বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খুচরো শব্দেরা

এই যে এমন তাড়াহুড়োয় বৃষ্টিরা চলে যায়, আমাদের অর্জন কিম্বা ধার করা শব্দেরা পড়ে থাকে অবহেলায়- ঘরে কিংবা মস্তিষ্কে। বৃষ্টিরা কি জানে আজ যে আমাদের ছুটি নেই?

----------


প্রতি বসন্তে আমি নিত্য-নতুন ফুলেদের দেখি। আদর সবুজ পাতাদের অনুভব করি।

কিন্তু এদের জায়গা করে দেয়া ঝরা পাতাদের আমি কিংবা আমরা দেখি না। কক্ষনো ফিরেও তাকাই না...


----------


নির্জনতার চাইতে ভয়ংকর কোন নেশা নেই! বড় কোন মাদক নেই...


--------- 



যেদিন সব কৃষকেরা মরে গেল, মাটির বুকে অঙ্কুর বেরুলো না কোন ফসলের, হাওয়ায় হাওয়ায় পরাগায়ণ ঘটলো না নতুন কোন ধানের; সেদিন লোকেরা বুঝতে পারলো কৃত্রিম উপগ্রহ আর নগর রেল খাওয়া যায় না।

-নেটিভ এমেরিকান প্রবাদ থেকে অনুপ্রাণিত।



----------



এই পৃথিবীটা সৃষ্টিকর্তা ডিজাইন করেছেন পরিবর্তনশীল করে। সবকিছু বদলে যাবে- এটাই নিয়ম, এতেই কল্যান।


গাছের পাতা, ফুলের রঙ, মধুর স্বাদ, চোখের নিচের টানটান চামড়া কোনোকিছু ধ্রুবক নয়। ধ্রুবক নয় চাঁদ-সূর্যের গতিপথটা পর্যন্ত।

গতকালের তীব্র ভালোবাসার মানুষটা আজ অবলীলায় বলে বসতে পারে 'অসহ্য তুমি', সাফোকেটিং...

পরিবর্তনের সাথে গলায় গলা ভিজিয়ে মেনে নিতে শেখাতেই মানব জনমের আনন্দ, সফলতা। যে যত পরিবর্তনশীল, সে তত সুখী।

ভালো থাকুক পৃথিবীর মানুষগুলো। নিজেদের মত করে। অন্ততপক্ষে নিজের কাছে সৎ থেকে বেঁচে থাকুক অনেকদিন....


আজ আমাদের বদলে যাওয়াতেই আনন্দ...

----



মানব মস্তিষ্ক বড়ই বিচিত্র! কখনো কখনো নিজের জানা অতি পরিচিত কথাগুলোও অন্য কারো মুখ থেকে শুনতে খুব খুব ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় কেউ একজন যদি এমন করে কথাগুলো আমাকে বলতো, কাঁধে হাতটা রাখতো। অতি গোপনে চেপে রাখা আমার দীর্ঘশ্বাসটা শুনে ফেলতো অসতর্কতার অভিনয়ে। ইস! ------ আমি বললাম: আমার চোখ দুটোর কী হবে? তিনি বললেন: পথের উপর স্থির রাখো। আমি বললাম: আমার কামনার কী হবে? তিনি বললেন: ওদের পুড়তে দাও। আমি বললাম: আমার হৃদয়ের ব্যাপারে? তিনি বললেন: এর মাঝে কী আছে? আমি বললাম: কষ্ট আর ব্যথা। তিনি বললেন: এগুলো থাকুক হৃদয়ের ভেতরেই। ক্ষতগুলো তো এমনই, এই ক্ষতগুলোই তোমার ভেতরে আলোর প্রবেশ ঘটায়। -জালালুদ্দিন রুমি




-----

হৃদয়ের অতি গভীরের মমতাময় কথা কিংবা ভয়ানক গোপন আর্তিগুলো প্রকাশের জন্য কখনো-কখনো আমাদের জ্ঞানত শব্দগুলোও অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ হয়ে পড়ে।
তবে আশার কথা হলো; বলতে না পারা শব্দ আর অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলোর কম্পিত তরংগমানের সবটুকু খবরই তিনি শুনতে পান, বুঝতে পারেন আমাদের বুকের প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কম্পনে কতটা গভীর সমুদ্র আমরা লুকিয়ে রেখেছি।
না চাইতেই যিনি আমায় সব দিয়ে রেখেছেন, তাঁর কাছে চাইলে অবস্থাটা কী হবে?
চাইতে হবে, কেবল এক রাতে নয়। রাতে। প্রতিরাতে। সব রাতে। যখন তিনি নেমে আসেন শেষ আসমানে। আমাদের অতি নিকটে। ডাকতে থাকেন পরম মমতায়-
" কে আছে, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে দেবো। কে আছে , যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।"
এমন রবের প্রতি কি আমরা অকৃতজ্ঞতা নই?


--------


"ইয়া আল্লাহ, আমি মরতে চাই! আমাদের কোন রুটি নেই কেন? আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাও যাতে আমরা রুটি খেতে পারি!"
-ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর এক সিরিয়ান শিশু।
আর আপনি বলছেন আপনার জীবনে অনেক অনেক কষ্ট?
বলুন, শুনে দেখি!

-------

অদ্ভুত না?
আজ হতে ঠিক এক বছর পর আজকের যে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণাটায় ভুগে আমরা হাহাকার করছি, সেই একই অপ্রাপ্তির স্মৃতি আমাদের মুখ টেপা হাসি আর নিজের কাছে নিজে বোকা হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম-- জীবনের মূহূর্তগুলো অনেকটা নদীর মতো। একই স্রোতকে আপনি দুবার স্পর্শ করতে কিংবা আগের মতো ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। জীবনের মূহুর্তগুলোও এমনই; যা চলে যায় তার উপর আমাদের কখনোই কোন নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্বের বাহাদুরি খাটে না।
যা যায় তার সবটাই চলে যায়, কিছুই বাকি থাকে না।কী
লাভ অপ্রাপ্তি আর হেরে যাবার হাহাকারে একজীবন কাটিয়ে দিয়ে?
সময়টা তো চলেই যাবে...