মৃতনদী




শৈশব থেকেই আমি বেশ মানবদরদী। মানবতার কল্যাণে আমি একবার এক মহতী পদক্ষেপ হাতে নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আমার নিজের জন্য একটি পার্সোনাল পুকুর খনন করা হবে। সে পুকুরের পানি দিয়েই আমার দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানো হবে।
বাড়ি হতে খানিক দূরেই এক বিশাল পুকুর(বাবার কর্মস্থানের কারণে সেসময় ঢাকার বাইরে থাকতাম)। তার এক পাশের ঝাঁড়ের নিচে মাছ কাটার বটি এনে এক বিঘত পরিমাণ গর্ত করে ফেললাম।
পানি দিলাম এক বদনা। হয়ে গেলো আমার পার্সোনাল পুকুর। এ জগতের কোনো সৃষ্টিকর্মেই আরাম নেই। নিয়মানুসারে আরাম পেলাম না। যতবার পুকুরে পানি ঢালি ততবারই পানি শুকিয়ে যায়। এক বদনা পানি ঢেলে বদনা টয়লেটে রেখে আবার ফিরে আসতে আসতেই দেখা গেলো পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। বারবার পানি ঢেলেও ফলাফল শূণ্য ,পরিবর্তন নেই, অবস্থা একই।
আমার গবেষক মনের ধারণা হল, নতুন পুকুর-- তাই এমন হচ্ছে। মাটি যখন পানি খাওয়ার ক্যাপাসিটি হারিয়ে ফেলবে, তখন নিশ্চই আমার পুকুর কানায় কানায় ভরে উঠবে, সেখানে মাছেরা ছোটাছুটি করবে, আমি গা-গোসল ধুতে পারব পাড়ে বসে।
যাই হোক, মাটির পানি খাওয়ার ক্যাপাসিটি পূরণ করার উদ্দেশ্যে আমার পুকুরে বালতি বালতি পানি ঢালা হল, প্রসাব ধরলে প্যান্ট খুলে টয়লেটের দিকে না দৌড়ে পুকুরের দিকে দৌড়ানো শুরু হল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ফলাফল শূন্য। পুকুর ভরাট হচ্ছে না। ব্যর্থ হয়ে শেষমেষ শিশু বয়সের সুপারম্যান বাবার শরণাপন্ন হলাম। তিনি ঘোষণা করলেন সূর্যের আলোতে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই পুকুর হচ্ছে না।
আমার লজিকের মাথা বেশ পরিষ্কার। সুপারম্যানের জবাব আমার পছন্দ হলো না। ব্যথিত কণ্ঠে বললাম, বাসার সামনের এতো বড় পুকুর; ওটাতে সূর্যের আলোও পড়ে বেশি। তাহলে ওটা না শুকায়ে আমার ছোট পুকুর শুকায় ক্যান?  
শেষমেষ সূর্যের আলো হতে পুকুর রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পাতা দিয়ে তৈরি দেওয়াল আর ছাদ তৈরি করে বানানো হল ইনডোর পুকুর। তবুও ব্যর্থ। আমার ছোট পুকুর তার বুকে পানি ধরে রাখতে পারলো না কিছুতেই। ছোট্ট আমার হিসেব মিললো না কিছুতেই....
এতগুলো বছর পর এখন আমি উত্তাল নদীর শুকিয়ে মরে যাওয়া দেখি। তাতে দেওয়াল দিতে পারিনা, দিতে পারিনা ছাদ।
খুব খুু-ঊ-ব কষ্ট হয় এক সময়কার মরে যাওয়া নদীগুলোর দিকে তাকাতে। ইসসস! এই মরে যাওয়া নদীগুলোর জন্য যদি শুধুমাত্র ঐ সূর্যটাকেই দোষারোপ করা যেত। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ