শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

দ্বিনী বিল গেটস





বিবাহের কথা উঠলেই আচমকা আমাদের ভাইয়েরা সব সাহাবী হয়ে ওঠেন। হৈ হৈ রব ওঠে-- এক সাহাবা স্রেফ কুরআন দিয়ে মোহর দিসেন। আজকালকার বেত্তমিজ দুনিয়া, ১০-১৫ লাখের নিচে কথাই নাই। বিবাহ কঠিন, অতি কঠিন! সমাবেশের বাকিরা মাথা নাড়েন-- ঠিক বলেছেন! ঠিক বলেছেন!
ইদানিং এসব শুনলেই আমি নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জাজমেন্টাল হয়ে উঠি
। মনের অনুবীক্ষণ যন্ত্রটা বের করে দেখতে থাকি তার মাঝে সাহাবাদের আর কোন কোন বৈষিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশ্বাস করুন--খেতে খেতে ভুড়ি ফুলিয়ে ফেলা ছেলেটার ভেতর আর তেমন কিছুই খুঁজে পাই না।
বিয়ের সময় মেয়েদের মোহর টা আল্লাহ তায়ালা ই নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং তা চাইবার সম্পূর্ন অধিকার তার রয়েছে। আপনার পোষালে দেখবেন, না পোষালে অন্য পথ খুঁজবেন। সব মেয়েরা "দ্বীনি বিল গেটস খোঁজে" জাতীয় বাণী কপচাবেন না প্লিজ। এটা চুড়ান্ত অসম্মান। আমি দেখেছি অধিকাংশ মেয়েরাই এমন টা চায় না। ব্যাপারটা আসে তাদের পরিবার থেকে। আর এই পরিবারগুলোর এমন ধ্যান-ধারণা জন্মেছে চারপাশে ঘুরঘুর করা বাটপার কিসিমের পুরুষ মানুষদের জন্যই।
অনেক ছেলেকে দেখেছি যারা বিয়ে বিয়ে করে মাথা কুঁটে মারা যাচ্ছেন কিন্তু কত টাকা জমিয়েছো বালক? জিজ্ঞেস করতেই, মাথা চুলকানো বেড়ে যায়। বিয়ে করবার আগের ধাপটা হচ্ছে একটা ছেলেকে ছেলের খোলস থেকে বের হয়ে পুরুষ হতে হয়। তাকে দায়িত্ব আর প্ল্যানিং করার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হয়।
প্রথম পদক্ষেপ-- মোহর ম্যানেজ করা। টাকা জমানো শুরু করুন; ৫০ টাকা করে হলেও। আল্লাহর দিকে এক পা গেলে তিনি ১০ পা বাড়ান একথা সত্য। কিন্তু সেই বাড়ানোটার ক্ষেত্রে কথা এবং কাজের মিল থাকতে হবে। অন্তরে আমি এক বুক বিয়ের খায়েশ নিয়ে বসে আছি, কিন্তু যদি এর প্রস্তুতির কথা আসলেই শিশু শিশু চেহারা করে রাখি তাহলে বুঝতে হবে আমি প্রস্তু নই। মানসিকতা তৈরি করতে হবে-- কষ্ট করার, কষ্ট পাবার।
এ অংশে এসে অনেকেই ঠোঁট বাঁকাবেন-- এহ! আসচে। নিজের বে হয়ে গেছে দেকে বড় বড় কতা! তাই আমার ব্যক্তিগত চেষ্টাটার অল্প একটু হাইলাইটস জানিয়ে নিজেকে সাফ রাখি-- যে সময়টাতে বন্ধুদের সবাই ঈদ-ঈদ রব তুলে এদিক-ওদিক টাকা উড়াতে যেত, সে সময়টাতে আমি ঈদের দিনেও অফিস করেছি; বোনাসসহ আরও ক'টা টাকা বেশি কামাবো বলে। একসাথে ক্লাস করেছি, পরীক্ষা দিয়েছি, চাকরিও করেছি। এদিক-সেদিককার ট্যুর আর খাওয়া দাওয়ার আউটিংগুলোতে টাকা বের করতাম খুব হিসেব করে। টাকা জমানো শুরু করেছিলাম খুব সামান্য সামান্য করে। এটিএম বুথে যেদিন দেখতে পেলাম টাকার সংখ্যাটা লাখ পেরিয়েছে, সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আমার বিবাহের কন্যার সন্ধান। (নিজ টাকার সাথে পরে আরও কিছু টাকা জোগাড়-যন্ত্র করে মোটামুটি একটা সম্মানজনক মোটাসোটা এমাউন্ট ই দিতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ)
ভাইদের যেটা বোঝা উচিত-- মোহর দিয়ে আপনি আপনার আসন্ন স্ত্রীকে সম্মান জানাচ্ছেন। আমরা মানি আর না মানি এর এমাউন্টের ওজন বাড়া-কমার সাথে সাথে মেয়েটার নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সমাজ সবার সামনেই তার একটা মর্যাদাজনক অবস্থান তৈরি হয়। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যখন সক্ষমতা দিয়েছেন তাহলে আপনার কৃপণতা করবার হেতু কি? যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা আপনার সর্বোচ্চ সম্মান আর ভালোবাসাটুকু দেখিয়েই স্ত্রীকে ঘরে আনুন, ইনশাল্লাহ আল্লাহ সহজ করবেন। দিন শেষে টাকাটা আপনার ঘরেই ঘুরে ফিরে চলে আসবে। আপনার অসুবিধার সময়গুলোতে আপনার দুখী দুখী চেহারাটা দেখে কিন্তু এই মেয়েটাই সবার আগে আপনার হাতে নিজের চেক বইটা তুলে দেবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন