শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

আমার নাগরিক জোছনা





শহুরে চাঁদের মধ্যে মেকি মেকি একটা ভাব থাকে। ভাগ্য ভালো হলে এছাদ ওছাদের ফাঁক গলে উঁকি দিলে তার দেখা পেলেও পাওয়া যেতে পারে। আর দেখা গেলেও তেমন একটা আরাম নেই; টিউব লাইট আর জোছনার আলো পৃথক করাটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।
শহুরে চাঁদ দেখলে আমার মনে হতে থাকে পাশের বাড়ির ৬ তলা ছাদটায় ডেকোরেটর ওয়ালারা বাঁশ দিয়ে বাতি জাতীয় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছেন। ও বাড়ির বিশেষ অনুষ্ঠানটা শেষ হলেই তড়িঘড়ি আবার খুলে নিয়ে চলে যাওয়া হবে ডেকোরেটর ওয়ালাদের ঠেলায় চড়িয়ে।
জোছনা দেখতে হয় খাঁ খাঁ খোলা মাঠে। সবুজ বিস্তৃত প্রান্তরকে মনে হতে থাকবে সাদা চাদরে ভেজানো একটা নদী। কিংবা নদীর বুকে--ছোট্ট ডিঙি তে বসে। চারদিকে থৈ থৈ পানি আর সে সাথে পাল্লা দেওয়া থৈ থৈ জোছনা। নৌকায় মাছ রাঁধার ব্যবস্থা থাকলে ভালো। কড়কড়ে মাছ ভাজার সাথে জোছনা মিশিয়ে খাবার স্বাদটা অপার্থিব। কিংবা জংগলের ভেতর। "আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে" টাইপ ব্যাপার। ওপরে তাকালে ঠিকঠাক চাঁদটাকে দেখা যাবে না। কখনো ডাল আবার কখনো পাতার বিদ্রোহ আড়াল করে দেবে নিশ্চুপ চাঁদটাকে। সে ফাঁক গলে তৈরি হবে আলোছায়ার রহস্যময়, নি:সীম এক সৌন্দর্য....
জল নেই, উন্মুক্ত প্রান্তর নেই, নেই আড়ালে ঘেরা জংগল। আমার আছে ছাদ.. শহুরে একঘেয়ে তেতলার বিরক্তিকর ছাদ। তা ই সই। দূরে গজল বাজছে। সম্ভবত পংকজ উদাস। মশারাও তার সাথে পাল্লা দিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছে। তাদের দ্বৈত সংগীতে ঝিমুনি এসে যাচ্ছে। তবু চোখ টানটান করে বসে আছি, ওপরে ভাড়ায় খাটা চাঁদটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। বিশেষ কোন অনুষ্ঠান শেষে খুলে নেবার অপেক্ষায় সে অপেক্ষিত.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন