সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭

আত্মহত্যা ও কিছু ভুল ধারণা



আত্মহত্যা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা—
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যা নিয়ে যারা বারবার কথা বলে তারা আসলে এমন কিছু কখনোই করবে না।
বাস্তবতা: প্রায় প্রত্যেক আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিই কোনো না কোনো সতর্ক হবার মতো সংকেত তাদের কাছের মানুষদের দিয়ে থাকেন।
যেমন—“ আমি না থাকলে তুমি বুঝতে পারবে।”
“আমার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।”
সাধারণ ভাবে বা যতটাই হাস্যচ্ছলে এজাতীয় কথা বলা হোক না কেনো এর পেছনে ভয়ংকর আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের থাকে তারা সাধারণত পাগলাটে/মানসিক রোগী হয়ে থাকে।
বাস্তবতা: আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের থাকে তাদের অনেকের মাঝেই মনস্ত্বাত্তিক বা মানসিক সমস্যার তেমন কোনো সিম্পটোম দেখা যায় না। তবে অবশ্যই তাদের মাঝে হতাশা-বিষাদ-এবং গভীর মন খারাপের ছাপ দেখা দেবে। তবে মনে রাখা উচিত যে গভীর বিষাদ অথবা হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি মাত্রই মানসিক রোগী নন।
প্রচলিত ধারণা: কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায় তাহলে তাদের সে পথ থেকে ফেরানো সম্ভব নয়।
বাস্তবতা: প্রচন্ড হতাশাগ্রস্থ বা আত্মহত্যা প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিও মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত ''জীবন আর মৃত্যু কামনা'' এই দুই ইচ্ছার দোলাচলে দুলতে থাকেন। তারা কখনোই মৃত্যু চান না, তারা চান কেবল তাদের যন্ত্রণাটুকু বন্ধ হয়ে যাক, মুছে যাক একেবারে।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যা যারা করে তারা কারও কাছ থেকে সাহায্য নিতে চান না।
বাস্তবতা: আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মাঝে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তিই বিগত ছয় মাস যাবৎ মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যার প্রবণতা যার মাঝে আছে তার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলে সে এতে আরও উৎসাহিত বোধ করতে পারে বা আইডিয়া পেতে পারে।
বাস্তবতা: এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলে তাকে আইডিয়া দেওয়া সম্ভব নয়। বরং উল্টোটাই সঠিক। আত্মহত্যা নিয়ে বিস্তারিত, খোলাখুলি আলোচনাই হতে পারে এসব ক্ষেত্রে কাউকে সাহায্য করার জন্য উত্তমপন্থা।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

ভাস্কর্য


আমাদের দেশে ভাস্কর্য নামক কিছু অদ্ভুত দর্শন জিনিস দেখা যায়। এগুলো যে আসলে ঠিক কি জিনিস সেটা যিনি তৈরি করেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেও শিউর থাকেন কিনা সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান। অবশ্য যে দেশে হাজার কোটি টাকার উড়াল সেতু বানিয়ে ফেলার পর টের পাওয়া যায়-- ইস সি রে! ভুল জিনিস বানিয়ে ফেলসি। সে দেশের ভাস্কর্যগুলো নিপুণ হাতে তৈরি হবে এমনটা আশা করাটা বাতুলতা বৈ কি!
কোনো এক অদ্ভুত কারণে এসব শিল্পীদের ধারণা জন্মেছে যে বকের ঠ্যাং কাকের ঠ্যাং জাতীয় কিছু একটা বানিয়ে রাস্তায় সাটিয়ে দিলেই সেটা উচ্চমার্গীয় শিল্প হয়ে যায়। দেশের বাইরে বহু ভাস্কর্য আমি দেখেছি। কিন্তু ভাস্কর্যের নামে আমাদের দেশে আসলে যে বস্তু তৈরি হয় সেগুলা আসলেই অনন্য। এগুলো কেবল আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে গু খরিদ করার নামান্তর মাত্র।
একটা উদাহরণ দেই-- সোনারগাঁ হোটেলের সামনে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বানানো হয়েছিল। প্রকান্ড বাঘ। বাঘের রং-- লালচে কমলা। বাঘের রঙ লালচে কমলা এটা বড় কোনো সমস্যা না। ক্ষমার যোগ্য অপরাধ। কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হলো, রয়েল বেঙ্গলের মাথা মেনি বেড়ালের মতো, আর শরীর সাপের মতো সরু। প্রতিদিন অফিস যাবার পথে মুখটা তেতো করে এই জিনিস দেখার অত্যচার আমাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রায় বছরখানেক। আমার অভিশাপেই কিনা কে জানে, সেই বাঘ কিছুদিন পর ভেঙে, চেগিয়ে গেলো, কেড়ে নিলো এক দরিদ্র ভ্যান চালকের জীবন।
এজাতীয় আরও হাজার হাজার ভাস্কর্য, মুর্তি, হাবি-জাবি কি সব যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের সর্বত্র। যেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এটা আব্রাহাম লিংকন নাকি শামীম ওসমান। সব একই। যাই হোক, হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলেন-- ''আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও সেটা আবর্জনাই থাকে।"এই সুত্র মেনে ভাস্কর্যগুলোর গঞ্জনসেবী ডিজাইনারদের আমার খুব বলতে ইচ্ছে হয়-- রাস্তাঘাটের জিনিসগুলোকে আপনারা ''বড় মাপের শিল্প'' বললেও সেগুলো আসলে আবর্জনা। শিল্প না।
আরেক দল আছে কপি-পেস্ট শিল্পী। যেমন, হাইকোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর মুর্তির ডিজাইন কপি মেরে শিল্পী ভাবলেন খুব নান্দনিক একটা শিল্প মেরে দিয়েচি মাইরি, বোকা বাঙ্গালগুলা টেরও পাবে না! হেহেহেহে...
কিন্তু এই বিদঘুটে শাড়ি পরিহিতা তলোয়ারধারী, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়া, মহিলা মূর্তিটা যে স্রেফ একটা হাসি উদ্রেক করা বস্তু তা কি কেউ এই শিল্পীকে দয়া করে বলে দেবেন? আমাদের ট্যাক্সের টাকা খরচ কররে এইসব যে বানান একটুও বুক কাঁপে না?
-
পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা সব কিছু নিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখন আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রায় বেশিভাগ ছাত্ররাই ব্যস্ত মূর্তি তৈরি, মূর্তি রক্ষা, ইঁদুর-বাঁদরের মুখোশের সাথে অমঙ্গল দুরীকরণ টাইপ ব্যপক গুরুত্বপূর্নে প্রজেক্টসমূহে। এই বাঁদরের মুখোশ পড়া ছাত্ররা আমাদের জাতীয় জীবনে ঠিক কী ভুমিকা রেখে ভবিষ্যত জাতিকে উদ্ধার করবে তা নিয়ে ইদানিং ভেবে উঠছি প্রতিনিয়ত। :/

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

হাজার বছরের ঐতিহ্য



ঠাডা পড়া রোদে উন্দুর-বান্দর-পেঁচা-বাঘ-ভল্লুক-তেলাপোকা জাতীয় কিছু বিকট চেহারার বস্তু নিয়ে হায়দার বাবার মতো হুদাই জামাতের সাথে সবাই মিলে হাটাহাটি করাটা নাকি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের দাদা-নানারা নাকি এগুলা করেই নাকি এই নিখিল বাংলার বুকে অনেকগুলা মঙ্গল আনসেন।
বুঝলাম হাজার বছর ধরে আমরা মুর্খ ছিলাম। আমাদের বুঝতে হবে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আমাদের মতো খুব একটা ভালো বিজ্ঞান করতেন না। আমাদের মতো তাদের হাতে এত এত কলা বিভাগ পাশ দেয়া বিজ্ঞানি তাদের ছিল না। তাই হয়তো এহেন-- অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক এবং মুর্খতার পেছনে যথেষ্ঠ অর্থ, শ্রম এবং মেধা তারা খরচ করতেন। কিন্তু আমরা এখন কেন এর পেছনের বিজ্ঞান টা ঠিক বুঝে উঠতে পারতেসি না সেটাই আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারতেসি না।
যাই হোক হাজার বছর ধরে বাঙালরা কৃষিকাজ করসেন, জাইংগার চেয়েও অধিক ছোট নেংটি পরে উদাস নয়নে নিম গাছের ডাল নিয়ে সকালবেলা দাঁত ডলেছেন, টাট্টি গাছে বসে প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে গিয়ে হাগু করে গেছেন দিনের পর দিন। পাইলসের রোগীরা বিনা চিকিৎসায়, অবহেলাতেই মারা গেছেন নীরবে।
কিছুদিন পর কি তাহলে হাজার বছরের দোহাই দিয়ে এহেন কম্মগুলোও আমাদের করা লাগবে? তওবা তওবা...আমাদের এভাবে মধ্যযুগীয় করে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা অবশ্যই অবিলম্বে খতিয়ে দেখা উচিত।
এমন প্রজন্মই কী চেয়েছিলাম আমরা? অনেক বিজ্ঞান করা, সকল বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের মধ্যমণি, বিজ্ঞানের জাদুকর আমাদের সকলের প্রিয় শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারেরা এখনও কেন চুপটি মেরে বসে আছেন তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। অন্তত ৭১ এর মতো খাটের তলা সেক্টরে বসেও একটা ডাক অন্তত তারা দিতে পারতেন। এখনও যে তাদের মতো মহানায়কেরা খাটের তলা থেকে কেনো বের হচ্ছেন না, কে জানে। স্ট্রেইঞ্জ!

রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭

সন্তুষ্টি




হাইস্কুলে পড়ার সময় তুমি ভেবেছিলে-- কবে যে কলেজে উঠবো, 
কলেজে ওঠে ভাবতে থাকলে-- আবার যদি হাইস্কুলে ফিরে যেতে পারতাম! 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আর তর সইলো না- কবে যে গ্রাজুয়েশনটা শেষ হবে, কর্মজীবনে ঢুকে আয়-উপার্জন করতে পারবো। 

গ্রাজুয়েশেন শেষে অভিযোগ শুরু করলে-- চাকরি নিয়ে, আর সেই সাথে আফসোস-- ইস! আবার যদি স্কুল জীবনটাকে ফিরে পেতাম!