উদাসীন বৃষ্টিতা



সারাটাদিন গুমোট মেঘলা আকাশ। ঘরের ফ্যানটায় কোনো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার গতি ধীর। এতটাই ধীরে যে এর বাতাস শরীর পর্যন্ত এসে পৌঁছে না। স্থিতি আর গতির মাঝামাঝি একটা ব্যাপার। তবু নিজেকে প্রবঞ্চনা দেবার জন্য চালু ফ্যানের দিকে মনো্যোগ সহকারে তাকিয়ে গা জুড়ানোর চেষ্টা করছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। অতি বৃদ্ধ এই ফ্যানটার দিকে কখনও সময় করে তাকানো হয়নি। আজকের গুমোট হাওয়া আর সেই সাথে ফ্যানের যৌথ স্ট্রাইক বাধ্য করলো তাকে দেখতে।
রোজাদারের দুআ নাকি কবুল হয়। বৃষ্টির দুআ করতে থাকলাম। দুআ কবুল হলো। ঝির-ঝির বৃষ্টিতে গুমোট আবহাওয়া নিমিষেই গায়েব। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। আর ঠিক এই মূহুর্তে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র বৃষ্টির ছাঁট আমার মুখ, ল্যাপটপ সব ভিজিয়ে দিচ্ছে। ভিজুক! তবু বসে থাকবো। ভালো লাগছে খুব!
আমার টেবলটা জানালার পাশে। বৃষ্টি হলেই সেই জানালা দিয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ ভেসে আসে। অপু ভাইয়ের ভাষায়-- "এটা জিওসমিনের গন্ধ আরমান। বৃষ্টির সময় যখন এর উপর পানি পড়ে তখন বিক্রিয়া ঘটে; এর ফলে বাতাসে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। এটা মাটির গন্ধ না। মূর্খের মতো এটাকে মাটির ঘ্রাণ বলবা না। তোমরা কিছুই জানো না, কি একটা অবস্থা।"
আমি ঘাড় কাত করি-- "ঠিক, পানির মতো অতি তুচ্ছ ঘটনা। এটাও জানি না। ছিহ!"
জ্ঞানী লোকের জিওসমিন ই হোক কিংবা মুর্খ লোকের মাটির সোঁদা গন্ধই হোক। এই ঘ্রাণটা সবসময় আমাকে একটা আনন্দময় বিষন্নতায় ভোগায়। এই একজীবনে কত স্মৃতি, কত আনন্দ-বেদনার গল্প আমার এই বৃষ্টিকে ঘিরে...বলতে চাই একটা সময়, বলবো হয়তো কোনো একদিন...বাদামের ঠোঙ্গাকে সাথী করে...
একটা বই পড়ছিলাম। ভয়াবহ ট্রাজেডি। নায়কের কিডনির অবস্থা যা তা, এর মধ্যে চাকরি যাই যাই অবস্থা। মন খারাপের মাত্রা দ্বিগুন হলো। বই বন্ধ করে বাইরের বৃষ্টিতে হাত বাড়ালাম। রমাদানের আজ হয়তো শেষ দিন। তারাবীর নামাজ টা আর পড়া হবে না। মাসজিদ গুলো খাঁ খাঁ করবে তৃষ্ণার্ত মানুষের মতো। ইফতারের দাওয়াতে যাওয়া হচ্ছে না। ঈদের অপেক্ষায় থাকার অস্থির আনন্দটা আর বোধ হচ্ছে না। ক্ষমা পেয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা আর অনুভূতিটা হয়ে যাবে ভোঁতা। ঈদ আসছে এই আনন্দের চাইতে ঈদ এসে একদিনে ফুড়ুৎ করে চলে, এই ভাবনাটা আমাকে আরও বেশি অস্থির করে তুলছে।
ফেইসবুক আমাকে বদলে দিয়েছে। মন খারাপের দিনগুলোর কথা একটা সময় আমার কালো চামড়ার ডায়েরিটাকে বলা হতো। এখন বলা হয় ফেসবুক আর ব্যক্তিগত ব্লগগুলোকে। নিজের বিষন্নতা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেবার মাঝে একটা পাশবিক আনন্দ লাভ আছে। আরামদায়ক পাশবিকতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ