মোটিভেশনাল জীবন...



অদ্ভুত একটা সময়ে বেঁচে আছি। অতৃপ্ত আত্মার খেলা সর্বত্র। এত এত কম্প্যারিজনের খিস্তি-খাউরে নিজ আত্মা, নিজ জীবনটাকে নিয়ে ভাববার ফুরসৎ নেই কারও।
স্বামী-স্ত্রীতে, বন্ধুত্বে, ভ্রাতৃত্বে সবখানে কী যেন একটা মিসিং। কি যেন একটা নেই...কি যেন একটা...অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে হতে কখন যে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"- এর প্রকাশ ছেড়ে কোলন ডি আর কোলন অ্যাস্টেরিক্সে আটকা পড়ে গেছে আমরা তার থোড়াই খবর রাখি।
আমার প্রিয় কাজ মানুষ দেখা। দেখি। ঘুরেফিরে দেখি। বারবার দেখি। শুনি। ঘুরেফিরে শুনি। বারবার শুনি। কথা। কত কথা। অনেক কথা। কারও কারও অনুভূতিতে বিলীন হই কিছুটা সময়ের জন্য। যার কাছেই যাই, যেখানেই দেখি, অল্প একটু মনোযোগে ভেতর টা উঁকি দিলেই পরিষ্কার দেখি হাহাকার। এক বুকভরা হাহাকার। আমার মনটা বিষিয়ে ওঠে দিন দিন। প্রতিটাদিন।
প্রায়ই আমাকে শুনতে হয় আপনি ভাববাদী। ভাবের কথা বলেন, দুঃখের কথা লেখেন কেবল। আমি আমার সাথে যে এক পৃথিবী রহস্য আর মানুষের গোপন দীর্ঘশ্বাঃসের বাক্স নিয়ে বসে আছি, সেটা কেউ বুঝবে না কোনোদিন। আমার কবরে ঠিক কতগুলো মানুষের গোপন কষ্টের সাক্ষী হয়ে আমি যাবো সেটা হয়তো কেউ কোনোদিন টেরও পাবে না। একেকটা দিন আত্মাটা বিষিয়ে থাকে।
বিশ্বযুদ্ধগুলোর পর পর গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রচন্ড ডিপ্রেশন কাবু করে ফেলেছিলো। রাজনৈতিক সমস্যা যে যুদ্ধের সুচনা করেছিল, সে যুদ্ধ প্রভাব ফেলেছিলো সমাজে। রাজনৈতিক সমস্যাটা সীমাবদ্ধ থাকেনি রাজনীতিতে। ছড়িয়ে পড়েছিলো প্রতিটা পরিবারে, প্রতিটা মৌলিক পারিবারিক সম্পর্কে। মানবতা-আদর্শ-নীতিবোধের খুঁটিগুলো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়ে গেলো গোটা সমাজে।
আমাদের বর্তমান এই সমাজটার জন্য কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। নীতি-উৎসাহ-জীবনবোধ এসবকে আমরা গলা টিপে হত্যা করেছি টেলিভিশন -মিডিয়া, ইন্টারনেট কিংবা ফেসবুককে ঠিকাদারি দিয়ে। কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারিনা, জানিনা, নিজেকেও হয়তো না।
মোটিভেশনাল স্পিচ, ভিডিও, লেখা, লাইক, শেয়ার বিক্রি হয় আজ অর্থে বিনিময়ে। ভাবা যায়? একটা মানুষের মন কতটা বিষিয়ে গেলে, কতটা একাকি হয়ে গেলে তাকে অর্থের বিনিময়ে মন ভালো করা কথা কিনতে হয়?

কিন্তু তবু শান্তি টা কোথায়? আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে ডাকাতিয়া নদীর তীরে বসে সুপারি বিক্রি করা আমার দাদাকে কে মোটিভেশন দিয়েছিলো এগারো সন্তানকে এত ভয়ানক সুন্দর করে মানুষ করতে? এই জীবন সায়াহ্নে এসে কোনোদিন একটা সেকেন্ডের জন্যও তাকে নিজের জীবনটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করতে হয়নি। হতাশ মনে হয়নি। জীবন ছিল সরল, মানুষগুলোও। ডাকাতিয়া নদীটা নেই। প্রায় শুকিয়ে মরে গেছে। মরে গেছে আমাদের ভেতরটাও। শুকনো খড়খড়ে মাটির মতো।
শান্তি পেতে চাইতে হয়। চোখটা বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নিজেকে আশ্বস্ত করতে হয় আসলেই আমি শান্তি চাই! লিখতেও বিরক্ত লাগছে। লাভ কী? এর বিরুদ্ধেও একদল দাঁড়িয়ে যাবে। আমাদের সবার ই কিছু একটা বলার আছে। বোঝার কিসসু নেই। পড়া শেষ হবার আগেই অস্থিরতায় লাইক পড়বে। স্ক্রল করে দ্রুত আরেকটা লেখায় চলে যেতে হবে। অস্থিরতা...অস্থিরতা...অস্থিরতা...

কেউ বদলায় না আসলে। এইসব মোটিভেশনাল কথা-বার্তা কেবল দিনশেষে নিজেকে বুঝ দিয়ে সময় কাটানোর ই নামান্তর মাত্র। ধুর!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ