বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮

ধর্ষিতার পোশাক



খোসা ছাড়া আমের উপর মাছির বসে থাকা দেখিয়ে একজন ফেইসবুকার প্রমাণ করে দেখালেন— “ ধর্ষণের জন্য পোশাকই দায়ী।" ওপাশ থেকে নিশ্চিত উত্তরের অপেক্ষায় থাকুন—তাহলে দু বছরের শিশুটার কি দোষ ছিল? এধরণের আলোচনাগুলো আসলে ডিম আগে না মুরগী আগে টাইপের। অবান্তর। এইসময়ে নেভার এন্ডিং এসব বিতর্ক করাটা দেশ ও জাতীর সময় নষ্ট ব্যতিত আর লাভজনক কিছুই
নয়।
কোন কথাটা কখন বলা উচিত সেটা বোঝা একটা জরুরী বিষয়। মনে করেন কারও ঘুষখোর বাবা মারা গেলো, আপনি সেই মূহুর্তে তার কানের কাছে গিয়ে ঘুষখোরের করুন পরিণতি ও জাহান্নামের বর্ণনা শীর্ষক এক আলোচনা শুরু করে দিলেন। ব্যাপারটা দাওয়া হবে না। বরং হিতে বিপরীতটাই ঘটবার সম্ভাবনা তীব্র।তেমনি ধর্ষণ হবার সাথে সাথে ধর্ষিতা মেয়েটার পোশাক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ধর্ষককে তার অপরাধের একটা জাস্টিফিকেশনই দেয়। তাই ধর্ষন হবার সাথে সাথে মেয়েটা হিজাবি আপু নাকি নন- হিজাবি আপু তার গবেষণায় নামাটা বিশ্রী একটা ব্যাপার।
যে সমাজের একটা পুরুষ ছোটবেলা থেকে নারী বলতেই লাক্স অথবা ফেয়ার এন্ড লাভলীর চামড়া ব্যবসায়ী ছিপছিপে শরীরের মেয়ে বোঝে আর বদনাম হওয়া মুন্নী নামের মেয়েটাকে বদনাম হবার খুশিতে সবার সামনে নাচিন-কুদন করে বিকোতে দেখে-- সে সমাজের পুরুষদের কাছ থেকে খুব ভালো কিছু আশা করাটা বোকামি। নারীর সম্মান আর সফলতার মাপকাঠি ঠিক করে দেয় দেহ বিকোনো লাক্স সুন্দরীরা।
তাদের সংজ্ঞায় সফলতা আর আত্মবিশ্বাস রয়েছে কেবল ৩৬-২৪-৩৬ এর মেসারমেন্টে।
এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা একটা পুরুষের কাছে কেবল ভোগের ব্যাপার, আনন্দের ব্যাপার। পর্ণ, সিনেমা কিংবা টিভিসি সর্বত্র মেয়েগুলো শরীর খুলে জানান দিচ্ছে তাদের কাজ কেবলই ভোগ হওয়া। আনন্দ দেয়া পুরুষদের।
দিনরাত চোখ দিয়ে ভোগ করে যাওয়া এই পুরুষগুলোর চোখ শান্তি পায়, শান্তি পায় না শরীর। তার উত্তেজিত শরীরটার অস্বস্তি আর অস্থিরতা বাড়তে থাকে প্রতিদিন। একটু একটু করে। গতকালের পর্ণে দেখা মেয়েটাকে কাছে পাওয়া যায় না। কিন্তু বাসায় একা থাকা পাশের বাড়ির মেয়েটাকে তো পাওয়া যায় তপ্ত কোন দুপুর বেলায়। সে মেয়েটা বোরখা পরে কি পরে না, তা এই পার্ভাটেড ছেলেটার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এটা নারী দেহ। ভোগ্য পণ্য। তার চোখ নারীকে শ্রদ্ধা করতে শেখেনি, শিখেছে কেবল ভোগ করতে।
একটার পর একটা ধর্ষণ হয়। গ্রাম্য প্রহসনের বিচারগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসায়। বড়জোর পাঁচ-দশ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ কিংবা কানে ধরে উঠবোস, এই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। মামলা কোর্টে উঠলেও একটা মেয়ের জীবন নিয়ে মজা মজা খেলার তুলনায় সে শাস্তি অতি নগন্য। বিচারহীনতা যখন একটা দেশের নিয়ম হয়ে যায় তখন লুকিয়ে থাকা পশুগুলো সামনে আসতে থাকে একের পর এক।
সামনে অন্ধকার আসছে। গাঢ় অন্ধকার! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন