বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

ভাস্কর্য


আমাদের দেশে ভাস্কর্য নামক কিছু অদ্ভুত দর্শন জিনিস দেখা যায়। এগুলো যে আসলে ঠিক কি জিনিস সেটা যিনি তৈরি করেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেও শিউর থাকেন কিনা সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান। অবশ্য যে দেশে হাজার কোটি টাকার উড়াল সেতু বানিয়ে ফেলার পর টের পাওয়া যায়-- ইস সি রে! ভুল জিনিস বানিয়ে ফেলসি। সে দেশের ভাস্কর্যগুলো নিপুণ হাতে তৈরি হবে এমনটা আশা করাটা বাতুলতা বৈ কি!
কোনো এক অদ্ভুত কারণে এসব শিল্পীদের ধারণা জন্মেছে যে বকের ঠ্যাং কাকের ঠ্যাং জাতীয় কিছু একটা বানিয়ে রাস্তায় সাটিয়ে দিলেই সেটা উচ্চমার্গীয় শিল্প হয়ে যায়। দেশের বাইরে বহু ভাস্কর্য আমি দেখেছি। কিন্তু ভাস্কর্যের নামে আমাদের দেশে আসলে যে বস্তু তৈরি হয় সেগুলা আসলেই অনন্য। এগুলো কেবল আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে গু খরিদ করার নামান্তর মাত্র।
একটা উদাহরণ দেই-- সোনারগাঁ হোটেলের সামনে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বানানো হয়েছিল। প্রকান্ড বাঘ। বাঘের রং-- লালচে কমলা। বাঘের রঙ লালচে কমলা এটা বড় কোনো সমস্যা না। ক্ষমার যোগ্য অপরাধ। কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হলো, রয়েল বেঙ্গলের মাথা মেনি বেড়ালের মতো, আর শরীর সাপের মতো সরু। প্রতিদিন অফিস যাবার পথে মুখটা তেতো করে এই জিনিস দেখার অত্যচার আমাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রায় বছরখানেক। আমার অভিশাপেই কিনা কে জানে, সেই বাঘ কিছুদিন পর ভেঙে, চেগিয়ে গেলো, কেড়ে নিলো এক দরিদ্র ভ্যান চালকের জীবন।
এজাতীয় আরও হাজার হাজার ভাস্কর্য, মুর্তি, হাবি-জাবি কি সব যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের সর্বত্র। যেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এটা আব্রাহাম লিংকন নাকি শামীম ওসমান। সব একই। যাই হোক, হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলেন-- ''আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও সেটা আবর্জনাই থাকে।"এই সুত্র মেনে ভাস্কর্যগুলোর গঞ্জনসেবী ডিজাইনারদের আমার খুব বলতে ইচ্ছে হয়-- রাস্তাঘাটের জিনিসগুলোকে আপনারা ''বড় মাপের শিল্প'' বললেও সেগুলো আসলে আবর্জনা। শিল্প না।
আরেক দল আছে কপি-পেস্ট শিল্পী। যেমন, হাইকোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর মুর্তির ডিজাইন কপি মেরে শিল্পী ভাবলেন খুব নান্দনিক একটা শিল্প মেরে দিয়েচি মাইরি, বোকা বাঙ্গালগুলা টেরও পাবে না! হেহেহেহে...
কিন্তু এই বিদঘুটে শাড়ি পরিহিতা তলোয়ারধারী, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়া, মহিলা মূর্তিটা যে স্রেফ একটা হাসি উদ্রেক করা বস্তু তা কি কেউ এই শিল্পীকে দয়া করে বলে দেবেন? আমাদের ট্যাক্সের টাকা খরচ কররে এইসব যে বানান একটুও বুক কাঁপে না?
-
পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা সব কিছু নিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখন আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রায় বেশিভাগ ছাত্ররাই ব্যস্ত মূর্তি তৈরি, মূর্তি রক্ষা, ইঁদুর-বাঁদরের মুখোশের সাথে অমঙ্গল দুরীকরণ টাইপ ব্যপক গুরুত্বপূর্নে প্রজেক্টসমূহে। এই বাঁদরের মুখোশ পড়া ছাত্ররা আমাদের জাতীয় জীবনে ঠিক কী ভুমিকা রেখে ভবিষ্যত জাতিকে উদ্ধার করবে তা নিয়ে ইদানিং ভেবে উঠছি প্রতিনিয়ত। :/

1 টি মন্তব্য: