বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩

সেকালের ঢাকায় রমজান


শবে বরাত আসলেই মুসলমানেরা রমজানের আগমন সংবাদ পেয়ে যেত। রমজানের চাঁদ দেখার জন্য আজকের মতো কোনো কমিটি ছিল না। ঢাকার লোকেরা নওয়াব বাড়ির ঘোষণা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতো।


রোজায় চাঁদ দেখার জন্য লোকেরা সাধারণত বুড়িগঙ্গার তীরে খোলা জায়গায় চলে যেত। তবে তৎকালীন ঢাকার সর্বশ্রেষ্ঠ ইমারত হিসেবে আহসান মঞ্জিলের ছাদই ছিল চাঁদ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। নওয়াব বাড়ির লোকেরা সেখানে চাঁদ দেখার আয়োজন করতেন।


এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নওয়াব বাড়ির উত্তর আঙ্গিনায় ঘোড়া চক্করের মাঝখানে একটি কামান বসানো ছিল। ঐ কামান থেকে প্রতিদিন দুপুর একটার সময় একবার কামান দাগিয়ে সারা শহরবাসীকে সময় জানানো হতো। রমজানের চাঁদ দেখতে পাওয়ার সাথে সাথেই উক্ত কামান থেকে বার বার তোপধ্বনি করে সারা শহরবাসীকে রমজানের আগমণ বার্তা পৌঁছে দেয়া হতো।


আজকের দিনের মতো তখন রমজান মাসে সাইরেনের ব্যবস্থা ছিল না। ছিলনা মসজিদে মসজিদে এত মাইকের ব্যবস্থা। এজন্য নওয়াব বাড়ি থেকে প্রতিদিন ইফতারির সময় একবার করে কামান দাগানো হতো। রোজাদার মুসলমানেরা কামানের আওয়াজ শুনে ইফতার করতো।


সেকালে রোজার চাঁদ দেখা গেলে পরিবারের ছোট ছোটরা মুরব্বীদের সালাম ও কদমবুচি করত। বড়রা ছোটদের আদর করত। সামর্থবানরা ছোটদের উপহারসামগ্রী দিত।


ঢাকায় তখন এত কোরানে হাফেজ পাওয়া যেত না। তাই বেশিরভাগ মসজিদে সুরা তারাবী পড়া হতো। ঢাকা নওয়াব এস্টেট থেকে উল্লেখযোগ্য মসজিদসমূহে খতম তারাবী পড়ানোর জন্য হাফেজ নিয়োগ করা হতো।


ঢাকায় প্রায় সব মসজিদে নওয়াব বাড়ি থেকে তৈরী ইফতারি সাপ্লাই করা হতো। অনেক সময় নওয়াব সাহেব নিজে উপস্থিত থেকে ইফতারীর তদারকি করতেন।


রোজাদারদের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য মহল্লাসমূহে সেহেরীগান বা কাসিদার ব্যাপক প্রচলন ছিল। মহল্লা-সরদারগণ এটি তদারক করতেন। ২০ রোজার পর নওয়াব বাড়িতে বিভিন্ন মহল্লার নামকরা সেহেরী গায়কদের পাল্লা হতো এবং বিজয়ীদের পুরস্কার দেয়া হতো। একই ধরনের প্রতিযোগিতা মহল্লা সরদারগণও আয়োজন করতেন।


| সেকালের ঢাকায় রমজান |

 -এই ঢাকা সেই ঢাকা, ড.মোঃ আলমগীর থেকে সংগৃহীত 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন