মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭

এমন ঘনঘোর বরিষায়...



প্রিয় স্বাতী,
"বৃষ্টি ছাড়া তোমাকে আমি কখনো লিখি না।"  
তোমার অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতেই আজ লিখতে বসেছি। গত দুদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে-- একঘেয়ে, একটানা। রাস্তা-ঘাটে পানি-টানি উঠে বিশ্রী অবস্থা, থলথলে কাঁদা, জুবজুবে ভেজা শার্টে ছেয়ে গেছে গোটা শহরটা। পত্রিকার ভাষায়-- "টানা বর্ষনে নাকাল শহরবাসী।" কথা ঠিক! আমি নাকাল হয়ে পড়ছি। আমি নাকাল পড়ছি এক অদ্ভুত ভালো লাগার ঘোরময় বিষন্নতায়, ঘরের জানালার কাছে থাকা গাছটার একটানা সরসর শব্দটায়, হীম করা বাতাস আর মাটির সোঁদা গন্ধটার মাদকতায়। 
জানো স্বাতী? কিছু কিছু গন্ধ আমাকে পুরোনো স্মৃতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় বারবার। আমি আজ পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম মাটির সোঁদা তীব্র ঘ্রাণটার প্রবাহ আমার নাক দিয়ে ঢুকে বুকের সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে...যাচ্ছে...যাচ্ছে; শেষমেশ গিয়ে অনেকটা বুকে জমাট বেঁধে থাকা কফের মতো করে বাঁ পাশটাতে জমাট বেঁধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কি অদ্ভুত! আমার মনে পড়ে যেতে থাকলো আমার শৈশবে কাটানো লালমাটিয়ার দিনগুলোর কথা। বৃষ্টির দিনগুলোয় স্ট্যাম্প, ব্যাট সবকিছু গ্যারেজে গুছিয়ে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলতে নেমে যেতাম রাস্তায়। কি উত্তেজনা! কি প্রবল উৎসাহ! অবশ্য আমাদের বেশিরভাগ উৎসাহ ছিল বারান্দায় দাঁড়ানো কিশোরি মেয়েগুলোকে ইম্প্রেস করার জন্যই। হা হা হা.....কি রাগ হচ্ছে খুব? কি প্রাণান্ত চেষ্টা থাকতো একেকজনের। দুর্দান্ত, ঘোরলাগা সময়গুলো। আহ!
আমি বরাবরই একটু ভাবালু টাইপের। খেলার ফাঁকের বিরতিতে কিংবা মাঝেমধ্যে অযথাই লাল রঙা ইঞ্জিনিয়ার বাড়ির চালতা গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে পানির ঝাপটাগুলো উপভোগ করতাম প্রচন্ডভাবে। অঝরধারার বৃষ্টিগুলো আমার চুল হয়ে গড়িয়ে চোখের পাতার ওপর এসে স্থির হতো, চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যেত বারেবার… সে ঝাপসা চোখের পানিগুলো হাতের তালু দিয়ে সরিয়ে দিতে যে কি এক অদ্ভূত ভালো লাগা কাজ করতো…অসহ্যকর এক ভালো লাগা!
জানো স্বাতী? আমার খুব ইচ্ছে করে ওই অনুভূতিগুলোকে ফিরে পেতে। যদি পারতাম আমার সর্বস্ব দিয়ে সে সময়গুলোকে আমি আঁকড়ে ধরতাম। এতো তীব্র করে কীভাবে আমি অনুভব করতে পারতাম সবকিছু? কীভাবে পারতাম এতো সুন্দর করে সব শুভ্র-শুদ্ধতায় সবকিছুকে সাজাতে? আমার বড্ড ইচ্ছে ছিলো তোমাকে এই বৃষ্টি-দিনের প্রতিটা সুন্দরতম অনুভূতি হাতে হাত ধরে চেনাই, চোখ বন্ধ করিয়ে অনুভব করাই আমার মতো করে। আমি এখনও খুব করে ভালোবাসি আমার এই প্রাচীন অনুভূতিগুলোকে। এই স্মৃতিগুলোর মাঝেই আমার বর্তমান বসবাস। ভালো থাকা-মন্দ থাকার বড় একটা অংশ। 
আজো ইচ্ছে করে ঠিক তেমন করে ভিজি। মনটার সাথে সাথে আমার চোখের পাতায় ঝাপসা বৃষ্টির ফোঁটা জমাই। হয় না! আমার এই সামান্য বয়সটাতেই ক্যামন করে যেন অনেকগুলো রোগ বাঁধিয়ে বসে আছি। আধঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজা মাত্রই প্রচন্ড মাথাধরায় অন্তত দু'দিন ভুগতে হয়। গলাবন্ধ হয়ে কানে ইনফেকশন হয়ে বিশ্রী এক অবস্থা তৈরি হয়। 
নিজের অসহায়ত্বে ইদানিং মাঝে মাঝে  অজান্তেই চোখে পানি জমে যায়। এখন ঠিক বৃষ্টি না, মাঝে মাঝে চোখের জলে ঝাপসা করি চোখ দুটো। এক বৃষ্টির মতো অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমার কত অস্বাভাবিক ছন্দ-কল্পনা–অনুভতি আর তার ব্যবচ্ছেদ। আহারে! 
সবকিছু নিমিষেই কেমন যেন ইথারে হারিয়ে গেছে। আজ সকালে অফিসের করিডোরটাতে নির্জনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে রাস্তায় অবিরত বর্ষাধারার বয়ে যাওয়া দেখছিলাম– প্রবল অসহায়ত্বে আমি অস্থির হচ্ছিলাম, বারবার...
জানি তুমি হয়ত কোনদিনই আমার এ কথাগুলো শুনতে পাবে না, জানতেও পাবে না। নাইবা শুনলে… না ই বা জানলে। এ জীবনে সবকিছু জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কথা? তোমার কথার সাথেই তো আমার কথার কোনো যোগ নেই। আর কথা কিংবা শব্দের গাঁথুনি গুছিয়ে কি ই বা লাভ বলো?   
অনেক বেশি বাঁচাল হয়েছি ইদানিং, তাইনা? বাঁচাল-বালক হয়েছি! হাহাহা… বাক্যটা খেয়াল করেছো স্বাতী? বালক বলে ফেলেছি নিজেকে! বালক বয়সটা যে পুরোনো করে শ্যাওলা জমিয়ে বসে আছি বহু-বরষা আগেই সেটা ইদানিং আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না। তবুও ভাবতে ভালো লাগে-- চালতা গাছের নিচে সে বালক আমাকে, চুল ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে নেমে পড়া পানির ফোঁটার বালক আমাকে; আপনাকে আমি খুঁজিয়া বেড়াই, বারেবারে...হাহাহা...   
বাঁচাল না হয়ে কী করা যায় বলোতো? এই বৃষ্টির দিনগুলো আমাকে অন্যরকম করে দেয়। জানোই তো। সবসময় এখন আর চাইলেও লেখার সময় করে উঠতে পারিনা! কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে হয় আমার অনুভূতির কথাগুলো তোমায় জানাই। আমার প্রতিটা অনুভূতি, অসংখ্য পাওয়া আর না পাওয়ার গল্পগুলো তোমায় শোনাই-- প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। আমার প্রতিটা অপ্রকাশিত চিঠির পরতে পরতে আমার নৈঃশব্দগুলোর শব্দময় হাহাকার শোনাই তোমায়।
আমার স্মৃতিশক্তির কি বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা তা তোমার অজানা নয়। তবু কীভাবে কীভাবে যেন অনেককাল আগে পড়া রবীঠাকুরের কয়েকটা বরষার লাইন আমার মাথার ভেতর ঢুকে গিয়েছিলো, হয়তো বরষা নিয়ে লেখা বলেই আছে। আজকের দিনে লাইনগুলো উৎসর্গ করলাম শুধুই তোমার জন্য –
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর... 
জানি, এমনটা কখনো, কোনোদিন হবে না। দেখা গেল তুমি আছো, বৃষ্টি নেই। কিংবা হাহাকার করা রাজ্যের বৃষ্টি চারিদিকে, কিন্তু তুমি ই আর নেই।
অবশ্য পথপানে স্বপ্ন দেখেই চলে গেলো জীবনের অসংখ্য বরষা… হয়ত বাকিটাও এমনি করে চলেই যাবে… 
আমার স্বপ্নগুলো কেনো যেনো কখনোই পূরণ হয়না! না হোক! এ ঝিম ধরা অপূর্ণ স্বপ্নগুলোতেও এক পৃথিবী ঘোরলাগা ভালোবাসা আছে। ঠিক বলেছি না সুনয়না ? হা হা হা...
চির প্রতীক্ষায়, আমি

বৃষ্টিতা!



আমাদের ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়িভর্তি মানুষজন আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হুলস্থুল এক কারবার। একসাথে ঠেলা-ঠেলি, ঠাসাঠাসি করে কাঠের বাক্সে থান্ডার ইন প্যারাডাইজ, শুক্রবারের আলিফ লায়লা অথবা ঈদের ইত্যাদি অনুষ্ঠান ই ছিল আমাদের জীবনের মহৎ বিনোদন।

ও নাহ...আমার  আরেকটা গোপন বিনোদন ছিল। বকা খাবার ভয়ে যেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম, আজীবন! এই গোপন বিনোদন টা ছিল-- ঝুম বৃষ্টির রাতগুলো! দেখা গেল মারামারি, কান্নাকাটি করতে করতে কোন এক রুমে ঘুমিয়ে পড়েছি। মামা, খালা কিংবা নানুর কাছে। (এধরণের পরিবারে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো রুমে ছোটদের প্রতিদিন ঘুমানোর নিয়ম থাকেনা। একেকদিন একেজনের কাছে চুপচাপ গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়া।) হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো চোখে মুখে পানির ঝাপটায়।

বৃষ্টি!

ঘটনা টের পাওয়া মাত্রই আমি তীব্র উত্তেজনা নিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসতাম। চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে ঘরময় মগ, বালতি, বাটি, হাঁড়ি, যে যা পারছে তাই নিয়ে এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আমাদের টিনশেডের বাড়িটাতে সাধারণের চেয়ে একটু জোরে বৃষ্টি নামলেই কেল্লা ফতে!  চাল বেয়ে পানি, রাস্তার পানি, চারদিকের দুনিয়ার সব পানি এসে জমে একাকার হতো আমাদের বাড়ির ভেতরে। তা ঠেকাতেই বাড়ি ভর্তি সবার এত আয়োজন।

এসময়গুলোতে সাধারণত ঘরে তুমুল ঝগড়া লেগে যেত। হাউকাউ, চিৎকার চ্যাঁচামেচি, ভয়ানক এক অবস্থা। কোনো এক অজানা কারণে আমি একপ্রকার চাপা উত্তেজনা অনুভব করতে থাকতাম। এই অদ্ভুত বিপদের সময়গুলোতে আমার আনন্দদায়ক এধরণের অনুভূতি আমাকে যে কতবার লজ্জিত করেছে, হিসেব নেই। কিন্তু তবু রাতের বৃষ্টির দিনগুলোতে আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনের কোণে লুকিয়ে ঘুমুতাম। ভাবতাম-- কখন পানি পড়া শুরু হবে? পড়তে পড়তে একটা সময় আর বাটি, বালতিতেও কাজ হবে না। ঘর ভেসে যাবে গোড়ালি পানিতে। বাড়তে থাকবে আরও, আরও...

বাড়ির সবাই একটা সময় পর হতাশা আর ক্লান্তি নিয়ে নিয়তির হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়বে। আর আমি বসে পড়বো কাগজের নৌকা বানানোর কাজে। আমার ঘরের ভেতর একের পর এক নৌকা ভেসে বেড়াবে। হরেক রকম নৌকা-- খবরের কাগুজে নৌকা। বোনের ডায়েরী পাতা নৌকা। টালি খাতা কিংবা পোকা খাওয়া মামার উপন্যাস নৌকা।

এখনও মাঝে মাঝে গভীর রাতগুলোতে তুমুল বৃষ্টিরা নেমে আসে আমার  কংক্রিট বাড়ির ছাতে। সে বৃষ্টির ডাকে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি অস্থির হয়ে জানালার কাছে যাই-- বন্ধ করতে হবে। কোনো এক অজানা ঘোর আমায় আটকে রাখে, বন্ধ করতে পারি না। বাইরে বৃষ্টির শব্দেরা বেড়ে চলে। নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে চরাচর। নোংরা এ শহরের ক্লান্তি, বেদনা, আর হাহাকারগুলো যেন মুছে দিচ্ছে পরম যত্নে।

কী তুমুল, একরোখা বৃষ্টি।

বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিতে থাকে আমার মুখ, পাশের টেবল, টেবলের ওপর রাখা পাওলো কোয়েলহোকে। আমি বিড়বিড় করি-- ভিজুক। আমার ভেতরের কোথায় যেন একটা ক্ষীণ আশা জন্মাতে থাকে-- এই থাই-জানালার ফাঁক গলে আসা বৃষ্টির ছাঁটগুলো আজ ঘরটাকে ভাসিয়ে দেবে। আমি আবার সেই শৈশবের চাপা উত্তেজনা অনুভব করতে থাকি। অপেক্ষায় থাকি, এ ঘরটা একটু পর ঠিক ঠিক ভেসে যাবে, আমি নৌকা বানাতে বসে পড়বো। হরেক রকম নৌকা-- 
খবরের কাগুজে নৌকা। বোনের ডায়েরী পাতা নৌকা। টালি খাতা কিংবা পোকা খাওয়া মামার উপন্যাস নৌকা।

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

পরাহত রাতের কথা!



এক সময় আমার খুব প্রিয় একটা লাইন ছিল--
"আমি তোমাকেই বলে দিবো, সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়"।

লোকটা কিসের ভুল দরজায়, কার ভুলে কড়া নেড়ে উদাস হয়েছিলো আমি নিশ্চিত নই। 
তবু লাইনটা যতবার শুনেছি এক গভীর বিষন্নতায় ডুবে গেছি। 

আমার পুরোনো তীব্র মাথা ব্যাথাটা আজ আবার চেপে ধরেছে। এলোমেলো শব্দগুলো ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে।এদিক-ওদিক। এখানে-ওখানে। এক এক করে ধরে এনে সেলাই করতে হচ্ছে জোর করে। ঘর অন্ধকার করে ল্যাপটপটে খুটখুট। চোখে চাপ পড়ছে। খুব! মাথা ব্যথাটা আরও বাড়ছে। বাড়ুক। বাড়তে বাড়তে একটা সময় আচ্ছন্নের মতো হয়ে যাবো, সেই সময়টায় অনেকটা নিজেকে নেশাগ্রস্থের মতো মনে হতে থাকে। আর কিছুই অনুভব হয় না। 

কি যেন বলছিলাম? ও হ্যাঁ...

ভুল দরজা, কড়া নাড়া.....।

ভুল করাটা মানব জাতির এক অতি প্রিয় কাজ। বাবা আদম(আ.) থেকে শুরু আমাদের এই সিলসিলা।

এই একজীবনে আমি বহুবার, বহুভাবে ভুল করেছি। বারবার একের পর এক কড়া নেড়েছি ভুল দরজাগুলোতে।

মানুষ ভুল থেকে শেখে। আমি মাতবর শ্রেণীর ছেলে। আমিও শিখেছি। আমি শিখেছি-- এই পৃথিবীতে আসলে মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা জমা করে রাখতে নেই। সব ভালোবাসা, সব অনুভূতি, সব মমতা কেবল এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার জন্য ই বরাদ্ধ রাখা উচিত। এতে যেমন ভালোবাসার অপচয় থেকে মুক্তি মেলে। তেমনি মুক্তি মেলে হৃদয় ভাঙ্গা আর প্রতারিত হবার যন্ত্রণা থেকে।

আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে আমাদের স্রষ্টা কোনোদিন হাসবেন না।
মানুষ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে হাসে। খুব! এটাও মানুষের অতি প্রিয় কাজগুলোর একটি। কেউ উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলো-- আমরা হেঁসে উঠি। কারণ আমি তো দাঁড়িয়ে আছি, নিরাপদ, সুস্থ আছি।

নিজের লেখার কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কী যেন লিখতে বসেছিলাম, ভুলে গেছি। সুতা কেটে গেছে বারবার। বানান আর গ্রামারের ভুলও বোধহয় অনেক হয়েছে আজ। গ্রামার পুলিশেরা বগল বাজাবে। বাজাক!

কি এসে যায়?

আমি সবসময় আমার সব কথা, লেখা চিন্তা এডিট করতে থাকি। ভাবি, এরপর ভাবনাটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করি কাগজের মতো, এরপর আবার সাজাতে থাকি। সাজাতে থাকি অনেকটা পাজল সলভের মতো। সব লেখা কারেকশান করতে থাকি। অনবরত। 

শুধু এই জীবনটা কারেকশান করার কোনো যন্ত্র আমার হাতে নেই। এই যন্ত্রটাও আমার স্রষ্টার হাতে। এটাই ভরসা! 

আমি ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছি একটা সস্তা পেন্সিলের মতো। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছি, দু'দিক থেকেই শারপনার দিয়ে আমাকে কেটে কেটে এডিট করে ফেলা হচ্ছে। আমার আমিত্ব শেষ করে ফেলছি দিন দিন। 

সেদিন একবার ভেবেছিলাম আঁতলামী ছেড়ে দেবো। সুযোগ চাই মানুষ হব স্লোগান তুলে ভালো মানুষ হয়ে যাব। সবাই ভাবলো মাথাটা গেছে এবার। 

ভাবলাম খুব সাদা কথা বলব, সাদা চিন্তা করব, সাদা ভাষায় লিখব। সাদায় খাবো, সাদায় পড়বো। কিন্তু দেখলাম, ওটা ঠিক আমি না। অন্য কে যেন। অভিনেতার আমি।

আমি একবার ভেবেছিলাম, একটা নদী হব........ 
বয়ে চলব........এক একটা স্রোত হয়ে কেবল একবারই আসবো। বারবার না। এক ভুল একবারই করবো, বারবার না।
আমি হতে পারিনি।
আমি হতে চেয়েছিলাম একটা রঙিন ঘুড়ি, সফেদ পাখি, অতি প্রিয় ভালোবাসার শেষ চিঠি অথবা সাদা ভাতের মতো কাশফুল। 

কিন্তু এক আমি হয়েছি এক ছেঁড়া ডানার একটা পাখি। ঘর অন্ধকার করে-- কাপুরুষের মতো কাতরাতে জানা পরাজিত পাখি।

দিনকাল একেবারেই আমার ভালো যাচ্ছে না। 

"মন খারাপ?'' 

আমি বলি-- নাহ! শরীর খারাপ। পরক্ষ্ণেই অপরাধবোধ ঘিরে ধরে আমায়। মিথ্যে বলে ফেললাম না তো? কপালে হাত দিতেই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাই। বাহ! এখনও জ্বর আছে। যাক মিথ্যে হয়নি কথাটা। নিজেকে সহ্য করতে করতে এই জ্বরটাকেও যে কখন সহ্য করা শিখে গেছি মনেও নেই।

''আমার মন খারাপ'' বাক্যটায় কেমন যেন একটা পরাজয়ের গন্ধ আছে। অনেকটা জ্বরের গন্ধের মতো। আমি পরাজয় পছন্দ করি না। যদিও তার সাথে আমার সম্পর্ক অতি প্রাচীন, অতি গভীর... 

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

দ্বিনী বিল গেটস





বিবাহের কথা উঠলেই আচমকা আমাদের ভাইয়েরা সব সাহাবী হয়ে ওঠেন। হৈ হৈ রব ওঠে-- এক সাহাবা স্রেফ কুরআন দিয়ে মোহর দিসেন। আজকালকার বেত্তমিজ দুনিয়া, ১০-১৫ লাখের নিচে কথাই নাই। বিবাহ কঠিন, অতি কঠিন! সমাবেশের বাকিরা মাথা নাড়েন-- ঠিক বলেছেন! ঠিক বলেছেন!
ইদানিং এসব শুনলেই আমি নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জাজমেন্টাল হয়ে উঠি