রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সস্তার রক্ত


ফেসবুকে বিকৃত মৃতদেহ দেখলে একটা সময় ভীত হতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠতো কখনো-সখনো। এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি। ভোঁতা অনুভূতিগুলো ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দেখে এখন আর তেমন একটা ব্যথিত হয় না। কৃত্রিম গ্লানিবোধ থেকে নিজেকে অনেকটাই মুক্ত করে নিয়েছি।
মৃতদেহের ছবি দেখি। কিছু ভিডিও।
রক্ত। ফ্লোর জুড়ে পুডিংয়ের মত চাপ চাপ রক্ত। অসীমে তাকানো ছোট্ট শিশুটার নিষ্প্রাণ চোখ। ধুসর চুলে সিলিঙয়ের পাউডার-বালি। পেছনে ভেঙে পড়া দেয়াল। বেরিয়ে পড়া রডে লাল জামার অংশ। গাড়ির কাঁচ। একটা পানির বোতল। রক্ত। রক্তের উপর পায়ের ছাপ। অসংখ্য।
মানুষ ছুটছে। কেনে আঙুলে পলিথিন। বুকে আকঁড়ে ধরা রক্তাক্ত শিশু। চোখে শুকিয়া যাওয়া বহু পুরোনো আতংক। কেমন অস্থির আতংক। সবাই ছুটছে। পালাচ্ছে।
ওপর থেকে হঠাৎ গর্জন। মেশিনগান। কিছু ধুলি ঝড়। আতংকের কিছু চিৎকার। ছোট চিৎকার। বড় চিৎকার। একজনের মা'কে খোঁজা। দুর্বল স্বর। অত:পর নীরবতা। প্রশান্তি। তীব্র ঝড় শেষের নীরবতা পৃথিবীময়।
ফেসবুক স্ক্রল করে নিচে নেমে যাই। শ্রীদেবী মারা গেছেন। আফসোস! আহারে... পরক্ষণে সব ভুলে যাই।
ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপ হাতে জানালায় দাঁড়াই। ঢাকার চারকোণা বনসাই আকাশ। ওপাশের জানালায় আলো জ্বলছে। নিচের রাস্তায় রিকশার টুং-টাং। জানালার বাইরে একটা সুপারি গাছ। বাতাসে একটু কাঁপছে কিছু পাতা। দূরে এলেক্ট্রিকের তারে একটা পাখি। সন্ধ্যার পাখি। মুক্ত পাখি।
এখন আর চোখের কোণটা চিকচিক করে না। আলাউদ্দিনের বাকরখানি আর মুসলিমের রক্ত অতি সস্তা এই পৃথিবীতে। মেনে নেয়াটা বেশ ভালো করে শিখে গেছি। মানিয়ে নিয়েছি চুপচাপ। স্ক্রল করে চোখ বুজে ফেলি খুব যত্ন করে।
সিজদাহ....তাহাজ্জুদ...বিশ্বাসের সাথে দু'আ। খুব কঠিন কিছু?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন