শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

বিজ্ঞান একা লড়েছিল...


গ্রামের সেই শঠ পন্ডিতটার কথা মনে আছে? যিনি অন্য পন্ডিতের সাথে বিতর্কে গিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলো- “I dont know ” এর বাংলা কী? 

ইদানিংকালের অতি সুশীল-নাস্তিকদের প্রশ্ন করার ঢং অনেকটা এরকমই। তারা এমন সব প্রশ্ন আর আবেগী আর্গুমেন্ট তৈরি করবে যেসব প্রশ্নেরই আসলে কোন ভ্যালিডিটি নেই।   

একটা উদাহরণ দিই- ধরা যাক আবু ফুলান সাহেব একটা ছবি আঁকলেন। কালজয়ী চিত্র কর্ম। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ছবিটি কে এঁকেছে আমরা সবাই এক বাক্যে গলা ফাটাবো- আবু ফুলান, আবু ফুলান। এরপর যদি প্রশ্ন করা হয় আবু ফুলানকে কে এঁকেছে? তাহলে প্রশ্নটা কি কোনভাবেই যৌক্তিক হবে? ছবির স্রষ্টার ক্ষেত্রে- 'আঁকা' ক্রিয়াটিই প্রযোজ্য নয়। এরকম ইনভ্যালিড জাতের প্রশ্ন করতে হরহামেশাই এনাদের করতে দেখা যায়।  ইদানিং একটা কথা খুব চাউর হচ্ছে- 

"যদি বেঁচে যাও এবারের মত,

যদি কেটে যায় মৃত্যুর ভয়,

বিজ্ঞান একা লড়েছিল জেনো

মন্দির মসজিদ নয়।”

এক্ষেত্রেও সেই একই পুরানো কাসুন্দী। আর্গুমেন্টটাই ইনভ্যালিড। মাসজিদ, মন্দিরের কাজ মানুষের চিকিৎসা করা নয়। চিকিৎসা করার কাজ ডাক্তারের, হাসপাতালের, প্রাণ বাঁচানোর, সাহায্য করার ব্যাপারে তাদের নাম আসবে। অন্যদের নয়। একইভাবে একজন ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট কিংবা উকিল কেন এই সংকটে লোকের জীবন বাচাননি সেটা নিয়েও আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না। তাদের দিকে কেন লোকের জীবন তারা বাচাননি এই প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দিতে পারেন না। যার যা কাজ সে সেটা করবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। এভাবেই দুনিয়া চলে।  এখানে বিজ্ঞান আর ধর্মকে একসাথে টেনে এনে পান্তাভাতের সাথে ঘি চটকে খাওয়ানোর চেষ্টা করানোটাই মহা-মূর্খতার সামিল।

দ্বিতীয়ত, এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসটি ল্যবে কালচার করা হয়েছিলো। অর্থাৎ এই যে বিপর্যয় এর জন্মটাই হয়েছে অপ-বিজ্ঞান কিংবা অতি বিজ্ঞানের কারণে। এছাড়াও গত কয়েক শতকে বহুরকমের রোগ-শোক-দুর্ভিক্ষ-মহামারী-যুদ্ধের অন্যতম প্রধাণ কারণ ছিল বিজ্ঞানের যথেচ্ছ ব্যবহার। 

প্রকৃতি আর প্রাণীদের বাসস্থান ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে  পরিবর্তন প্রকৃতিতে আনার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বহু রোগ। বহু সমস্যা। বিজ্ঞান থেকে বিমুখ থাকতে হবে কিংবা বিজ্ঞান একটা দুই শিংওয়ালা আস্ত দানব এমন কিছু বলছি না। বলছি এই পৃথিবীর জন্য, মানুষের জন্য বিজ্ঞানেরঅবশ্যই দরকার আছে। কোন রকম বিতর্ক ছাড়াই এটা  মেনে নিতে হবে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে পৃথিবী যত রকম ভয়াবহ বিপর্যয়, যুদ্ধ, রোগ-শোকের মধ্যে দিয়ে গত কয়েক শতক ধরে যাচ্ছে তার সবকিছুর মূল খুঁজতে গেলে কিন্তু এই বিজ্ঞান ব্যাটাকেই খুঁজে পাওয়া যাবে। 

তাই আহাম্মকি কথা বার্তা বন্ধ করে কোয়ারাইন্টাইনে বসে আল্লাহ-বিল্লাহ করুন। কারণ এইসব অতি আবেগী কথাবার্তা যারা ছড়াচ্ছেন ভাইরাসটা তাদের ধরে জ্বর, হাগু ছুটিয়ে দেয়া শুরু করলেই দেখবেন বিজ্ঞান জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। চিকিৎসা নাই। তখন তো মাসজিদেও যাইতে পারবেন না। সেইটার আবার দরজা বন্ধ! মহা মুসিবতে পড়ে যাবেন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন