বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৮

হিংসে হয়?





আজকালকার বাঙালিদের একটা বড় অংশ তাদের ব্যক্তিগত জীবনে চরম পর্যায়ের বিষাদগ্রস্থ। এদের না আছে ভালো কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা না আছে ভালো কোনো চাকরি, না আছে সুন্দরী বউ, না নিজের বাড়ি-গাড়ি, ধর্ম-নৈতিক শিক্ষা এসব থেকে হাত ধুয়ে বহুদূরে তো চলে গেছে বহুকাল আগেই। যে শিক্ষাটা আছে এদের তা হলো-- "I am gpa 5" কিংবা "H2O অর্থাৎ ধানমন্ডির রেস্টুরেন্ট" প্রজাতির। এদের হাতে টাকা নাই, ঘরে সুন্দরী বউ নাই, কাজ করার চাকরি নাই, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নাই, নাই স্বপ্ন , নাই নতুন কিছু করার ক্ষমতা, ইচ্ছা কিংবা যোগ্যতা।
তাদের ব্যক্তিগত জীবনের এই না পাওয়া, ব্যর্থতা, অক্ষমতার গল্প কাউকে এরা শোনাতে পারে না, এই আক্ষেপ আর বেদনার কিছুটা ফেসবুকে প্রকাশ পায় অন্যের আনন্দ দেখে। যখন এরা দেখে সাকিবের বউ সুন্দরী, কিংবা ম্যাচ জিতে কেউ ফ্ল্যাট পেয়ে গেলো আবার কেউ কোটি টাকার পুরস্কার, তখন এদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। প্রচ্ছন্ন মনের হা-হুতাশ থেকে এরা ভেবে বসে থাকে ক্রিকেটাররা রক্ত-মাংসের মানুষ নয়। অন্য কিছু। সবকিছুর উর্ধ্বে থাকা এক মহামানব। এই হতাশা আর হিংসা থেকে এদের চরিত্রহরণ করে "আমি এদের চাইতে উত্তম প্রজাতির মানুষ" জাতীয় একটা মিথ্যে প্রবোধ নিজেদের মনকে দিয়ে এরপরই এদের রাতগুলোতে চোখের পাতা লাগে।
ক্রিকেটাররা কুরবানি করে গরু জবাইয়ের ছবি দিলে সমস্যা, আবার পুজোর ছবি দিলে সমস্যা, বোনের সাথে ছবি পোস্ট করলে তার বোনের ইজ্জত খেয়ে দেয়া এদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আবার কেউ বিয়ে করলে তার বউ কেন অসুন্দর তা নিয়ে তার বউয়ের গুষ্টি উদ্ধার করাটা এদের কাছে ফরজ কাজের কাছাকাছি দায়িত্ব; ঐদিকে আবার যার সুন্দরী বউ আছে সে কেন পর্দা করে না তা নিয়ে এদের মাঝে ব্যপক চাঞ্চল্য। খারাপ পারফর্ম করা ক্রিকেটারের স্ত্রীকে ফোন করে গালি দেবার ব্যাপারেও এরা বেশ পারদর্শী। বিয়ের পর আবার কোনো ক্রিকেটারের বাচ্চা জন্মালেও সমস্যা। বাচ্চা কেমনে হইলো এগারো মাসে?
এদের আসলে আফসোস টা কোথায়? বাচ্চা হবার প্রক্রিয়াটা তাদের দেখানো হয়নি বলে? নাকি অন্যকিছু? সাকিব আল হাসান দর্শকদের কেন গালি দেয় আর তামিম ইকবাল কেন ব্যাট দিয়ে দর্শক পেটান সেটা এখন আমি বুঝি। তাও ভালো তাসকিন ছেলেটা তো তার বাবা হবার ব্যাপারে আপনাদের কাছে কৈফিয়ত দিয়েছে। আমার স্ত্রীর দিকে কেউ আংগুল ওঠালে আমি হয়তো এতক্ষণে গায়ে আতর মেখে গুলি করে দুই-চারটা মেরে দিতাম।
ক্রিকেটাররা কোন সুপার হিউম্যান নন যে এদের ব্যক্তিগত ভুল-ত্রুটি থাকবে না। আবার এরা সমাজের নীতি শেখানোর শিক্ষকও নন। এরা নর্তকী টাইপ, এদের কাজ বিনোদন দেয়া। এরা বিনোদন নেন, বিনিময়ে টাকা নেন। এদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শিক্ষা নিতে গেলে বা এদের মহামানব ভেবে বসে থাকলে সেটা আপনার সমস্যা। তাদের না।
যে ছেলেটা গতকাল বাবা হল সে ছেলেটাকে যখন দেশের মানুষের কাছে তার বাবার প্রক্রিয়া ও স্ত্রীর চরিত্র রক্ষার্থে জাতির কাছে জবাবদিহী করতে হয় তখন সেটা কী ভয়াবহ কষ্টের হতে পারে তা এইসব লো লাইফ ক্রিয়েচাররা কোনোদিন কল্পনা করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ এদের বিয়ের জন্য কেউ মেয়ে দেয় বলেও মনে হয় না। স্ত্রীর ভালোবাসা, প্রথম সন্তান আগমনের সুখ কি সেটা বোঝার ক্ষমতাটুকু এদের নেই। এরা তারাই যারা টয়লেটের দরজায় আগে মনের নোংরা ত্যাগের চেষ্টা করতো। পার্থক্য হল আগে করতো টয়লেটে এখন করে ফেইসবুকে।
নিজের ব্যর্থতা-অযোগ্যতা-হতাশা ঢাকতে অন্যকে গালি দেয়ার চাইতে সহজ আর আরামের কোন বস্তু আছে বলে মনে হয় না। এজন্যই সেফাতউল্লাহর মতো পাগলও বলে-"কি? হিংসে হয়?"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন