাবে পারতাম এতো সুন্দর করে সব শুভ্র-শুদ্ধতায় সবকিছুকে সাজাতে? আমার বড্ড ইচ্ছে ছিলো তোমাকে এই বৃষ্টি-দিনের প্রতিটা সুন্দরতম অনুভূতি হাতে হাত ধরে চেনাই, চোখ বন্ধ করিয়ে অনুভব করাই আমার মতো করে। আমি এখনও খুব করে ভালোবাসি আমার এই প্রাচীন অনুভূতিগুলোকে। এই স্মৃতিগুলোর মাঝেই আমার বর্তমান বসবাস। ভালো থাকা-মন্দ থাকার বড় একটা অংশ। 
আজো ইচ্ছে করে ঠিক তেমন করে ভিজি। মনটার সাথে সাথে আমার চোখের পাতায় ঝাপসা বৃষ্টির ফোঁটা জমাই। হয় না! আমার এই সামান্য বয়সটাতেই ক্যামন করে যেন অনেকগুলো রোগ বাঁধিয়ে বসে আছি। আধঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজা মাত্রই প্রচন্ড মাথাধরায় অন্তত দু'দিন ভুগতে হয়। গলাবন্ধ হয়ে কানে ইনফেকশন হয়ে বিশ্রী এক অবস্থা তৈরি হয়। 
নিজের অসহায়ত্বে ইদানিং মাঝে মাঝে  অজান্তেই চোখে পানি জমে যায়। এখন ঠিক বৃষ্টি না, মাঝে মাঝে চোখের জলে ঝাপসা করি চোখ দুটো। এক বৃষ্টির মতো অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমার কত অস্বাভাবিক ছন্দ-কল্পনা–অনুভতি আর তার ব্যবচ্ছেদ। আহারে! 
সবকিছু নিমিষেই কেমন যেন ইথারে হারিয়ে গেছে। আজ সকালে অফিসের করিডোরটাতে নির্জনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে রাস্তায় অবিরত বর্ষাধারার বয়ে যাওয়া দেখছিলাম– প্রবল অসহায়ত্বে আমি অস্থির হচ্ছিলাম, বারবার...
জানি তুমি হয়ত কোনদিনই আমার এ কথাগুলো শুনতে পাবে না, জানতেও পাবে না। নাইবা শুনলে… না ই বা জানলে। এ জীবনে সবকিছু জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কথা? তোমার কথার সাথেই তো আমার কথার কোনো যোগ নেই। আর কথা কিংবা শব্দের গাঁথুনি গুছিয়ে কি ই বা লাভ বলো?   
অনেক বেশি বাঁচাল হয়েছি ইদানিং, তাইনা? বাঁচাল-বালক হয়েছি! হাহাহা… বাক্যটা খেয়াল করেছো স্বাতী? বালক বলে ফেলেছি নিজেকে! বালক বয়সটা যে পুরোনো করে শ্যাওলা জমিয়ে বসে আছি বহু-বরষা আগেই সেটা ইদানিং আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না। তবুও ভাবতে ভালো লাগে-- চালতা গাছের নিচে সে বালক আমাকে, চুল ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে নেমে পড়া পানির ফোঁটার বালক আমাকে; আপনাকে আমি খুঁজিয়া বেড়াই, বারেবারে...হাহাহা...   
বাঁচাল না হয়ে কী করা যায় বলোতো? এই বৃষ্টির দিনগুলো আমাকে অন্যরকম করে দেয়। জানোই তো। সবসময় এখন আর চাইলেও লেখার সময় করে উঠতে পারিনা! কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে হয় আমার অনুভূতির কথাগুলো তোমায় জানাই। আমার প্রতিটা অনুভূতি, অসংখ্য পাওয়া আর না পাওয়ার গল্পগুলো তোমায় শোনাই-- প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। আমার প্রতিটা অপ্রকাশিত চিঠির পরতে পরতে আমার নৈঃশব্দগুলোর শব্দময় হাহাকার শোনাই তোমায়।
আমার স্মৃতিশক্তির কি বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা তা তোমার অজানা নয়। তবু কীভাবে কীভাবে যেন অনেককাল আগে পড়া রবীঠাকুরের কয়েকটা বরষার লাইন আমার মাথার ভেতর ঢুকে গিয়েছিলো, হয়তো বরষা নিয়ে লেখা বলেই আছে। আজকের দিনে লাইনগুলো উৎসর্গ করলাম শুধুই তোমার জন্য –
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর... 
জানি, এমনটা কখনো, কোনোদিন হবে না। দেখা গেল তুমি আছো, বৃষ্টি নেই। কিংবা হাহাকার করা রাজ্যের বৃষ্টি চারিদিকে, কিন্তু তুমি ই আর নেই।
অবশ্য পথপানে স্বপ্ন দেখেই চলে গেলো জীবনের অসংখ্য বরষা… হয়ত বাকিটাও এমনি করে চলেই যাবে… 
আমার স্বপ্নগুলো কেনো যেনো কখনোই পূরণ হয়না! না হোক! এ ঝিম ধরা অপূর্ণ স্বপ্নগুলোতেও এক পৃথিবী ঘোরলাগা ভালোবাসা আছে। ঠিক বলেছি না সুনয়না ? হা হা হা...
চির প্রতীক্ষায়, আমি

বৃষ্টিতা!



আমাদের ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়িভর্তি মানুষজন আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হুলস্থুল এক কারবার। একসাথে ঠেলা-ঠেলি, ঠাসাঠাসি করে কাঠের বাক্সে থান্ডার ইন প্যারাডাইজ, শুক্রবারের আলিফ লায়লা অথবা ঈদের ইত্যাদি অনুষ্ঠান ই ছিল আমাদের জীবনের মহৎ বিনোদন।

ও নাহ...আমার  আরেকটা গোপন বিনোদন ছিল। বকা খাবার ভয়ে যেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম, আজীবন! এই গোপন বিনোদন টা ছিল-- ঝুম বৃষ্টির রাতগুলো! দেখা গেল মারামারি, কান্নাকাটি করতে করতে কোন এক রুমে ঘুমিয়ে পড়েছি। মামা, খালা কিংবা নানুর কাছে। (এধরণের পরিবারে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো রুমে ছোটদের প্রতিদিন ঘুমানোর নিয়ম থাকেনা। একেকদিন একেজনের কাছে চুপচাপ গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়া।) হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো চোখে মুখে পানির ঝাপটায়।

বৃষ্টি!

ঘটনা টের পাওয়া মাত্রই আমি তীব্র উত্তেজনা নিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসতাম। চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে ঘরময় মগ, বালতি, বাটি, হাঁড়ি, যে যা পারছে তাই নিয়ে এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আমাদের টিনশেডের বাড়িটাতে সাধারণের চেয়ে একটু জোরে বৃষ্টি নামলেই কেল্লা ফতে!  চাল বেয়ে পানি, রাস্তার পানি, চারদিকের দুনিয়ার সব পানি এসে জমে একাকার হতো আমাদের বাড়ির ভেতরে। তা ঠেকাতেই বাড়ি ভর্তি সবার এত আয়োজন।

এসময়গুলোতে সাধারণত ঘরে তুমুল ঝগড়া লেগে যেত। হাউকাউ, চিৎকার চ্যাঁচামেচি, ভয়ানক এক অবস্থা। কোনো এক অজানা কারণে আমি একপ্রকার চাপা উত্তেজনা অনুভব করতে থাকতাম। এই অদ্ভুত বিপদের সময়গুলোতে আমার আনন্দদায়ক এধরণের অনুভূতি আমাকে যে কতবার লজ্জিত করেছে, হিসেব নেই। কিন্তু তবু রাতের বৃষ্টির দিনগুলোতে আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনের কোণে লুকিয়ে ঘুমুতাম। ভাবতাম-- কখন পানি পড়া শুরু হবে? পড়তে পড়তে একটা সময় আর বাটি, বালতিতেও কাজ হবে না। ঘর ভেসে যাবে গোড়ালি পানিতে। বাড়তে থাকবে আরও, আরও...

বাড়ির সবাই একটা সময় পর হতাশা আর ক্লান্তি নিয়ে নিয়তির হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়বে। আর আমি বসে পড়বো কাগজের নৌকা বানানোর কাজে। আমার ঘরের ভেতর একের পর এক নৌকা ভেসে বেড়াবে। হরেক রকম নৌকা-- খবরের কাগুজে নৌকা। বোনের ডায়েরী পাতা নৌকা। টালি খাতা কিংবা পোকা খাওয়া মামার উপন্যাস নৌকা।

এখনও মাঝে মাঝে গভীর রাতগুলোতে তুমুল বৃষ্টিরা নেমে আসে আমার  কংক্রিট বাড়ির ছাতে। সে বৃষ্টির ডাকে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি অস্থির হয়ে জানালার কাছে যাই-- বন্ধ করতে হবে। কোনো এক অজানা ঘোর আমায় আটকে রাখে, বন্ধ করতে পারি না। বাইরে বৃষ্টির শব্দেরা বেড়ে চলে। নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে চরাচর। নোংরা এ শহরের ক্লান্তি, বেদনা, আর হাহাকারগুলো যেন মুছে দিচ্ছে পরম যত্নে।

কী তুমুল, একরোখা বৃষ্টি।

বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিতে থাকে আমার মুখ, পাশের টেবল, টেবলের ওপর রাখা পাওলো কোয়েলহোকে। আমি বিড়বিড় করি-- ভিজুক। আমার ভেতরের কোথায় যেন একটা ক্ষীণ আশা জন্মাতে থাকে-- এই থাই-জানালার ফাঁক গলে আসা বৃষ্টির ছাঁটগুলো আজ ঘরটাকে ভাসিয়ে দেবে। আমি আবার সেই শৈশবের চাপা উত্তেজনা অনুভব করতে থাকি। অপেক্ষায় থাকি, এ ঘরটা একটু পর ঠিক ঠিক ভেসে যাবে, আমি নৌকা বানাতে বসে পড়বো। হরেক রকম নৌকা-- 
খবরের কাগুজে নৌকা। বোনের ডায়েরী পাতা নৌকা। টালি খাতা কিংবা পোকা খাওয়া মামার উপন্যাস নৌকা।

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

পরাহত রাতের কথা!



এক সময় আমার খুব প্রিয় একটা লাইন ছিল--
"আমি তোমাকেই বলে দিবো, সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়"।

লোকটা কিসের ভুল দরজায়, কার ভুলে কড়া নেড়ে উদাস হয়েছিলো আমি নিশ্চিত নই। 
তবু লাইনটা যতবার শুনেছি এক গভীর বিষন্নতায় ডুবে গেছি। 

আমার পুরোনো তীব্র মাথা ব্যাথাটা আজ আবার চেপে ধরেছে। এলোমেলো শব্দগুলো ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে।এদিক-ওদিক। এখানে-ওখানে। এক এক করে ধরে এনে সেলাই করতে হচ্ছে জোর করে। ঘর অন্ধকার করে ল্যাপটপটে খুটখুট। চোখে চাপ পড়ছে। খুব! মাথা ব্যথাটা আরও বাড়ছে। বাড়ুক। বাড়তে বাড়তে একটা সময় আচ্ছন্নের মতো হয়ে যাবো, সেই সময়টায় অনেকটা নিজেকে নেশাগ্রস্থের মতো মনে হতে থাকে। আর কিছুই অনুভব হয় না। 

কি যেন বলছিলাম? ও হ্যাঁ...

ভুল দরজা, কড়া নাড়া.....।

ভুল করাটা মানব জাতির এক অতি প্রিয় কাজ। বাবা আদম(আ.) থেকে শুরু আমাদের এই সিলসিলা।

এই একজীবনে আমি বহুবার, বহুভাবে ভুল করেছি। বারবার একের পর এক কড়া নেড়েছি ভুল দরজাগুলোতে।

মানুষ ভুল থেকে শেখে। আমি মাতবর শ্রেণীর ছেলে। আমিও শিখেছি। আমি শিখেছি-- এই পৃথিবীতে আসলে মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা জমা করে রাখতে নেই। সব ভালোবাসা, সব অনুভূতি, সব মমতা কেবল এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার জন্য ই বরাদ্ধ রাখা উচিত। এতে যেমন ভালোবাসার অপচয় থেকে মুক্তি মেলে। তেমনি মুক্তি মেলে হৃদয় ভাঙ্গা আর প্রতারিত হবার যন্ত্রণা থেকে।

আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে আমাদের স্রষ্টা কোনোদিন হাসবেন না।
মানুষ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে হাসে। খুব! এটাও মানুষের অতি প্রিয় কাজগুলোর একটি। কেউ উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলো-- আমরা হেঁসে উঠি। কারণ আমি তো দাঁড়িয়ে আছি, নিরাপদ, সুস্থ আছি।

নিজের লেখার কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কী যেন লিখতে বসেছিলাম, ভুলে গেছি। সুতা কেটে গেছে বারবার। বানান আর গ্রামারের ভুলও বোধহয় অনেক হয়েছে আজ। গ্রামার পুলিশেরা বগল বাজাবে। বাজাক!

কি এসে যায়?

আমি সবসময় আমার সব কথা, লেখা চিন্তা এডিট করতে থাকি। ভাবি, এরপর ভাবনাটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করি কাগজের মতো, এরপর আবার সাজাতে থাকি। সাজাতে থাকি অনেকটা পাজল সলভের মতো। সব লেখা কারেকশান করতে থাকি। অনবরত। 

শুধু এই জীবনটা কারেকশান করার কোনো যন্ত্র আমার হাতে নেই। এই যন্ত্রটাও আমার স্রষ্টার হাতে। এটাই ভরসা! 

আমি ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছি একটা সস্তা পেন্সিলের মতো। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছি, দু'দিক থেকেই শারপনার দিয়ে আমাকে কেটে কেটে এডিট করে ফেলা হচ্ছে। আমার আমিত্ব শেষ করে ফেলছি দিন দিন। 

সেদিন একবার ভেবেছিলাম আঁতলামী ছেড়ে দেবো। সুযোগ চাই মানুষ হব স্লোগান তুলে ভালো মানুষ হয়ে যাব। সবাই ভাবলো মাথাটা গেছে এবার। 

ভাবলাম খুব সাদা কথা বলব, সাদা চিন্তা করব, সাদা ভাষায় লিখব। সাদায় খাবো, সাদায় পড়বো। কিন্তু দেখলাম, ওটা ঠিক আমি না। অন্য কে যেন। অভিনেতার আমি।

আমি একবার ভেবেছিলাম, একটা নদী হব........ 
বয়ে চলব........এক একটা স্রোত হয়ে কেবল একবারই আসবো। বারবার না। এক ভুল একবারই করবো, বারবার না।
আমি হতে পারিনি।
আমি হতে চেয়েছিলাম একটা রঙিন ঘুড়ি, সফেদ পাখি, অতি প্রিয় ভালোবাসার শেষ চিঠি অথবা সাদা ভাতের মতো কাশফুল। 

কিন্তু এক আমি হয়েছি এক ছেঁড়া ডানার একটা পাখি। ঘর অন্ধকার করে-- কাপুরুষের মতো কাতরাতে জানা পরাজিত পাখি।

দিনকাল একেবারেই আমার ভালো যাচ্ছে না। 

"মন খারাপ?'' 

আমি বলি-- নাহ! শরীর খারাপ। পরক্ষ্ণেই অপরাধবোধ ঘিরে ধরে আমায়। মিথ্যে বলে ফেললাম না তো? কপালে হাত দিতেই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাই। বাহ! এখনও জ্বর আছে। যাক মিথ্যে হয়নি কথাটা। নিজেকে সহ্য করতে করতে এই জ্বরটাকেও যে কখন সহ্য করা শিখে গেছি মনেও নেই।

''আমার মন খারাপ'' বাক্যটায় কেমন যেন একটা পরাজয়ের গন্ধ আছে। অনেকটা জ্বরের গন্ধের মতো। আমি পরাজয় পছন্দ করি না। যদিও তার সাথে আমার সম্পর্ক অতি প্রাচীন, অতি গভীর... 

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

দ্বিনী বিল গেটস





বিবাহের কথা উঠলেই আচমকা আমাদের ভাইয়েরা সব সাহাবী হয়ে ওঠেন। হৈ হৈ রব ওঠে-- এক সাহাবা স্রেফ কুরআন দিয়ে মোহর দিসেন। আজকালকার বেত্তমিজ দুনিয়া, ১০-১৫ লাখের নিচে কথাই নাই। বিবাহ কঠিন, অতি কঠিন! সমাবেশের বাকিরা মাথা নাড়েন-- ঠিক বলেছেন! ঠিক বলেছেন!
ইদানিং এসব শুনলেই আমি নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জাজমেন্টাল হয়ে উঠি

শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭

এ কেমন বিচার?



'বেকসুর খালাস' শব্দটার ওপর আমার এমনিতেই এলার্জি আছে। এলার্জিটা আরও পাকাপোক্ত হয়েছিল ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন যখন বাড়ির গৃহকর্মীকে নির্যাতন করেও বেক্সুর খালাস পেয়ে গিয়েছিলেন, তখন। পিঠ, হাত, পা সর্বত্র কাটা-ছেঁড়া, খুনতির ছ্যাকার দাগ থাকা মেয়েটা নাকি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিল। শাহাদাতের বিরুদ্ধে আনা সকল প্রকার অভিযোগও নাকি মিথ্যা ছিল।

এর কিছুদিন আগেই ক্রিকেটার রুবেল-হ্যাপির ঘটনা জাতি দেখেছিল। আর অল্প কিছুদিন পরেই সাব্বির রহমান, আল আমিন নামক আরও দুই ক্রিকেটার বিপিএল চলাকালীন সময়ে হোটেলে নারী কেলেংকারিতে ধরা পড়লো। সবার বিচার হলো। বিচার দেখে আমি মাননীয় স্পিকার হয়ে নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম-- এ কেমন বিচার মনু?? এ কেমন বিসার? আজ এ তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ক্রিকেটার শহীদ। স্ত্রী নির্যাতন-হত্যা চেষ্টার অভিযোগ। এই মালটাও যে অল্প কিছু দিন পরই বেকুসর খালাস পেয়ে যাবে কিংবা প্রহসনের বিচারে নির্যাতিত মেয়েটার জীবন বিষময় হয়ে যাবে তা হলফ করে বলাই যায়।

আজ আমরার অতি প্রিয় লিওনেল মেসির বিয়ে। কন্যা অতি ভদ্র, রুপবতী-গুণবতী। ইতিমধ্যেই মেসির সাথে তার দু সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখে ফেলেছে। দু সন্তান অতি গর্বের সহিত বাবা-মায়ের বিয়েতে আজ হাসি হাসি মুখে উপস্থিত হবে। চমৎকার ব্যাপার-স্যাপার! আমাদের নিউজ চ্যানেলগুলো বেশ ঘটা করেই এসব প্রচার করছে, যেন এটা এক অতি স্বাভাবিক ঘটনা। (আমাদের গা সয়ে যাচ্ছে দিনকে দিনে)

ভয়ের দিকটা হচ্ছে-- খেলোয়ার, নায়ক, গায়ক এরা আজকের অধিকাংশ তরুন প্রজন্মের আইডল(এ শব্দেও এলার্জি আছে)। একটা কিশোর ছেলে মেসির পায়ের ক্যারিগুরি দেখে দেখে বড় হয়। তাকে আইডল মানে, তার মতো হেয়ার স্টাইল তার মতো খেলা এমনকি তার মতো জীবনটাও চায় নিজের অজান্তেই। রাসুল(সা.) আমাদের বলেছিলেন আমরা কাফিরদের অনুসরণ করবো যেভাবে টিকটিকির লেজ গর্তের দিকে তাকে অনুসরণ করে। আমরা সত্যিই আজ সে পথটাতেই হাঁটছি। হাঁটছি বলাটা ভুল, দৌঁড়াচ্ছি।

মেসি বিয়ে না করেও সন্তান নিয়ে ঘুরতে পারে। কিন্তু তাকে দেখে এসব ঘটনাকে ডাল-ভাত ভাবা ছেলেটা যখন একটা মেয়ের পেটে বাচ্চা জন্ম দিয়ে দেয়; তখন সেই বাচ্চাটার স্থান হয় নর্দমা, কিংবা টয়লেটের কমোডে।

আমাদের এই জাতিটা যুদ্ধের জন্য পরাজিত হচ্ছে না। পরাজিত হচ্ছে দিন দিন নৈতিকতা আর আদর্শ থেকে দূরে চলে যাবার কারণে। মানসিক পরাজয় মেনে নিয়ে, এমন কিছু মানুষের অনুসরণ এই জেনারেশন করে চলেছে যাদের কোনোপ্রকার উপকারি ভূমিকা এই পৃথিবীর বুকে নেই।

এলাকার মেথর গু সাফ না করলে যে ক্ষতিটা হয়, মেসি বা শাহাদাত হোসেন ফুটবল-ক্রিকেট না খেললে সেই ছাতার ক্ষতিটাও পৃথিবীর হয় না। এরাই এই জগতের নায়ক? সিরিয়াসিলি ?

দুপুরের ঘ্রাণ


প্রিয় স্বাতী,
কখনও কি খেয়াল করে দেখেছো? মধ্য দুপুরের রোদে যে একটা গন্ধ আছে?কেমন নেশাধরা উদাসি একটা গন্ধ। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের নৈঃশব্দ্যের গন্ধটা মাথার ভেতরটা কেন যেনো এলোমেলো করে দিতে চায় বারবার। বুকের ভেতরটায় ছুরি চালিয়ে ফালি ফালি করে দিতে চায় হৃদপিন্ডটাকে।
নির্জন আবাসিক এলাকাটার গলিতে হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা রিকশার ছন্দময় টুংটাং। গলির মোড়ের মোটর গাড়ির হুসহাস। আর ওপাশে গজিয়ে ওঠা বস্তিটা থেকে কোনো এক শিশুর শৈশব ঠেকিয়ে দিতে চাওয়া প্রৌঢ়ের হৈ হৈ চিৎকার। অথবা পেছনের মেহগনি গাছটায় নতুন বাসা বাঁধা কাকটার ছন্দময় বিরতিতে ডেকে চলা-- ক কা। এতটুকু ছাড়া সময়টা বেশ নির্জন, শুনশান, বিষন্ন!
অনেক কিছু লেখার ছিলো, বলার ছিলো। ইচ্ছে করছে না। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা। গত রাত থেকে এ যন্ত্রণা আমাকে প্রায় অজ্ঞান করে ফেলতে চাইছে। আমি টানটান চোখে সাইদুরের দোকানের চা গিলি। কাজ হয় না। ভালোও লাগে না ইদানিং শরীরটার দিকে মনোযোগ দিতে। বেঁচে থাকলে মনোযোগ দিয়ে যত্ম নেবার আরও ডজন খানেক বিষয় আছে। আমার এই 'আট কুঠুরি নয় দরজাটার' দিকে ঠিকঠাক পাহারা বসানোর সময় বা সুযোগ দুটোর কোনোটাই এমূহুর্তে নেই।
নিজেকে বুঝ দিলাম, ''ভালো লাগছে না কিচ্ছু'' প্রজাতীর কথাগুলো স্রেফ আঁতলামি। বই পড়তে ভালো লাগে না, পাতা উল্টোই। আকাশ দেখতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে, দুপুরের আকাশ, ঝলমলে রোদের আকাশ। তাও হয় না। বাসায় ফিরে বিছানায় শরীর এলিয়ে আধমরার মতো সিলিং দেখি। এই অতিপরিচিত সিলিংটার পলেস্তারা গতরাতে খসে পড়েছে, পরিস্কার করা হয়নি। থাকুক পড়ে, কি এসে যায়? এরা আমার অতি পরিচিত পলেস্তারা, থাকুক না।
অনেক কিছু লেখার ছিলো, বলার ছিলো। লিখতে বিরক্ত লাগছে। তোমার কেনা নীল রঙয়ের ভারী পর্দাগুলো টেনে দিয়ে এখন আমার পৃথিবীটা অন্ধকার করে দপদপ করতে থাকা শিরা-উপশিরাদের অনুভব করবো। আমার মৃত্যুর প্রথম রাতটাতে হয়তো, এর চাইতেও অনেক ভয়াবহ এক অন্ধকার ঘরে থাকতে হবে। আচ্ছা, তখন এই বুকটাতে অনেক আতঙ্ক থাকবে, তাইনা?
প্রশান্ত হতে হবে, যে করেই হোক। চেষ্টার সবটুকু ঢেলে দিতে পারিনি এখনও হয়তো, শিখতে হবে, পারতে হবে। না পারলে, পারার অভিনয় করে যেতে হবে।
আমার চিঠিগুলোতে কখনও বিদায় সম্ভাসন থাকে না, তুমি জানো। ক্লান্তিকর বিদায় ভালোও লাগে না। বিদায় গুলো হোক ছোট গল্পের মতো--
"শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।"
ইতি,
আমি

সোমবার, ২৬ জুন, ২০১৭

চুরি যাওয়া চাঁদ


মাগরিবের নামাজ শেষে টংয়ে বসে পোলাপান কে গভীর জীবনবোধ সম্পর্কিত লেকচার দিচ্ছি। অপু ভাইয়ের উচ্ছ্বসিত কন্ঠের ফোন-- আরমান, চাঁদ দেখসো?
চায়ের কাপে চুমুকু দিতে দিতে-- নাহ, উঠসে নাকি?
আরে মিয়া কি বলো? এত্ত বড় আর এত্ত ক্লিয়ার চাঁদ আমি জীবনে দেখি নাই। পশ্চিম আকাশে দেখো।
পশ্চিম দিক কোনটা? এইটাই তো চিনি না। (এদিকে ওদিক খুঁজতে খুঁজতে)...
ইকবাল চাচা হাত দিয়ে দিক নির্দেশ করতেই সেদিক ঘুরে উপরে তাকালাম, মনে মনে আশা-- "এত্ত বড় আর এত্ত ক্লিয়ার চাঁদটা" দেখবো। চাঁদ খুঁজে পাওয়া গেল না। সামনের ৫ তলা ছাল ওঠা বিল্ডিঙটার ৪ তলায় এক আন্টিকে দেখা গেলো। আশপাশের মানুষজন কি ভেবে বসছে আল্লাহই জানে।
গলার ভলিউম বাড়ালাম তড়িৎ-- আকাশটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলে দেখি, চাঁদের খবর নেবো।
আমার সারাটাজীবনের কোনো দিনই ঈদের চাঁদ দেখতে পাইনি। আশেপাশের সবাই চাঁদ দেখতে বেরোয়। আনন্দে উদ্দ্বেলিত হয়ে চাঁদ খুঁজে পেয়ে একে-ওকে জানায়। কিন্তু আমি কোনোদিনই কেন যেন চাঁদটা খুঁজে পাই না।
এটাই হয়তো জাদুর শহর ঢাকাতে বসবাস করার শাস্তি। আমাদের আকাশ টাও চুরি গেছে কখন, আমরা নিজেরাও সেটা জানি না।
যাই হোক, আকাশ ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ ঈদ। সকল বন্ধু- শত্রু, ভাই-ছোটভাই, আংকেল-আন্টি, দাদা-দাদী, নানা-নানীর প্রতি অন্তর খোলা ঈদ শুভেচ্ছা।
জগতের সকল ঈদি আমার হোক!

রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭

উদাসীন বৃষ্টিতা



সারাটাদিন গুমোট মেঘলা আকাশ। ঘরের ফ্যানটায় কোনো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার গতি ধীর। এতটাই ধীরে যে এর বাতাস শরীর পর্যন্ত এসে পৌঁছে না। স্থিতি আর গতির মাঝামাঝি একটা ব্যাপার। তবু নিজেকে প্রবঞ্চনা দেবার জন্য চালু ফ্যানের দিকে মনো্যোগ সহকারে তাকিয়ে গা জুড়ানোর চেষ্টা করছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। অতি বৃদ্ধ এই ফ্যানটার দিকে কখনও সময় করে তাকানো হয়নি। আজকের গুমোট হাওয়া আর সেই সাথে ফ্যানের যৌথ স্ট্রাইক বাধ্য করলো তাকে দেখতে।
রোজাদারের দুআ নাকি কবুল হয়। বৃষ্টির দুআ করতে থাকলাম। দুআ কবুল হলো। ঝির-ঝির বৃষ্টিতে গুমোট আবহাওয়া নিমিষেই গায়েব। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। আর ঠিক এই মূহুর্তে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র বৃষ্টির ছাঁট আমার মুখ, ল্যাপটপ সব ভিজিয়ে দিচ্ছে। ভিজুক! তবু বসে থাকবো। ভালো লাগছে খুব!
আমার টেবলটা জানালার পাশে। বৃষ্টি হলেই সেই জানালা দিয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ ভেসে আসে। অপু ভাইয়ের ভাষায়-- "এটা জিওসমিনের গন্ধ আরমান। বৃষ্টির সময় যখন এর উপর পানি পড়ে তখন বিক্রিয়া ঘটে; এর ফলে বাতাসে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। এটা মাটির গন্ধ না। মূর্খের মতো এটাকে মাটির ঘ্রাণ বলবা না। তোমরা কিছুই জানো না, কি একটা অবস্থা।"
আমি ঘাড় কাত করি-- "ঠিক, পানির মতো অতি তুচ্ছ ঘটনা। এটাও জানি না। ছিহ!"
জ্ঞানী লোকের জিওসমিন ই হোক কিংবা মুর্খ লোকের মাটির সোঁদা গন্ধই হোক। এই ঘ্রাণটা সবসময় আমাকে একটা আনন্দময় বিষন্নতায় ভোগায়। এই একজীবনে কত স্মৃতি, কত আনন্দ-বেদনার গল্প আমার এই বৃষ্টিকে ঘিরে...বলতে চাই একটা সময়, বলবো হয়তো কোনো একদিন...বাদামের ঠোঙ্গাকে সাথী করে...
একটা বই পড়ছিলাম। ভয়াবহ ট্রাজেডি। নায়কের কিডনির অবস্থা যা তা, এর মধ্যে চাকরি যাই যাই অবস্থা। মন খারাপের মাত্রা দ্বিগুন হলো। বই বন্ধ করে বাইরের বৃষ্টিতে হাত বাড়ালাম। রমাদানের আজ হয়তো শেষ দিন। তারাবীর নামাজ টা আর পড়া হবে না। মাসজিদ গুলো খাঁ খাঁ করবে তৃষ্ণার্ত মানুষের মতো। ইফতারের দাওয়াতে যাওয়া হচ্ছে না। ঈদের অপেক্ষায় থাকার অস্থির আনন্দটা আর বোধ হচ্ছে না। ক্ষমা পেয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা আর অনুভূতিটা হয়ে যাবে ভোঁতা। ঈদ আসছে এই আনন্দের চাইতে ঈদ এসে একদিনে ফুড়ুৎ করে চলে, এই ভাবনাটা আমাকে আরও বেশি অস্থির করে তুলছে।
ফেইসবুক আমাকে বদলে দিয়েছে। মন খারাপের দিনগুলোর কথা একটা সময় আমার কালো চামড়ার ডায়েরিটাকে বলা হতো। এখন বলা হয় ফেসবুক আর ব্যক্তিগত ব্লগগুলোকে। নিজের বিষন্নতা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেবার মাঝে একটা পাশবিক আনন্দ লাভ আছে। আরামদায়ক পাশবিকতা।

জোনাক লন্ঠন


গ্রামের বাড়ি যাবার জন্য ছোটবেলায় আমার একটা লুকোনো লোভ ছিলো। জোনাক-লন্ঠন তৈরির লোভ। রাত হলেই সেজ চাচাকে সাথে নিয়ে স্কুল মাঠের পেছনের বাঁশ ঝাড়টা তে চলে যেতাম।
ইলেকট্রিসিটির কেরামতিহীন অজ পাড়া গাঁ-টার ঘুটঘুটে আঁধার উপেক্ষা করে শত শত সবুজ জোনাকি জ্বলছে বাঁশঝাড়ের এখানে-ওখানে-সবখানে। আমি তীব্র উত্তেজনায় হরলিক্সের কৌটা হাতে করে ছুটছি।

খপ করে ২-৩ টা করে জোনাকি ধরে ফেলছি, আর পাচার করে দিচ্ছি হরলিক্সের বয়ামে। সেজ চাচা তাড়াহুড়ো কর বয়ামের মুখ লাগিয়ে ফেলছেন। ১৫-২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আমরা মোটামুটি মানের একটা সবুজ জোনাক-লন্ঠন তৈরি করে ফেলতাম। ফেরার সময় চিন্তিত মুখে সেজ চাচার বাণী চিরন্তনী-- "জুনি হোক ধইললে হেডে বিষ করে, কইলে ত হুনবা না। কাইলগা বেয়াইন্না বুঝবা।"

মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭

খুঁজিয়া বেড়াই


সেদিন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম— আমি আমার এই জীবনে তিনটা দশক দেখে ফেলেছি— ৮০, ৯০ এবং ২০০০। প্রায় তিনটা ভিন্ন ভিন্ন দশক, ভিন্ন ভিন্ন সময়। যতই মনে মনে নিজেকে ৯০ দশকের সেই অস্থির কিশোরটা হিসেবে কল্পনা করি না কেন আর মাত্র অল্প ক’টা দিন পরেই একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ হিসেবে সবাই আমাকে কৃত্রিম/অকৃত্রিম সম্মান প্রদর্শন করবে। নামের শেষে যুক্ত হবে ভদ্দরনকি—‘সাহেব’ খেতাব।
জীবনের এতগুলো বছর কীভাবে চলে গেল সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে বাকিটা সময়ও যে এভাবেই জাস্ট ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত। আমি নিজেকে নাম দিয়েছিলাম "মৈনিক কিশোর"। মনে মনে কিশোর যে সে ই— মৈনিক কিশোর! আমার ভেতরের দুরন্ত কিশোরটাকে কী প্রাণপণ প্রচেষ্টায় এখনও প্রতিদিন সকালে অফিসের চেয়ারটাতে বেঁধে রাখতে হয় সে খবর আমি ছাড়া পৃথিবীর ৭ বিলিয়ন মানুষের কারও কাছেই নেই। কী ভয়ংকর সাধ জাগে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো করে এখনও হঠাৎই সবকিছু ছেঁড়েছুড়ে অজানা এক লঞ্চের ডেকে চড়ে বসতে। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি কিসসু জানি না! স্রেফ যাওয়ার জন্যই যাওয়া।
বড় হচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি। মেয়েটা ঘুম ভেঙে কেঁদে উঠে তার অস্তিত্বের জানান দেয়। আর আমার দুশ্চিন্তার কপালে প্রতিদিন যুক্ত হয় নতুন আরেকটা চিন্তার ভাঁজ। নিজেকে ক্রমশঃ একটা একটা করে চাদরে মুড়িয়ে আড়াল করছি প্রাণপন। সবার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টায় নিজেকেই ভরে ফেলছি অন্য একটা কিছুতে। হয়ে যাচ্ছি অন্য মানুষ। আমার আমিকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও। একেকটা মুখোশ, একেকটা চাদরে আমি ঢাকা, আবৃত পুরোদস্তর!
মগজের পরতে পরতে নিত্যনতুন স্মৃতি; একটার ওপর একটা, তার ওপর আরেকটা। পরত জমেই যাচ্ছে এক এক করে। অথচ আমি ঠিক আগের মতই হাহাকার করি বিকেল বেলা হইহই করে ক্রিকেট খেলতে যাব বলে। লোডশেডিংয়ের রাতে পাটি পেতে ছাদের রেলিঙয়ে পা তুলে আকাশ দেখবো বলে। নতুনের প্রতি আমার ভয় চিরকালীন। ভালোবাসি পুরাতন। সবকিছু। নতুন স্মৃতিগুলোর প্রতি তাই একবুক ঘেন্না নিয়ে বেঁচে আছি। ভীষণ ঘেন্না! ভয়ানক ঘেন্না! আমার প্রতিটা নতুন স্মৃতির পরতে পরতে জমে আছে অনুভূতির দৈন্যতা, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ আর মানুষের মিথ্যে অভিনয়ের যন্ত্রণা।
একটা সময় ছিল, স্কুল থেকে ফেরা মাত্রই কোনমতে শার্টটা খুলে জুতো জোড়া শূণ্যে ছুঁড়ে ফেলে; কিশোর-রবিন-মুসায় বুঁদ হয়ে যাওয়া। তাদের সাথে বসে এক একটা রহস্য, এক একটা অ্যাডভেঞ্চারের মায়াজালে হারিয়ে যেতাম নিমিষেই। এক বৈঠকে একটা আস্ত বই গিলে ফেলে হাত কঁচলাতে কঁচলাতে মা’র কাছে যাওয়া—“আম্মু, এই মাসে আর একটা বই কিনবো কেবল। ব্যাস! আর নাহ! এই শেষ। সামনে পরীক্ষার মাস তো, আর পড়তে পারবো না।”
আর এখন মনোসংযোগ ব্যাপারটা খুঁজতে টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ উভয়েরই প্রয়োজনই পড়ে আমার। প্রমাণ? নতুন কেনা পাওয়লো কোয়েলহোর বইটাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পঞ্চম পৃষ্ঠায় রাখা আমার বুকমার্কটা। চোখের সামনে বই খুলে নির্মম পৃথিবীটার প্রতিটা ভাঁজ থেকে নিজেকে মুক্ত করার ফন্দি আঁটতে থাকি প্রতিটাদিন, তীব্র ঘৃণা, তুলনামূলক পাওয়া-না পাওয়ার চিন্তায় ডুবে যেতে থাকি ক্রমশঃ ঝাপসা চোখে এখন স্বীকার করতেও বাঁধে না— আমার অন্তরজুড়ে বিষ, কালো কুঁচকুঁচে বিষ।
বড় হতে হতে জীবনটাই কবে শেষ হয়ে যাবে, জানিনা। আমার মনে হতে থাকে সেই বাল্যজীবনকে ঘিরে থাকি। বেঁধে রাখি। শুভ্র, লোভ- ঘৃণাহীনা কিশোর বয়সটাতেই আটকে থাকি। আমি আমার এই আজন্ম সাধের যৌবনকে ঘৃণা করি। এই যৌবন আমায় অমানুষ করে তুলেছে। নিজেকে দেখতে চাই সেই অতি সরল হাফ প্যান্ট আর ঢলঢলা টি-শার্ট পড়া ছেলেটার জায়গায়। ঝিম ধরা দুপুরে কাঁঠাল গাছের লাঠি হাতে যে নিজেকে টিপু সুলতান হিসেবে ঘোষণা দিত, বিকেল বেলার ক্রিকেট আর এক টাকার পাইপ আইস্ক্রিমেই ছিল যার এক পৃথিবী সুখ; পুরোনো বাল্বকে পরম মমতায় যে জমিয়ে রাখতো লাল রঙা হাওয়াই মিঠাই খাবে বলে।
যে জীবন সলজ্জ সরলতার, যে জীবন অকৃত্রিম আবেগের; সে জীবনে দেখতে চাই নিজেকে। প্রতিটাদিন, প্রতিটা মূহুর্তে...........

শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭

আজ আমার বদলে যাওয়াতেই আনন্দ



একটা সময় মানুষের বদলে যাওয়া দেখে খুব অবাক হতাম। কী নৃশংসভাবে সব ছিঁড়ে-ফুঁড়ে সম্পর্কগুলোকে গলা টিপে হত্যা করার ক্ষমতা রাখে মানুষ, অথবা সব আর্দ্র অনুভূতি আর স্মৃতির গতিময় রঙ্গিন সময়গুলোকে অগ্রাহ্য করে ফেলতে পারে এক নিমিষে! কতটা অবলীলায়, কতটা নির্মমতায়...

মানুষের কাছ থেকে চোখ সরাই। আমি বরং প্রকৃতি দেখি। হতবাক হয়ে আবিষ্কার করি— মন্থর থাকা ব্যাপারটাই সৃষ্টির মাঝে নেই। গাছের কচি পাতাগুলো তার রঙ বদলায়, রঙ বদলায় আকাশ, নদী তার গতিপথ, নক্ষত্র আর প্রতিটা রাত তার মায়াবী ক্ষণগুলোকে বদলে ফেলে ঠিক পরের ব্র্যান্ড নিউ দিনটাতেই।

সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচির বদল হয়, আর বদল হয় অনুভবের হৃদয় অথবা দেখার চোখ। পরিবর্তনকে যে যত সহজে গ্রহণ করে নিতে পারে সে তত সুখী। ভাঙা-গড়ার জীবনটার পরিবর্তনগুলো খুব সহজে গ্রহণ করে নেয়াতেই মানব জীবনের প্রশান্তি, বেঁচে থাকার আনন্দ।

প্রতিটা সৃষ্টি বদলায়, বদলায় না কেবল সপ্ত আসমানেরও অনেক উপরে বসে থাকা আমাদের স্রষ্টা। তাই ভরসা রাখতে হবে কেবল তাঁরই উপর। তিনি কেবল ভালোর জন্যই জীবনে পরিবর্তন আনেন, পরিবর্তন ঘটান।

আজ আমার বদলে যাওয়াতেই আনন্দ...বদলে যাওয়াতেই আনন্দ

সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭

Nothing Is impossible



'Nothing Is impossible' টাইপ বিজ্ঞাপনীয় ভাষণগুলো আসলে একটি মহামারী প্রজাতির মিথ্যা কথা ৷ মানুষের নিজ সীমাবদ্ধতাই তাকে রুখে দেয় জীবনের প্রতিটি পদে পদে।
অসম্ভব সবকিছু করে ফেলা তো দূর কি বাত, মানুষ চাইলে নিজ কনুইটাকেও জিভ দিয়ে স্পর্শ করে দেখাতে পারে না। ছ'ফুট উচ্চতার মানুষটা, প্রাণপন চেষ্টা করেও নিজগুণে দশফুট উচ্চতার ছাতটা ছুঁয়ে দেখাতে পারে না। শরীরের চামড়ায় গজিয়ে ওঠা ছোট্ট ফোঁড়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কিছুতেই। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে নিমিষেই, কিলবিল করে। মাথার চুল পড়ে টাক হয়। দোকানে,পত্রিকায়, রাস্তায় বিজ্ঞাপন ঝোলে- “টাক আজই ঢেকে যাক।’’
নিজগুণে আসলে মানুষ কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবু মিথ্যা-মিথ্যা খেলার ফাঁদে ফেলে বোকা বোকা স্বপ্নখোর কিছু মানুষকে বেনিয়ারা শেখায় মিথ্যা স্বপ্ন দেখার কুট-কৌশল৷
মানুষ শেখেও, খুব করে।
এরপর? মানুষ মিথ্যা স্বপ্ন খেয়ে, স্বপ্ন পরেই কাটিয়ে দিতে চায় তার সত্য জীবনটা। এই স্বপ্ন-বন্দীরা একটা সময় চাকচিক্যময় মিথ্যের সাথে তিতকুটে সত্য জীবনটাকে মেলাতেও চায়, তেল-জলের মতো মেলে না কিছুতেই! এরা ক্রমশঃ হয়ে ওঠেন হতাশ আর ব্যধিগ্রস্থ!
মিথ্যা বোধ, মিথ্যা আশা, শত্রু-মিত্রের মিথ্যা পরিচয়, মিথ্যা প্রেম-প্রেম খেলা৷ অন্যের প্রাপ্তিতে নিজেকে গর্বিত মনে করার মিথ্যা প্রবোধ, অথবা মিথ্যা খেতাবের মাঝে ডুবে থেকে মানুষ তার দাম্ভিকতার সার্কাস দেখায়। নিজ পিঠ চুলকাতে না পারা ছেলেটাও আঙুল তোলে সৃষ্টিকর্তার দিকে। লড়তে চায়, স্পর্ধা দেখায় প্রতিদ্বন্দী হবার৷
টেলিস্কোপে বসে ধ্রুবতারা দেখা, আর সেখানে চলে যাওয়াটা যেমন এক নয়; তেমনি অসীমের পানে তাকানো, আর অসীম ছুঁতে পারাটাও এক নয়৷
কি দারুন ঔদ্ধত্য! সাড়ে সাত শত কোটি মানুষের পৃথিবীটাতে বাস করে, তাদের একজন হয়েও ভুলে থাকে—"আমি আর সকলের মতোই মানুষ। স্রেফ দু-হাত পাওয়ালা এক অতি সাধারণ মানুষ! সেই মানুষ যার শুরু এক ফোঁটা বীর্য থেকে। যে আজকে হাঁড়গোড়, আর আগামীর পঁচা গলা মাংসপিন্ড- যাকে কৃমি,কীট ছেড়ে গেলে কাদা হয়ে কাদাতেই মিলিয়ে যাবে, বিলীন হয় যাবে, নিঃশেষ হয়ে যাবে একবারেই!

মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

ক্ষণদুঃখী


                                          

মানুষের অনেকগুলো চমৎকার ক্ষমতার মাঝে একটি হলো-- সে পরম অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রাণী।
আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি এমন সময় এসেছে যে-- যা ছাড়া জীবনটাকে কল্পনাও করতে পারছি না, তা হারিয়ে যাবার পর একটা বড় ধাক্কার মতো খেয়েছি।

শুক্রবার, ৫ মে, ২০১৭

মধ্যযুগীয় শিক্ষা


দৃশ্য-১:
জুমু'আ শেষে আড্ডারত কয়েকটি যুবক।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। কথায় কথায় মুখ দিয়ে আংরেজি বুলি আওড়াচ্ছে একজন-- It was fu**ing.....বলতে বলতেই হাতে থাকা সবুজ মাউন্টেন ডিউয়ের অবশিষ্ট তরলটুকু গলায় পাচার করে দিয়ে বোতলটা ছুঁড়ে ফেললো রাস্তায়। টকাৎ....
দৃশ্য-২:
জীবনে কোনদিন পরিবর্তন না করা অতি ময়লা শাড়ি আর মুখ-চুল ভর্তি ফাউন্ডেশন অথবা হেয়ার কালারের বদলে কালি-ময়লার আস্তরন আর কাঁধে সাদা প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এগিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা। উপুড় হয়ে অতি সাবধানে তুলে নিলেন বোতলটা, যেন তার অতি আদরের কেউ, যত্নের কেউ। ছিপিটাও খুঁজে বের করলেন কোথা থেকে যেন।
অতি অদ্ভুত এক পৃথিবীতে আমরা বাস করি। শিক্ষিত, ভদ্দরনকেরা রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, পাহাড়-সমুদ্র সব, সব কিছু নোংরা করে চলে তুমুল প্রতিযোগিতায়। আর তা পরিষ্কার করে এ পৃথিবীকে মোটামুটি বসবাসের উপযোগী করে রাখে অশিক্ষিত, ছোটলোকেরা। অদ্ভুত!
যে শিক্ষা অন্ততপক্ষে রাস্তায় ময়লা না ফেলার মতো অতি ক্ষুদ্র নৈতিকতাটাও জাগাতে পারে না, সে শিক্ষার উদ্দেশ্যটা আসলে কী?
____
ফুটনোট: প্রায় ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মাদ(সা.) নামক একজন তৎকালিন সমাজের সার্টিফিকেটহীন অশিক্ষিত ব্যক্তি রাস্তা ময়লা না করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন, এমনকি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ পর্যন্ত দিয়ে গেছেন।
(এখন তো আবার আপনারা মধ্যযুগীয় শিক্ষা নেবেন না। দেশ পিছিয়ে যাবে। তবুও জানিয়ে রাখলাম আরকি। মাইন্ড কইরেন না)

বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

সস্তা কিছু হতাশা


নিউজ দেখলাম একটা মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করেছে। নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষা হবে। লাখ লাখ ছেলেমেয়ে এ+ পাবে আর মুদ্রার উল্টো পিঠে থাকা কিছু ছেলেমেয়ে অকৃতকার্য অথবা অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলাফল করে আত্মহত্যা করবে। সমাজের অতি সাধারণ, মুখস্থ একটি চিত্র। তবু বাআঁলি জাতির এতে কোনোদিন টনক নড়বে না। একটা ছাত্র/ছাত্রী খারাপ রেজাল্ট করা মাত্রই পুরো সমাজ তার উপর চেপে বসবে। হাসাহাসি-গালিগালাজ-মার কোনো কিছুই বাদ যাবে না মেন্যু থেকে। ১৫-১৬ বছরের একটা স্রেফ বাচ্চা ছোকরা এই পাহাড়সম অপমান মাথায় নিয়ে কীভাবে টিকে থাকবে তার থোড়াই কেয়ার বাঙাল জাত করে।
আমরা হাসিমুখে একজন ঘুষখোর, সুদখোর অথবা এ জাতীয় চোরদের সাথে বসে চা খেতে পারি অবলীলায়, কিন্তু একটাবার পরীক্ষায় খারাপ করা ছাত্রের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারি না, কাঁধে হাত রেখে নীরবে জানান দিতে পারি না--ব্যপার নাহ! যেন তারা এক ভয়ানক অপরাধী। এরশাদ শিকদার গোছের কেউ।অথচ পরীক্ষায় ভালো-খারাপ ফলাফল একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ-ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও, কোনো সমাজে পরীক্ষার ফলাফলের জন্য কেউ আত্মহত্যা করেছে বলে কোনদিন শোনা যায় না। এর মানে এই না যে সব জাতি মূর্খ রয়ে গেছে আর আমরা সব বিদ্যার আটিঁ।
কেনো যেন এই এসএসসি, এইচএসসি নামক ফালতু গোছের পরীক্ষাগুলো আমাদের সমাজে এত বেশি মূল্যবান যে এর জন্য নিজের জীবনটাকে পর্যন্ত নির্মম ট্রেনের চাকার নিচে পিষে ফেলতে আমরা দ্বিধা করি না।
পরীক্ষার্থী পোলাপানদের বলতে চাই--
যেই মানুষদের কথা শুনে তোমরা এত ভয় পাচ্ছো, তারা কোনোদিনই তোমার পথটা হেঁটে দিবে না। তারা কোনোদিন তোমাদের প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তিতে শরীক হতে পারবে না। তারা কেবল মুখ ভেংচে চিরকাল নিজ জিভের কু-ব্যবহারই করে যাবে। মনে রাখা উচিত- কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করবেই, তাই বলে ক্যারাভান কখনো থেমে যায় না। সে চলবে নিজ গতিতেই।
ফলাফল খারাপ করার পর জীবন থমকে গেছে, নি:শেষ হয়ে গেছে জাতীয় ধারণা জন্মানো স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাস করো, এই একটা পরীক্ষা সত্যিই তোমার এই মহান জীবনের কোনো কিছু শেষ করার ক্ষমতা রাখে না। তোমার জীবনটা শেষ করে থাকলে করতে পারো তুমি নিজে; নতুন করে উঠে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা টা থামিয়ে দিয়ে। এই মানবজীবন এত তুচ্ছ নয় যে একটা মাত্র পরীক্ষাই এর গতিপথ থমকে দেবে। জীবনটা আনন্দের। শুধু কখনো কখনো একটু সময় লাগে হারিয়ে যাওয়া আনন্দটুকু ফিরে পেতে।
এ পৃথিবীর সবাই তোমার হাতটা ছেড়ে দিলেও যে মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তোমাকে একা ছেড়ে দেবেন না কখনোই। শুধু দরকার লম্বা করে একটা শ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, আবার নতুন করে শুরু করার উদ্দীপনা নিজের মাঝে তৈরি করা। যে মহান রব তোমাকে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন তিনি তোমাকে ভোলেননি এখনও। শুধু অপেক্ষা তার কাছে চাইবার। দু ফোঁটা চোখের জল তার সামনে সিজদায় ফেলেই দেখো, সফলতার প্রকৃত মালিক টা কে!

বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

পৃথিবী আর ভালোবাসা



                                      

আমার ফোনে কিছু মৃত মানুষের কন্টাক্ট নাম্বার আছে। নিয়মানুসারে সেগুলো ডিলেট করে আমার তাদের ভুলে যাওয়া উচিত। মৃত মানুষদের জন্য অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই, তাদের সকল আপাত স্মৃতি জোর করে দূরে ঠেলাটাই মানব সন্তানের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি।

সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭

আত্মহত্যা ও কিছু ভুল ধারণা



আত্মহত্যা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা—
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যা নিয়ে যারা বারবার কথা বলে তারা আসলে এমন কিছু কখনোই করবে না।
বাস্তবতা: প্রায় প্রত্যেক আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিই কোনো না কোনো সতর্ক হবার মতো সংকেত তাদের কাছের মানুষদের দিয়ে থাকেন।
যেমন—“ আমি না থাকলে তুমি বুঝতে পারবে।”
“আমার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।”
সাধারণ ভাবে বা যতটাই হাস্যচ্ছলে এজাতীয় কথা বলা হোক না কেনো এর পেছনে ভয়ংকর আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের থাকে তারা সাধারণত পাগলাটে/মানসিক রোগী হয়ে থাকে।
বাস্তবতা: আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের থাকে তাদের অনেকের মাঝেই মনস্ত্বাত্তিক বা মানসিক সমস্যার তেমন কোনো সিম্পটোম দেখা যায় না। তবে অবশ্যই তাদের মাঝে হতাশা-বিষাদ-এবং গভীর মন খারাপের ছাপ দেখা দেবে। তবে মনে রাখা উচিত যে গভীর বিষাদ অথবা হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি মাত্রই মানসিক রোগী নন।
প্রচলিত ধারণা: কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায় তাহলে তাদের সে পথ থেকে ফেরানো সম্ভব নয়।
বাস্তবতা: প্রচন্ড হতাশাগ্রস্থ বা আত্মহত্যা প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিও মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত ''জীবন আর মৃত্যু কামনা'' এই দুই ইচ্ছার দোলাচলে দুলতে থাকেন। তারা কখনোই মৃত্যু চান না, তারা চান কেবল তাদের যন্ত্রণাটুকু বন্ধ হয়ে যাক, মুছে যাক একেবারে।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যা যারা করে তারা কারও কাছ থেকে সাহায্য নিতে চান না।
বাস্তবতা: আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মাঝে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তিই বিগত ছয় মাস যাবৎ মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যার প্রবণতা যার মাঝে আছে তার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলে সে এতে আরও উৎসাহিত বোধ করতে পারে বা আইডিয়া পেতে পারে।
বাস্তবতা: এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলে তাকে আইডিয়া দেওয়া সম্ভব নয়। বরং উল্টোটাই সঠিক। আত্মহত্যা নিয়ে বিস্তারিত, খোলাখুলি আলোচনাই হতে পারে এসব ক্ষেত্রে কাউকে সাহায্য করার জন্য উত্তমপন্থা।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

ভাস্কর্য


আমাদের দেশে ভাস্কর্য নামক কিছু অদ্ভুত দর্শন জিনিস দেখা যায়। এগুলো যে আসলে ঠিক কি জিনিস সেটা যিনি তৈরি করেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেও শিউর থাকেন কিনা সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান। অবশ্য যে দেশে হাজার কোটি টাকার উড়াল সেতু বানিয়ে ফেলার পর টের পাওয়া যায়-- ইস সি রে! ভুল জিনিস বানিয়ে ফেলসি। সে দেশের ভাস্কর্যগুলো নিপুণ হাতে তৈরি হবে এমনটা আশা করাটা বাতুলতা বৈ কি!
কোনো এক অদ্ভুত কারণে এসব শিল্পীদের ধারণা জন্মেছে যে বকের ঠ্যাং কাকের ঠ্যাং জাতীয় কিছু একটা বানিয়ে রাস্তায় সাটিয়ে দিলেই সেটা উচ্চমার্গীয় শিল্প হয়ে যায়। দেশের বাইরে বহু ভাস্কর্য আমি দেখেছি। কিন্তু ভাস্কর্যের নামে আমাদের দেশে আসলে যে বস্তু তৈরি হয় সেগুলা আসলেই অনন্য। এগুলো কেবল আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে গু খরিদ করার নামান্তর মাত্র।
একটা উদাহরণ দেই-- সোনারগাঁ হোটেলের সামনে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বানানো হয়েছিল। প্রকান্ড বাঘ। বাঘের রং-- লালচে কমলা। বাঘের রঙ লালচে কমলা এটা বড় কোনো সমস্যা না। ক্ষমার যোগ্য অপরাধ। কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হলো, রয়েল বেঙ্গলের মাথা মেনি বেড়ালের মতো, আর শরীর সাপের মতো সরু। প্রতিদিন অফিস যাবার পথে মুখটা তেতো করে এই জিনিস দেখার অত্যচার আমাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রায় বছরখানেক। আমার অভিশাপেই কিনা কে জানে, সেই বাঘ কিছুদিন পর ভেঙে, চেগিয়ে গেলো, কেড়ে নিলো এক দরিদ্র ভ্যান চালকের জীবন।
এজাতীয় আরও হাজার হাজার ভাস্কর্য, মুর্তি, হাবি-জাবি কি সব যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের সর্বত্র। যেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এটা আব্রাহাম লিংকন নাকি শামীম ওসমান। সব একই। যাই হোক, হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলেন-- ''আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও সেটা আবর্জনাই থাকে।"এই সুত্র মেনে ভাস্কর্যগুলোর গঞ্জনসেবী ডিজাইনারদের আমার খুব বলতে ইচ্ছে হয়-- রাস্তাঘাটের জিনিসগুলোকে আপনারা ''বড় মাপের শিল্প'' বললেও সেগুলো আসলে আবর্জনা। শিল্প না।
আরেক দল আছে কপি-পেস্ট শিল্পী। যেমন, হাইকোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর মুর্তির ডিজাইন কপি মেরে শিল্পী ভাবলেন খুব নান্দনিক একটা শিল্প মেরে দিয়েচি মাইরি, বোকা বাঙ্গালগুলা টেরও পাবে না! হেহেহেহে...
কিন্তু এই বিদঘুটে শাড়ি পরিহিতা তলোয়ারধারী, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়া, মহিলা মূর্তিটা যে স্রেফ একটা হাসি উদ্রেক করা বস্তু তা কি কেউ এই শিল্পীকে দয়া করে বলে দেবেন? আমাদের ট্যাক্সের টাকা খরচ কররে এইসব যে বানান একটুও বুক কাঁপে না?
-
পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা সব কিছু নিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখন আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রায় বেশিভাগ ছাত্ররাই ব্যস্ত মূর্তি তৈরি, মূর্তি রক্ষা, ইঁদুর-বাঁদরের মুখোশের সাথে অমঙ্গল দুরীকরণ টাইপ ব্যপক গুরুত্বপূর্নে প্রজেক্টসমূহে। এই বাঁদরের মুখোশ পড়া ছাত্ররা আমাদের জাতীয় জীবনে ঠিক কী ভুমিকা রেখে ভবিষ্যত জাতিকে উদ্ধার করবে তা নিয়ে ইদানিং ভেবে উঠছি প্রতিনিয়ত। :/