বেঁচে থাকার গান

 

নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। কদিনের তীব্র কাঠফাটা গরমের পর আসা এই নিয়মিত বর্ষনে প্রায় সবাই আপ্লুত। ডজনখানেক বৃষ্টিবিলাসী পোস্ট চোখে পড়লো ফেসবুকে। সারাদিন কাঁচ- কংক্রিটের বস্তিতে থেকে আমার আজকাল বৃষ্টিকে খুব একটা চেনা হয় না।  


একজন বললো হাতিরপুলে নাকি ঢাকার সেরা মমো পাওয়া যায়। চলেন খেয়ে আসি। সেন্ট্রাল রোডের রাস্তায় পানি জমে একাকার অবস্থা। ওপাশের বাসাটা থেকে ডাটাশাক আর শসার ছিলকে রাস্তায় পরে আছে, এসব দেখে ঢাকার রাস্তার বৃষ্টি আজকাল মনটা আরও বিষিয়ে দেয়। আমার পুরোনো হয়ে যাওয়া নীল পাঞ্জাবিটা আধ ভেজা করে বাড়ি ফিরতে হলো। একে আবার শুকিয়ে ধুতে হবে। একটাই পাঞ্জাবি, যত্ন খুব দরকার ওর। সবকিছুর যত্মের দরকার হয়। এই যেমন যত্নের অভাবে আমার অতি ভালোবাসার, অতি আকাঙ্খার বৃষ্টিটা আজ আমাকে কিছুতেই ছুঁতে পারছে না। 

আমার জানালার ওপাশের কাঁঠাল গাছটায় একটানা সরসর শব্দে পানি ঝরছে। মনটা কোথায় যেন মরে গেছে। অনূভূতিশুণ্য, বিবশ হয়ে আটকে আছে একটা বাড়ির বারান্দার স্মৃতিতে।

এই শহরটা, এর মানুষগুলো আমাকে দিনকে দিন বদলে যেতে বাধ্য করছে। এক দুপুরে তাজমহল পার্ক মাঠে টানা একটা ঘন্টা মাঠে শুয়ে বৃষ্টি অনুভব করেছিলাম। সেই আমাকে আজ কেউ সিক্ত করতে পারছে না। একটা সময় টানতো, খুব টানতো। 

কোনদিন ভাবিনি আমার মনটা আজকের মত হবে। পৃথিবীর কোন আবেগ, স্পর্শ, ভালোবাসা আমাকে ছুঁতে পাবে না। এতটা অবশ অনুভূতি অন্তত আমাকে স্পর্শ করবে, কল্পনাতেও আসেনি কোনদিন। সত্যিই আসেনি। 

রাসেল ভাই বললেন সন্ধ্যায় দেখা করিস। সেন্ট্রাল রোডে ঢুকে রাস্তা হারিয়ে তার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। টানা ছয়বার ফোন দিয়েছিলেন। ধরিনি। মেয়েটা বলেছিলো জেমস চকলেট নিয়ে আসতে। আনিনি। কিছুই না করে চুল আর পাঞ্জাবি ভিজিয়ে ঘরে বসে আছি। 

আজকাল কাউকে ভালোবাসতেও পারছি না ঠিকঠাক মত। আসলে চাইও না বাসতে। একজনকে ছাড়া। যার ভালোবাসায় ভর করে আমি অনন্ত পথ, অনন্ত মুক্তির জীবনটাতে প্রবেশ করতে পারব। রাতে যখন বুয়েটের বিশাল মসজিদটায় পুরোপুরি একা বসেছিলাম। খুব ভালো লাগছিলো। সম্ভবত বিশালতার জন্য। বিশাল সবকিছুই আমাকে সিক্ত করে। বিশাল আকাশ, সমুদ্র, পাহাড়। কিংবা বিশাল  হৃদয়ের মানুষ।  এদের কাছে গেলে নিজেকে হারাতে হয় না। বিশালতার ছায়ায় আচ্ছন্ন লাগে, নিরাপদ মনে হয়!

জীবনটা কেমন করে যেন বয়ে যাচ্ছে। অথচ এই যেমন খুশি কেটে যাওয়াটা তো জীবনের উদ্দেশ্য ছিলো না। এইসব আবেগ আর, অনূভুতির কাছে পরাস্ত হওয়াটা তো আমাকে মানায় না। এতটা দূর্বল তো কখনও ছিলাম না আমি। হতে চাইওনি। 

কোন কোন ভরদুপুরে মা যখন ঘুম বাদ দিয়ে খেলতে যেতে দিতেন। আমি বারান্দায় খেলা বাদ দিয়ে আকাশ দেখতাম। নঈম মামাদের ছাদে একঝাঁক কবুতর উড়ে বেড়াচ্ছে। আমি ভাবতাম, আমি কবে এমন উড়তে পারব? নিজেকেই জবাব দিতাম- কোনদিন না! আমার ছোট্ট বুকে দীর্ঘঃশ্বাসের ঢেউ উঠতো। 

আমার এই একজীবনে পায়রা হয়ে ওড়া হলো না। খুব করে কারো জন্য নিঃসীম ভালোবাসা জমা করা হলো না, অনেক রঙয়ের ঘুড়ি ওড়ানোটা শেখা হল না, যে বৃষ্টিটাকে ভালোবাসতাম তাকেও ভালোবাসতে ভুলে যেতে হলো। এক এক করে সব কটা স্বপ্ন হারিয়ে গেলো। অদ্ভুত মুগ্ধতায় নিজের পুড়ে যাওয়া দেখি। অসহায় নিজেকে দেখে নিজে মায়া করি।

 হে পরম দয়াময়, আমাকে ক্ষমা করো। আমাকে টিকিয়ে রেখো ততদিন পর্যন্ত, যতদিন তুমি আমার উপর খুশি না হচ্ছো...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ