দুপুরের ঘ্রাণ


প্রিয় স্বাতী,
কখনও কি খেয়াল করে দেখেছো? মধ্য দুপুরের রোদে যে একটা গন্ধ আছে?কেমন নেশাধরা উদাসি একটা গন্ধ। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের নৈঃশব্দ্যের গন্ধটা মাথার ভেতরটা কেন যেনো এলোমেলো করে দিতে চায় বারবার। বুকের ভেতরটায় ছুরি চালিয়ে ফালি ফালি করে দিতে চায় হৃদপিন্ডটাকে।
নির্জন আবাসিক এলাকাটার গলিতে হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা রিকশার ছন্দময় টুংটাং। গলির মোড়ের মোটর গাড়ির হুসহাস। আর ওপাশে গজিয়ে ওঠা বস্তিটা থেকে কোনো এক শিশুর শৈশব ঠেকিয়ে দিতে চাওয়া প্রৌঢ়ের হৈ হৈ চিৎকার। অথবা পেছনের মেহগনি গাছটায় নতুন বাসা বাঁধা কাকটার ছন্দময় বিরতিতে ডেকে চলা-- ক কা। এতটুকু ছাড়া সময়টা বেশ নির্জন, শুনশান, বিষন্ন!
অনেক কিছু লেখার ছিলো, বলার ছিলো। ইচ্ছে করছে না। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা। গত রাত থেকে এ যন্ত্রণা আমাকে প্রায় অজ্ঞান করে ফেলতে চাইছে। আমি টানটান চোখে সাইদুরের দোকানের চা গিলি। কাজ হয় না। ভালোও লাগে না ইদানিং শরীরটার দিকে মনোযোগ দিতে। বেঁচে থাকলে মনোযোগ দিয়ে যত্ম নেবার আরও ডজন খানেক বিষয় আছে। আমার এই 'আট কুঠুরি নয় দরজাটার' দিকে ঠিকঠাক পাহারা বসানোর সময় বা সুযোগ দুটোর কোনোটাই এমূহুর্তে নেই।
নিজেকে বুঝ দিলাম, ''ভালো লাগছে না কিচ্ছু'' প্রজাতীর কথাগুলো স্রেফ আঁতলামি। বই পড়তে ভালো লাগে না, পাতা উল্টোই। আকাশ দেখতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে, দুপুরের আকাশ, ঝলমলে রোদের আকাশ। তাও হয় না। বাসায় ফিরে বিছানায় শরীর এলিয়ে আধমরার মতো সিলিং দেখি। এই অতিপরিচিত সিলিংটার পলেস্তারা গতরাতে খসে পড়েছে, পরিস্কার করা হয়নি। থাকুক পড়ে, কি এসে যায়? এরা আমার অতি পরিচিত পলেস্তারা, থাকুক না।
অনেক কিছু লেখার ছিলো, বলার ছিলো। লিখতে বিরক্ত লাগছে। তোমার কেনা নীল রঙয়ের ভারী পর্দাগুলো টেনে দিয়ে এখন আমার পৃথিবীটা অন্ধকার করে দপদপ করতে থাকা শিরা-উপশিরাদের অনুভব করবো। আমার মৃত্যুর প্রথম রাতটাতে হয়তো, এর চাইতেও অনেক ভয়াবহ এক অন্ধকার ঘরে থাকতে হবে। আচ্ছা, তখন এই বুকটাতে অনেক আতঙ্ক থাকবে, তাইনা?
প্রশান্ত হতে হবে, যে করেই হোক। চেষ্টার সবটুকু ঢেলে দিতে পারিনি এখনও হয়তো, শিখতে হবে, পারতে হবে। না পারলে, পারার অভিনয় করে যেতে হবে।
আমার চিঠিগুলোতে কখনও বিদায় সম্ভাসন থাকে না, তুমি জানো। ক্লান্তিকর বিদায় ভালোও লাগে না। বিদায় গুলো হোক ছোট গল্পের মতো--
"শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।"
ইতি,
আমি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ