শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯

বুকের ভেতর নদী




আমার জন্ম এক ভয়াবহ বন্যার সময়ে। চারদিকে অথৈ পানি। বর্তমানে যে দোতলা বাসাটায় আমরা থাকি তার দোতলার বারান্দা পর্যন্ত নৌকা নাকি চলাচল করতো। দোতলার বারান্দার গ্রিল কেটে বানানো হল ছোট পকেট গেইট। যাতায়াত চলতো এর মধ্য়ে দিয়েই।

প্রচন্ড জলের ক্রোধ দেখলো পুরো দেশ। এমন ভয়াবহ এক জল-ক্রোধের এক রাতে আমার জন্ম হল। আব্বার ডায়েরী মতে সময় রাত ২.১৫। আম্মার বান্ধবীরা আমাকে দেখতে এলেন, যাবার সময় দাঁত কেলিয়ে নাম দিয়ে গেলেন-- 'ফ্লাডু'।
সেই বছরটা সকল সচেতন মানুষের মনে চিত্রায়িত হয় একটা খল চরিত্ররূপে। আমি সচেতন মানুষ নই, তাই চারদিকে জলের এত আধিক্য আর টানা বর্ষন দেখেই হয়তো আমি জলকে প্রচন্ড ভালবেসে ফেললাম। আমার বুকে আমি এক প্রকান্ড নদী আজও পুষি। পানির সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকেই ভালোবাসি। হোক না সেটা নদী, সমুদ্র, ছোটখাটো বিল, বৃষ্টি কিংবা রেকর্ড করাই পানির কলকল শব্দ।
আজ তুমুল, একরোখা বৃষ্টি হচ্ছে। ভীষণ!
আমি খুব অকারণ অস্থিরতা বোধ করছি। আজ জানালা খুলে বৃষ্টি ছুঁতে ইচ্ছে করছে না, ভিজতে ইচ্ছে করছে না। এমনকি বৃষ্টি দেখতেও কেমন ভয় ভয় টাইপ আতঙ্ক লাগছে। আজকাল নিয়মানুযায়ী কিছুই হচ্ছে না। অবশ্য সবসময় সবকিছুই যে নিয়মানুযায়ী চলতে হবে তাও কোনো কাজের কথা নয়।
হয়ত বুকের ভেতর পুষে রাখা নদীটা শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এই ভীষণ বৃষ্টিটা তাই টুপটাপ ছন্দে খুব একটা ঝংকার তাতে তৈরি করতে পারছে না। যাক শুকিয়ে। থাকুক মরে। কতজনের কত নদী মরে গেছে। দিনে দিনে আরও কত মরবে।
তাতে কবে কার কি ই বা এসে গেছে?

২টি মন্তব্য: