রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

নিঃস্বার্থ চাঁদ



লিখতে বসেছি। বহুদিন পর। ঔদাসিন্যের সময়গুলোতে লিখতে বসিনা অনেকদিন। ভুল হলো কোথাও? বসিনা? নাকি পারিনা? নিশ্চিত নই সত্যিই!
একজন বললেন, আপনার সাহিত্যভাব আছে, একটা পজেটিভ টাইপ উপন্যাস লিখে দেন। ছাপাই!
নিজের সাথেই নিজে যুদ্ধ করি
। পজিটিভিটির কিছু কি বিদ্যমান আছে এখনো বুকের কোথাও? হাতরাই। প্রচন্ড অন্ধকার...সর্বত্র... হতাশার সত্বাটা জয়ী হয় লেখকসত্ত্বার উপর। লেখনীগুলো পড়ে থাকে খুব গহীনে। ভাবি, সাজাই, শব্দবুনি; বোনা শেষ করে সিদ্ধান্ত নিই আমার যোগ্যতা নেই এসব বলার। কেন অহেতুক অনধিকার চর্চা?
অপবিত্র নোংরা একটা আত্মার সাথে প্রতিদিন বসবাস করছে এই শরীরটা। প্রতিদিনের অদ্ভুত ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকাটাতে খুব আশাপ্রদ কিছু খুঁজে পাই না বহুদিন।
আজ লেখক সত্ত্বাটাকে একপ্রকার জোর করে জয়ী করা গেল সুতীব্র যন্ত্রণার মেজাজে। এই যন্ত্রনাগুলো খুব আপন হয়ে উঠছে দিনকে দিন।
কী লিখবো? পজিটিভিটিগুলো সেই কবে নখের আঁচড়ে ফালাফালা করে ফেলে রেখে এসেছি কোথায় যেন ঠিক মনেও নেই। পঙ্গু আত্মাটাকে নিয়ে হেঁচড়ে-ছিচঁড়ে অদ্ভুত এক বেঁচে থাকা। নিজের কাছেই বারবার নতজানু হয়ে পড়ে থাকা।
খুব ভালো করে বেঁচে থাকতে হলে আপন করে ভালোবাসতে পারতে হয়। ভালোবাসতে জানতে হয়। আমার নিয়তি সর্বদা সকলের ভালোবাসাকে ফেলে পালিয়ে যাবার মাঝেই, প্রত্যখানের আমেজেই...
আমি কেবল পারি নিজেকে খুব আপন অমানিশায় ঠেলে দিয়ে চুপচাপ সুতীব্র দুখ:বিলাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে। কত মেঘ জমিয়ে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ তৈরি করে রেখেছি আমার ব্যক্তিগত আকাশটাতে তার খবরাখবর কোন পত্রিকার প্রেস রিলিজে কি আসবে কোনদিন?
জানি না এই মনটা আবার কোনদিন সুস্থ হবে কিনা। নানুবাড়ির কালো জলের পুকুরপাড়টার কৃষ্ণচুড়া গাছটার নিচে বসে লালচে ফুলের পাপড়ি গুলো দাঁতে কাটা হবে কিনা, হঠাৎ ভেসে যাওয়া জোছনা দেখে সুখ সুখ দীর্ঘশ্বাসে আরেকটা রাত কাটবে কিনা।

শহরের ঘাম-ধুলো নাকি মানুষকে প্রচন্ড যান্ত্রিক করে দেয়। কই এত বছরেও তো দিব্য কষ্টগুলো অনুভব করি, শসা কাটার মত ফালাফালা হয়ে যাওয়া হৃদয় নিয়ে কারণে-অকারণে অভিমান করি।
বোধহয় একজন দক্ষ নগরবাসী হয়ে উঠতে পারিনি এখনও। কিছুই করা হল না ঠিকঠাক!
ক্রমাগত পাপের মাঝে ডুবে ডুবে আত্মাটা আত্মহত্যা করে যাচ্ছে প্রতিদিন। ক্লান্ত শরীরটা প্রতিদিন যুদ্ধ করে এক অদ্ভুত পশু মনের সাথে। এখানে কেউ রক্ষা করতে আসেনা, আসে কেবল খইভাজা হাতে তালিয়া বাজাতে। প্রবল অসহায়ত্ব নিয়ে সাহায্য খুঁজি, এদিক-ওদিক। ভুলে যাই জাহাজ ডুবলে উদ্ধারকারী জাহাজ আসে, মানুষ ডুবলে কেউ আসে না।
রাত টা খুব বেশি অদ্ভুত। যেই তারাটার আলো ঠিক এই মূহুর্তে আমি দেখতে পাচ্ছি, হতে পারে এখন সে তারাটা আর অস্তিত্বেই নেই। সহস্র বছর আগে তার বিকীর্ণ করে যাওয়া আলোতে মুগ্ধ হচ্ছি আমি। হারিয়ে যাওয়া তারাটার কথা ভেবে মনটা কেন যেন আরও বিষন্নতায় ডুবে যাচ্ছে। তার অস্তিত্ব নেই বলে আমার মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু যারা আছে? তাদের দেখে বাহ সুন্দর বলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি কিছু পরেই। আচ্ছা আমরা মানুষদের ক্ষেত্রেও কি এমনটা করি? সমস্ত ভালোবাসা তুলে রাখি স্রেফ হারানো মানুষদের জন্য?
শহরে আজ ভয়াবহ একটা চাঁদ উঠে বসে আছে। অসুন্দর শহর টাতে এত সুন্দর চাঁদ ওঠার প্রয়োজন নেই। তবু সে কাউকে পরোয়া করে না তার স্রষ্টা ছাড়া। সে তার আলোতে সমগ্র বিশ্বচরাচরকে আলোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার সেই ভাসিয়ে দেয়া আলোটাও নাকি আবার ধার করা। চিরজীবন নিজে আধারে থেকেও অন্যকে বুক পেতে আলোকিত করতে পারে কজন মানুষ? কজন পারে এমন নি:স্বার্থ হতে?
একজন বিষাক্ত মানুষ হিসেবে। এই নি:স্বার্থপর চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকাটা হয়তো ঠিক হচ্ছে না। বরং মুখ ফিরিয়ে নিই। এর চেয়ে বরং আকাশের অন্য প্রান্তে আমার ছেলেবেলার হারানো কোনো একটা তারার আলোকে খুঁযে দেখা যাক। যার হয়তো আজ আর অস্তিত্ব নেই। তবু বিকিরণের খেলায় আমায় মুগ্ধ করতে চাইছে এখনও...

খুব ভালোবেসে...পরম মমতায়....

২টি মন্তব্য:

  1. হারিয়ে গেছিলাম কিছু সময়ের জন্য.... অপবিত্র নোংরা একটা আত্মার সাথে প্রতিদিন বসবাস করছে এই শরীরটা"" ��

    উত্তরমুছুন
  2. আল্লাহুম্মা বারিক ভাই

    উত্তরমুছুন