সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭

হামিং বার্ডের গল্প



পুরোনো গল্প। পুরানো চাল বাড়ে ভাতে। আর পুরানো গল্প বাড়ে বয়ানে। তাই পাটি পাতুন, গায়ের চাদর ভালো করে মিশিয়ে নিন। এখন হবে পুরোনো এক গল্প--
একটা বনে আগুন লেগে গেছে। সমস্ত বন তোলপাড়, দিশেহারা প্রাণীরা সব এসে ভীড় করছে আগুনের চারপাশে। হা-হুতাশ চলছে।
এখন কী হবে? এখন কী হবে? সব তো শেষ।

হায় হায়!
বনের পাশেই ছোট্ট এক পাহাড়ী নদী। কোথা থেকে আধ ইঞ্চি সাইজের এক হামিংবার্ড ছুটে এলো হন্তদন্ত হয়ে-- তার ছোট্ট ঠোঁটে নদী থেকে নিয়ে আসা কিছুটা পানি। ফোঁটায় ফোঁটায় সে পানি হামিং ঢেলে দিতে লাগলো আগুনে। এরপর আবার ফিরে গেল নদীতে। সেখান থেকে আবার আগুনে। আবার নদীতে। এভাবে বিন্দু বিন্দু পানিতে সে নেভাতে চাইলো এক ভয়ংকর দাবানল।
প্রকান্ড দাবানলের সাথে হামিংয়ের এই অসম যুদ্ধ দেখে সবাই অবাক-- পাগল ব্যাটা করে কী? সবচাইতে ছোট্ট যে পাখি হামিং সে নেভাচ্ছে আগুন? ছু! ছু!
 তাচ্ছিল্যভরে একজনের জিজ্ঞাসা -- "তুমি এটা কী করছো হামিং?"।
ব্যস্ত ছোট্ট পাখিটির ব্যাকুল উত্তর-- "আমার সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব, আমি ততটুকুই করছি। এর বেশি করার ক্ষমতা তো আমার নেই। "
অ-নে-ক কিছু করার ক্ষমতা দিয়ে হয়তো আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠাননি। কিন্তু যতটুকু দিয়েছেন ঠিক ততটুকুর জবাব দিতে কী আমরা প্রস্তুত? ততটুকু করবার চেষ্টা কী আমরা করছি? নাকি ছোট আমল বলে এড়িয়ে যাচ্ছি? অথবা ছোট কোনো দান মনে করে গা করছি না?
টানাটানির সংসারে হয়তো ৫০০ টাকা বাঁচিয়ে ভাবলেন এই টাকা দানে আর কী এমন লাভ হবে? কী এমন দারিদ্র বিমোচন হবে দেশ ও জাতির? কিন্তু রাসুল(সা) যখন একটা খেজুরের বিচি দিয়েও হলেও জান্নাত নেবার চেষ্টা করতে বলেছেন তখন অবশ্যই আমাদের আমলগুলো ছোট নয়। আমাদের চেষ্টাগুলো তুচ্ছ নয়। তুচ্ছ মনে করাটাই শয়তানের ধোঁকা।
আমরা প্রত্যেকে জিজ্ঞাসিত হবো আমাদের নিয়াতের জন্য, আমাদের আয়ত্বে থাকা কাজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার জন্য। ফলাফল? সেটা কখনো মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি, থাকবেও না। যেটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেটা হলো নিজ অবস্থান থেকে প্রতিটি কাজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করা। তা যত ক্ষুদ্রই হোক। যত তুচ্ছই হোক।
পারবো আমরা? একেকজন একেকটি হামিং হয়ে যেতে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন