মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০

ভেজা কাকের চিঠি

সুনয়না,

আরে কী হলো? হাসছো কেন?ধুর! হাসি থামাও তো।

জানি বরাবরের মতোই ধরে ফেলেছো এই ঘন বরষা দেখামাত্রই তড়িঘড়ি তোমাকে লিখতে বসে গেছি।
সবসময়ের মতোই হয়তো এটাও বলে বসেছো এতক্ষণে- "উফ, তুমি খুবই প্রেডিক্টেবল''। ইদানিং এই
প্রেডিক্টেবিলিটির ঘেরাটোপে পড়ে নিজেকেই নিজের প্রায়ঃশই অসহ্য লাগে।

করোনার আতঙ্কে অনলাইনে বাসার জন্য সকালে বেশ কিছু অর্ডার করেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি
দু বস্তা হাতে ডেলিভারির ছেলেটা বৃষ্টির মধ্যে জুবুথুবু দাঁড়িয়ে আছে। আমার মনটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো।
সেই সাথে একটা অদ্ভুত লাইন মাথায় ভাজতে থাকলো-"ভেজা কাক হয়ে থাক আমার মন"।

আচ্ছা বলো তো- মন আবার ভেজা কাক হয়ে থাকে কীভাবে? আমি তো আবার কবিতা-টবিতা ঠিকঠাক
বুঝি না। এটা আবার তোমার সাবজেক্ট। বুঝিয়ে দিও তো সময় হলে।

জানো সুনয়না? ইদানিং আমি প্রচন্ডভাবে এস্কেপিস্ট হবার চেষ্টা করছি। কোন বড় বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা কিংবা
অস্থিরতা কাজ করলেই অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করে দিচ্ছি– সাথে সাথেই
খারাপ লাগাটা কমে যায়। যা হবার ছিল তা হবেই, যা ঘটার ছিল তা ই হয়েছে। আমার তাতে কী? যা খুশি হোক,
আমি এমনই থাকবো। চুপচাপ, নিরিবিলি। ভুলে যাবো। ভুলিয়ে রাখবো! নিজেকে।

ভুলিয়ে রাখতেই হয়তো ভেজা কাক নিয়ে ভাবতে বসেছিলাম। মারাত্মক রোমান্টিকতায় ভরপুর একটা দুপুর।
স্বপ্ন বুনেই চলেছি জানালার পাশে বসে। আর প্রবল ঝমঝম বৃষ্টির শব্দের ফাঁকে ফাঁকে নিজের গুনগুন মনের
গানটা শোনার চেষ্টা করছি। পারছি না। জানালার ওপাশের নিচতলার দোকানগুলোর টিনের চালে ঝম ঝম করে
বৃষ্টি ফোঁটাগুলো কি নির্দয় ভাবে আছড়ে পড়ছে। এই তীব্র পতনও মনে কি এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। কি
অদ্ভুত বিস্ময়কর জীবন আমাদের।

আচ্ছা, তীব্র বেদনায় মনটা ভিজে গিয়ে যখন ঈষৎ কেঁপে কেঁপে ওঠে সেটাকেই কি বলে-- ভেজা কাক হয়ে
থাক আমার মন? লাইনটার রহস্য বোধহয় উদঘাটন করেই ফেললাম। কে জানে!

নাহ, এইসব ভাববাদী লাইনটাইন নিয়ে আর কথা না। চুপ যাই। এমনিতেই এই ফেসবুকের যুগে মানুষ ভয়ংকর
রকম অস্থির। এইসব ব্লগ আর বড়সর কলেবরের লেখা-টেখা আবার বোর করে দিতে পারে তোমায়। আচ্ছা
খেয়াল করে দেখেছো তুমি ঠিক কতটা অদ্ভুত? কোনদিন আমায় বললে না এই যে এত এত চিঠি লিখে তোমার
কাছে কাছে বকবক করি। কেমন লাগে তোমার? আচ্ছা বাদ দাও, বলতে হবে না। তোমার বলা আর না বলার
অপেক্ষা আমি আর কোন কালেই করেছিলাম?

একটা কথা জানো, ইদানিং হুটহাট মনে হয় আমি কেমন যেন একটা যন্ত্রমানব হয়ে যাচ্ছি। আগের মত খুব
তীব্র ভাবে অনুভূতিগুলো কেন যেন আর স্পর্শ করতে পারি না। এই যে বৃষ্টি হচ্ছে, জানো? আমাকে এটা আগের
মত করে কেন যেন ছুঁয়ে যায় না… আমার হৃদয় অবধি যেতে পারেনা বর্ষাধারার শীতল অনুভূতিখানি…

ঠিক আগের মতন করে অনুভব করিনা কোন কিছুই… কেন এমন হয়ে যাচ্ছি বলতে পারো? বলতে পারো, আমি
কেন আমার কথাগুলোকে কিছুতেই ব্যক্ত করতে পারছিনা ইদানিং… আমার ভেতর হতাশা ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু
বকা খাওয়ার ভয়ে তাকে ব্যক্ত করতে পারছিনা…

আমি জানি, আমি বদলে যাচ্ছি। এমনটা তো কখনও আমি চাইনি। কিন্তু দেখো যা চাইনি, ঠিক সেসব হয়েই
বসে আছি। চেয়েছিলাম খুব শুভ্র-সুন্দর একটা মানুষ হব। হতে পারিনি। ক্রমাগত জঞ্জাল আর অন্ধকার এসে
ভরিয়ে দিচ্ছে জীবনটাকে। এইসব জঞ্জাল আর অপূর্ণতাকে এড়িয়ে গিয়ে অন্যকিছু যে করব, উপায় নেই।
ক্রমাগত কিছু দুর্গন্ধ এসে জানান দিয়েই যাবে- যা করেছি, ভুল করেছি। জীবন ভুলময়। ভুলে ভুলে ভুলান্নিত!

আমি সেই আগের আবেগপ্রবণ বোকাসোকা ছেলেটাই থাকতে চাই… কারও স্মরণে বিবশ হতে চাই। তোমার
হাসিমুখ দেখে চুপটি করে বোকাবোকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকতে চাই অপলক। আমি বড় হতে চাইনি, চাইনি
বদলে যেতে!!

এস্কেপিস্ট হয়ে সবকিছু থেকে ভুলে থাকার অভিনয়টাও করতে চাইনি। 

নাহ! লেখাটা শেষ করতে হবে। ঠিক এখনই! এই মূহুর্তে! কি লিখতে বসেছিলাম, আর কিসব লিখে চলেছি।
কেমন যেন ভারাক্রান্ত, অস্থিরতার আর হতাশার কথা। একটা সত্যি কথা বলি – আমার ইদানিং খুব করে মনে হয়,
আমার বুঝি আর লেখার কিছুই নেই, আমার লেখনি স্তব্ধ হয়ে যাবে, থেমে যাবে একদম… নতুন অনুভূতি নেই,
নেই কোন ভালোবাসা আর ভালোলাগাদের দল…

আমার হয়তো আর তোমাকে লেখা হবে না সুনয়না।

অনেক অনেক ভালো থেকো, কেমন? আর একটু পারলে দুয়া করো আমার জন্য প্লিজ।

জানোই তো, স্রেফ একটা প্রশান্ত আত্মা হতে চেয়েছি আমার পুরো জীবনভর।  অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্য নয়,
শুধু নির্ঝঞ্ঝাট একটা জীবন… দোয়া করো  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন সেটাই দেন আমায়। আমি
সুখের স্পর্শ পাবই ইনশাআল্লাহ দেখে নিয়ো…

এই জীবনে না পাই, অনন্ত জগতে আমার সুখ হবেই। 

শেষান্তে,
পথহীন আমি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন