হঠাৎ হঠাৎ দিনগুলো কেমন অসহ্য রকমের বিরক্তিকর হয়ে যায়। এই যেমন আজকে। এই বিরক্তির দিনগুলোর নিয়ম হচ্ছে কোন কাজই ঠিক ঠাক মত হবে না। দুই যোগ দুই চার মেলাতে ক্যালকুলেটর টিপেও ভুল করে পাঁচ লিখে ফেলা হবে। উনত্রিশে পা দেয়া ঝরঝরে শরীরটাও কাজে সায় দেবে না। কাজের চাপ আর দুপুরের ক্ষুধার আধিক্যে মেজাজ তিরিক্ষি হতে হতে পাড়ি দেবে অনন্ত-নক্ষত্র-বিথী। কাছের মানুষগুলোর সাথে
কথা কাটাকাটি হবে, ইচ্ছে হবে সব ভেঙ্গেচুড়ে বিলীন হয়ে যাই। হারিয়ে যাই।
কি সব হাবিজাবি যেন লিখতে বসেছিলাম। বিক্ষিপ্ত মনে সেটাও ভুলে গেছি।
জীবনে প্রথম যে মৃত্যুটি দাগ কেটেছিল মনে, তা ছিল “রফিকে”র মৃত্যু। আগের দিন বিকেলে বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে কান্না-- "পা টা কেটে দেখ তো সৌরভ ভেতরে এত ব্যাথা ক্যান?"
ক্যান্সার ছড়াতে ছড়াতে প্রায় পঁচে গলে যাওয়া শরীরটায় সে কী তীব্র যন্ত্রণা! পরদিন ওরা চিটাগাং চলে গেল। আমার সাথে ফোনে শেষবারের মত কথা হলো ফোনে। এটাই নাকি তার শেষ কথা। এরপরের ঘটনাক্রম-- শরীরের অবনতি, হাসপাতাল যাওয়া, গলা কাটা মুরগীর মত তড়পাতে তড়পাতে মারা যাওয়া। আমি শুনতে পেয়ে কেমন যেন সেদিন অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম। এক অন্য আমিকে আবিষ্কার করলাম সেদিন। তীব্র আতঙ্কে আমি আমার গভীর ভালোবাসার মানুষটাকে শেষবারের মতো দেখতে গেলাম। যেন কিছুই ঘটেনি, কিসসু না! মুখ চোখ যথাসম্ভব শক্ত করে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। জানালার গ্রিল আকঁড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চাপলাম। আচ্ছা আমার মৃত্যুতেও কি এমন কষ্ট হবে?
জীবনটা আসলে গড়পড়তা। একটু উঠা-নামা হয়তো আছে, আর আছে বেঁচে থাকা। চোখ ধাঁধাঁনো অনেক কিছুই হয়ত আছে এখানে, কিন্তু সব গুলোর পেছনেই লুকিয়ে আছে অজস্র পরিশ্রম, ঘাম আর হাসি-কান্নার গল্প। আবেগের স্থান অতি সামান্য এখানে।
আমি খুব....খুব... ভালো আছি বৃষ্টি মাখা রোদ্দুর। বাতাস কেটে ঘুরতে থাকা ছোট্ট কাগুজে ওয়াইন্ডমিল। দূরের মাঠের ছোট্ট ঘাসফুল।
ভালো আছি নুড়িপাথর, সোডিয়াম রাতের ভুতুড়ে মায়া। আধ খাওয়া চাঁদ।
ভালো আছি বারান্দা-টবের মৃতপ্রায় জারভেরা, লাউয়ের ডগা, শ্রীমঙলের জীবন বাবু।
টেবিলে তুখোড় আড্ডা, রাত করে ঘরে ফেরা, মায়ের ভ্রুকুটি।
ভালো আছি অজস্র কথা, ধীর পায়ে হেঁটে চলা, অবসন্ন শরীরে ঝিমি মেরে বসে থাকা।
পেট্রোল পোড়া ঘ্রান, ন্যাপথলিন ভাজা গন্ধ,
ভালো আছি কাঁচের চুড়ি, দু টাকার পাইপ আইসক্রিম.....আমি ভালো আছি....
0 মন্তব্যসমূহ