“জ্বর সারলে রেল দেখতে যাব”--পথের পাঁচালিতে দূর্গা, অপুকে বলেছিল। তারপর? রেল সে দেখল না কখনও। দেখার আগেই চলে গেল অচেনা গন্তব্যে।
বুকটা হঠাৎ হাহাকার করে উঠল। আমার কন্যা রাত ন'টার দিকেই ছাদে এসেছিল, এই ‘ব্লাড মুন’ দেখবে বলে। আকাশে মেঘ ছিল, কিছুই দেখতে পায়নি। হতাশ হয়ে নেমে এসে আমাকে জানালো--"চাঁদ তো লাল না বাবা, দেখলাম না তো কিছু।” একটু পর অভিমানী মুখে ঘুমাতে চলে গেল।
আর আমি? আমি দাঁড়িয়ে আছি এই অপূর্ব সৌন্দর্যের সামনে। চাঁদ তার রক্তিম আলো ঢালছে, আর আমি একা সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছি, যেখানে তার দেখতে পাওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে বেশি, আমার চেয়ে ঢের বেশি বিস্ময় ভর করত তার চোখে । মনে হচ্ছিল, এই সৌন্দর্যটা যেন আমার জন্য অন্যায়, যেন চাঁদ নিজেই এই পক্ষপাত করেছে।
একই দৃশ্য কীভাবে একই সাথে আনন্দ আর বিষন্নতা জাগাতে পারে! চোখ ভরে এই অপার্থিবতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইছিলাম, অথচ বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছিল
বারবার।
দূর্গা রেল দেখার স্বপ্নে বাঁচত, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই জীবন তাকে কেড়ে নিল। আমার কন্যার জন্য এই চাঁদও আজ একরকম দূর্গার মতো অপূর্ণ থেকে গেল। জীবন সবসময় কি তবে এই অপূর্ণতাকেই আঁকড়ে ধরে রাখে?
হয়তো তাই। এই পৃথিবীতে সৌন্দর্য যতটা দেয়, ঠিক ততটাই কেড়েও নেয়। বিস্ময়ের পাশে শূন্যতা রাখে। এই চাঁদই একই সাথে আমাদের মুগ্ধ করে, আবার এই চাঁদই আমাদের ফেলে দেয় গভীর বিষন্নতায়।
চুপচাপ রেলিংটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, পাশের বাড়ির জানালায়, ওদিকের ছাদে, এপাশের বারান্দায় কিছু এলোমেলো মানুষ; তারাও চাঁদের আলোয় ভিজতে এসেছে;
আর আমি মনে মনে আকূল হয়ে দুয়া করছি--
হে আল্লাহ, হে রাব্বুল আলামিন! তুমি যেন অন্তত আমার কন্যার জীবনটাকে এই অসম্পূর্ণতার শূন্যতায় ভরিয়ে দিও না। তাকে অন্তর্ভুক্ত কোরো সফলকামদের কাতারে। চিরটাকাল। সবসময়। আমিন।

0 মন্তব্যসমূহ