জন্মোৎসব কখনো আমাকে আনন্দিত করতে পারেনা। আমার প্রতিটি জন্মদিনে আমি হিসেবের খাতা নিয়ে বসি। মানুষ যদি গড়ে ৫০-৬০ বছরে বাঁচে,তাহলে আমার হাতে আর ত্রিশ কি বত্রিশ বছর সময় আছে। তবুও সেটা অনিশ্চিত।
আমার প্রতিটা জন্মদিনে আমার মনে হয়েছে সময় শেষ হয়ে আসছে। বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি,অতি দ্রুত হয়তো চুলগুলো পেকে যাবে,হয়তো বিছানায় পড়ে যাব,এক গ্লাস পানির জন্যও হাহাকার করে ভিক্ষে চাইতে হবে অন্যের কাছে।
ঘন বরষায় আগারগাঁও সিগন্যালে ছোট্ট কোন বাচ্চা মেয়ে আমার দিকে ছুটে আসবে না এক গুচ্ছ কদম হাতে,হাসিমুখে বলবে না,ফুল লইবেন? সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে আর দেখতে পাবো না মমতাময়ী মা মসলা কম ভালবাসা বেশি দিয়ে আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করে বসে আছেন। তীব্র জোছনার রাতগুলোতে বাড়ির ছাদে বসে থাকা হবে না। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে কিছু অসাধারন মানুষকে আমি কাছে পেয়েছিলাম। তাদের আর দেখতে পারবো না,একটু ছুঁতে পারবো না। অবশ্য তারা সব্বাই থাকবে,বিরিয়ানি থাকবে,থাকবে জোছনা-তীব্র জোছনা,বরষার দিনগুলোও থাকবে,থাকবে কদম ফুল হাতে বাচ্চা মেয়েটিও,থাকব না শুধু আমি। আর আমার এই থাকা না থাকার মাঝের ব্যবধান কেবল সময়। অতি স্বল্প কিছুটা সময়। কি অদ্ভুত!
বিস্ময়কর! তবে আমি যে সম্পূর্ণ একা থাকব এ ভাবানাটায় কিঞ্চিৎ ভুল আছে। আমার সাথে সাথে থাকবে ঘোর অন্ধকারময় একটি মাটির কক্ষ; আর কিছু লাশখেকো পোকা,আমাকে ক্রমাগত তারা কুটকুট করে খেতে থাকবে,হাত খাবে, পা খাবে,মজা মজা করে আমার চোখ দুটোও খাবে। জন্মদিনের দিনগুলোতে আমি অস্থিরতা অনুভব করি। ভয়াবহ অস্থিরতা।
হে আল্লাহ, আর-রাহমানুর রাহিম আমাদের সেদিন তুমি রক্ষা করো,সাহায্য করো। তুমি ছাড়া কোন সাহায্যকারী আমাদের কখনো ছিলোও না, থাকবেও না। তোমার রহমত থেকে কখনো,কোনদিন আমাদের বঞ্চিত করো না । আমিন
0 মন্তব্যসমূহ