মক্কাজুড়ে হইচই। আব্দুল্লাহর ছেলে নাকি নবী হয়ে গেছে, বলে বেড়াচ্ছে সে নাকি আল্লাহর রাসুল। মাথা খারাপ হয়েছে নিশ্চিত। আরে না! না! জিনে ধরছে মনে হয়। এহেন শত অপবাদ, গুজব আর মিথ্যারোপ যখন রসুলুল্লাহ(সা:) এর প্রতি চাপানো হচ্ছিল; ঠিক সে সময়টাতে বিমর্ষ, ভারাক্রান্ত রাসুল(সা:) এর সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম বয়স্ক মানুষ হিসেবে যে মানুষটা নির্দ্বিধায়, সন্তুষ্টচিত্তে শাহাদার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছায়ার মত পাশে থেকে তাকে সাহাস জুগিয়ে গেছেন তিন হচ্ছেন-- আবু বাকর বিন আবু কুহাফা।
একই সাথে কোমলতা আর দৃঢ়তার অসাধারণ সংমিশ্রণ ছিল আবু বাকর(রা:) এর চরিত্রে। রসুলুল্লাহ(সা:) এর মৃত্যুতে সাহাবীগণ এমনকি কঠোর ব্যক্তিত্বের অধিকারী খোদ উমার(রা:) পর্যন্ত মুষড়ে পড়ে তরবারি নিয়ে যখন বেরিয়ে পড়লেন সে সময়টাতে প্রখর বুদ্ধি এবং বিচক্ষনতার সাথে সবকিছু নিয়ন্ত্রনে আনেন-- খলিফাতুর রসুলুল্লাহ (শুধুমাত্র তাঁকেই খলিফাতুর রসুলুল্লাহ উপাধিতে ডাকা হয়, বাকি তিন খলিফা আমিরুল মু'মিনুন নামে পরিচিত)।
তাঁর চরিত্রের অসাধারণ দৃঢ়তার আরেকটি ছাপ পাওয়া যায় মুতা অভিযানে শহীদ সাহাবিদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে যাওয়ার জন্য রসুলুল্লাহ(সা:) এর ঠিক করে যাওয়া বাহিনীর নেতৃত্বে রদবদল আনতে চাওয়া উমার(রা:) দাঁড়ি মুট করে ধরে রাগান্বিত কণ্ঠস্বর-- "মুহাম্মাদ(সা:) যাকে নিয়োগ দিয়েছে তাকে আবু বাকর অপসারণ করবে?" এছাড়াও যাকাত অস্বীকারকারিদের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণার কাহিনি বোধ করি আর নতুন করে জানাবার কিছু নেই।
অপরদিকে কোমলতা ছিল তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাবুক যুদ্ধে তাঁর সর্বস্ব দান, অলিতে-গলিতে ঘুরে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের খোঁজ নেওয়া, খলিফা হয়েও মানুষের ঘর ঝাড়ু দিয়ে দেওয়া পর্যন্ত বিনয় আর সরলতা খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর জীবনীতে।
এই মানুষটার চরিত্রের গুণাবলী নিয়ে দিনের পর দিন, লেখার পর লেখা প্রচার করে গেলেও হয়তো আমরা তাঁর যথাযথ মর্যাদা দিতে পারবো না। আমরা কেন? খোদ রসুলুল্লাহ(সা:) আবু বাকর(রা:) সম্পর্কে বলে গেছেন-- " আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি, কিন্তু আবু বাকরের ইহসানসমূহ এমন যে তাঁর ইহসান আমি পরিশোধ করতে অক্ষম। তাঁর প্রতিদান আল্লাহ দেবেন।"
0 মন্তব্যসমূহ