শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২

আমি আজকাল ভালো আছি...





গত এক সপ্তাহ ধরে মারাত্মক কাজের চাপ। মাথার ঘায়, কুত্তা পাগল অবস্থা! কিন্তু আমার কিছুই করতে মন চায় না। বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে জীবনে এরকম মৌসুমেরা আসে। মন চায় কিছুই না করে ঝিম মেরে বসে থাকি। আমার পায়ে শেকড় গজিয়ে যাক। মাথায় ডাল-পাতা। আমি বসে থাকি। ঝিম ধরে থাকি। আপাতত আমার ঝিম মারা মৌসুম চলছে। কোন কোনদিন অফিস পর্যন্ত যাই, এরপর আমার চিলেকোঠা অফিসের সামনে থাকা কাঁঠাল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে চিন্তা-ভাবনা করি অফিসে ঢুকাটা ঠিক হবে কিনা।

সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে গলির মোড়ের টঙে ঢুকে তিতা চা খাই। ঝিম মারা পর্ব শুরু। ওপাশে কেউ সিঙ্গারা ভাজে। আজকাল শালা সিঙ্গারাও খেতে ভালো লাগে না। এককালে এই সময়ে রিকশা নিয়ে এলিফ্যান্ট রোড চলে যেতাম একটাকার টেবলেট সিংগারা খেতে। এখন আর গায়ে গতরে জোশ নাই। বয়স হচ্ছে! 


কিছু পোলাপান মোহাম্মাদপুর আসে ইদানিং সিঙ্গারা খেতে। কি এক হাইপ উঠেছে। প্রতি সপ্তাহেই কেউ না কেউ আসছে মোহাম্মাদপুরে এই জিনিস খেতে। আমাকে ফোন দেয়, আমি বিরস চেহারা নিয়ে একটা সেকলো গিলে সলিমুল্লাহ রোডে দাঁড়িয়ে থাকি। এইসব অপেক্ষাগুলো আছে বলেই জীবন হয়তো সুন্দর।


৩ দিনের ছুটিতে সবাই এদিক ওদিক চলে গেছে। আমার মা-বাপের গুষ্টির সবাই হই হই করতে করতে গ্রামে চলে গেছে; আমার কন্যাসহ। আমার কিছুই করতে ইচ্ছা করলো না। আমি বটগাছের মত ঘরে বসে থাকতে চাইলাম। ছুটি তো আমার কি? আমার ঝিম ধরা মৌসুম চলছে। আমাকে অতি অবশ্যই ঝিম মেরে থাকতে হবে। জীবনে ঝিম জিনিসটার দরকার আছে। কিছুই না করে বটগাছ হয়ে যাবার দরকার আছে।


একটা বটগাছের ছায়ায়, মায়ায়, ডালে, পাতায় কত জীবন থাকে। কত মানুষ, প্রানী-পোকার প্রশান্তি থাকে। সেরকম একটা বটগাছ হতে পারলে ক্ষতি কি? মাঝে মাঝে কেউ কেউ এসে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শেয়ার করে আমার সাথে। আমি নাকি খুব ভালো শ্রোতা। মন দিয়ে শুনি। আসলে আমি কিছুই শুনি না। আমি শোনার ভান করে ঝিম ধরে থাকি। সমাধান দিতে পারি না কখনও, যে নিজেই সমস্যায় একাকার, সে অন্যকে সমাধান দেবে কি? তবুও কখনও কখনও মানুষ চায় তার কথা কেউ শুনুক। বুঝুক। সে যে দুনিয়ায় একা না এই গ্যারান্টিটা সে পেতে চায়। এমন কানওয়ালা বটবৃক্ষ হই কখনও কখনও। যে বৃক্ষ নিজের মধ্যে অন্যের কষ্ট শুষে নিয়ে অপরকে তার ছায়ার প্রশান্তি দিয়ে বলবে- আজ থেকে তুমি শুদ্ধ মানুষ! পবিত্র মানুষ। কিসের কী? মানুষেরা তাদের বটবৃক্ষের কাছে প্রশান্তি নেয়া শেষ হওয়া মাত্রই কেউ ডাল, কেউ শেকড় আবার কেউ কেউ পুরো বৃক্ষটাকে উপড়ে ফেলতে চায়।


আজকাল সবকিছু অদ্ভুত মনোটোনাস লাগছে। গাছের রঙ, আকাশের একঘেয়ে নীল, লোডশেডিং, পছন্দের কারও গলার স্বর। কিছুতেই আর আনন্দ পাচ্ছি না। এক জীবনে বোধহয় প্রচুর আনন্দ করে ফেলেছি, এখন নিদারুণ আনন্দহীনতার শাস্তি আমাকে দিচ্ছেন আল্লাহ। এরকমই প্রতিদিনকার একটা নিয়মিত দিন শেষ করে কবে যে টুপ করে ডুব দিয়ে দিব অনন্ত অসীমে কে জানে?


মাঝে মাঝে যখন হঠাৎ আজকের মতন অস্থির লাগে, যখন নিজেকে নিজে বুঝিয়ে শান্ত করতে পারিনা– তখন খুব করে একটি লাইনই বারবার মনে করতে চাই- “আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না”। এই জীবনে আসা প্রায় প্রতিটা মানুষ আমাকে নিরাশ করেছে। নিশ্চই আল্লাহ করবেন না। অবশ্যই করবেন না। এই আনন্দজনক আশা নিয়ে বেঁচে থাকাতে কোন মনোটোনাস ব্যাপার নেই। নিদারুন ঝলমলে একটা সুখ রয়েছে। নিজেক তখন বারবার বুঝাই- আমি আজকাল ভালো আছি। :) 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন