মানুষ তার শেকড়ের সাথে বেইমানি করতে বেশ আরামবোধ করে। শূন্যে মাথা উঁচু করে ডাল-পালা মেলতে শেখা মাত্রই সে নিজেকে বিরাটাকার মুন্সি টাইপ কিছু একটা ভেবে নিজ শেকড়কে অস্বীকার করে বসে। সে ভুলে যেতে চায় নীরব-নিভৃতে যে শেকড় তার জন্মলগ্ন থেকে আজকের এই অবস্থানে আসতে সাথী হয়েছে তাকে আদতে দেখা না গেলেও এই শেকড়টাকে ছাড়া সে আসলে মূল্যহীন। স্রেফ পুড়িয়ে ফেলা খড়িকাঠ মাত্র।
আরও পড়ুনরাসুল(সা.) কিছু কিছু মানুষের কথাকে 'সিহর' বা জাদু বলেছেন। জাদু শব্দটা বাংলা ভাষায় কখনও কখনও পজেটিভ অর্থ নির্দেশ করলেও আরবি কিংবা ইসলামি পরিভাষায় সর্বদাই জাদু মন্দ বা ক্ষতিকর অর্থ নির্দেশ করে।
জাফর স্যার কিংবা শাহরিয়ার কবিরেরা অতি মার্জিত, সুন্দর ভাষা আর শব্দ নিয়ে খেলতে পারেন। কথার জাদুতে কেমন মায়া মায়া একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাদের তারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান সেই কৈশোর থেকে। ভালো-খারাপের ফিল্টার শেখান হাতে-কলমে।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভয়াবহ রকমের দুর্ভাগা। যে পত্রিক…
লিখতে বসেছি। বহুদিন পর। ঔদাসিন্যের সময়গুলোতে লিখতে বসিনা অনেকদিন। ভুল হলো কোথাও? বসিনা? নাকি পারিনা? নিশ্চিত নই সত্যিই!
একজন বললেন, আপনার সাহিত্যভাব আছে, একটা পজেটিভ টাইপ উপন্যাস লিখে দেন। ছাপাই!
নিজের সাথেই নিজে যুদ্ধ করি
রাত ১২.৩০।
নগরীর ব্যস্ততম রাস্তাটা খুব আদুরে ধরণের চুপচাপে ব্যস্ত। অদ্ভুত নীরবতা সবখানে.... সারাদিনের ভিক্ষা শেষে ৭/৮ বছরের পথশিশুটা বন্ধ দোকানটার সিঁড়িতে বসা। একা!
ওপাশ থেকে বেলুনওয়ালার চিৎকার-- কিরে বাড়ি যাইবি না? প্রচন্ড একা মেয়েটা তার ছলছলে চোখের ভাষায় শব্দহীন কোন একটা জবাব দেয়।
চোখের ভাষার জবাবটা বুঝে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে হাতের কোল্ড কফিটাতে টান দিতে দিতে গুণগুনিয়ে ফিরতে লাগলো বেলুনওয়ালা। হয়তো নিজ বাড়ি।
ভালোবাসতে জানতে হয়। প্রচন্ড অসুন্দর এই পৃথিবীটায় অদ্ভুত সুন্দরের…
গুগল সার্চ করলেই সবচেয়ে কাছের এটিএম বুথটার অবস্থান জানা যাবে। কিন্তু সার্চ করলেই জানা যাবে না সবচাইতে কাছের শিউলি ফুল গাছটার অবস্থান।
বস্তুগত আনন্দ লাভের হাহাকার এই দুনিয়াজুড়ে। শুধু আত্মিক আনন্দটার কোন ব্যবস্থা নেই। হালকা চোটে হাসপাতাল-ডাক্তার-নার্স সবকিছু ডেকে একাকার করে ফেলা যায়। কিন্তু বিষে-বেদনায় কারও ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে-মরে নি:শেষ হয়ে গেলেও সারাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই....
প্রতিদিন মানুষ দেখি। মৃত মানুষ। দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু ভেতরট…
মোগল সাম্রাজ্যের সময়ে মতিঝিল এলাকাটি মির্জা মোহাম্মদের মহল হিসাবে গণ্য হতো, যার মধ্যে ছিলো একটি ঝিল। শুরুতে সুকাকু মহলের ঝিল হিসাবে খ্যাত হলেও পরে এই ঝিলটি মতিঝিল নামে পরিচিত হয়ে উঠে, এবং এর নামানুসারেই এলাকাটির নামকরণ করা হয়।
মজার ব্যাপার হলো দেশ থেকে বহু হাতি-ঘোড়া বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এ ঝিলটির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। এক সময় এ ঝিলটি মুগদার মান্ডা এলাকার খালের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে একে নালা বললেও ভুল বলা হবে না। ছোট হতে হতে এর দৈর্ঘ্য বর্তমানে বড় জোর ৬০ থেকে ৭০ গজে এসে ঠেকে…
ছোট ভাইয়ের মেস। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফেনা ভর্তি টুথপেস্ট মুখে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এরা শাপলা দেখে।
বাড়িওয়ালাদের মন তাদের বাড়ির বারান্দার পরিমাপের সমানুপাতিক। একটা কৃপণ বাড়ির বারান্দায় কখনো পা মেলে বসা যাবে না, উঠোনও থাকবে না; কেবল শিকহীন এক খাঁচায় মাথা গুঁজে বেঁচে থাকা....
এমন মেসে থাকতে পারাটা ভাগ্যি বলতে হবে...
শহুরে চাঁদের মধ্যে মেকি মেকি একটা ভাব থাকে। ভাগ্য ভালো হলে এছাদ ওছাদের ফাঁক গলে উঁকি দিলে তার দেখা পেলেও পাওয়া যেতে পারে। আর দেখা গেলেও তেমন একটা আরাম নেই; টিউব লাইট আর জোছনার আলো পৃথক করাটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। শহুরে চাঁদ দেখলে আমার মনে হতে থাকে পাশের বাড়ির ৬ তলা ছাদটায় ডেকোরেটর ওয়ালারা বাঁশ দিয়ে বাতি জাতীয় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছেন। ও বাড়ির বিশেষ অনুষ্ঠানটা শেষ হলেই তড়িঘড়ি আবার খুলে নিয়ে চলে যাওয়া হবে ডেকোরেটর ওয়ালাদের ঠেলায় চড়িয়ে।
আরও পড়ুনসুনয়না,
তুমি কী জানো রাত বাড়ার সাথে সাথে ধ্রুবতারাটাকে একা রেখে বাকি সব তারারা যে পৃথিবীর আকাশ থেকে সরে যায়? এই তারাটা ঠিক ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা নিরীহ বোকা ছেলেটার মতো-- হাজার জ্বালাতনেও ছলছল চোখে জগতের নিষ্ঠুরতাগুলোকে যে গিলে নিত নীরবে, নিভৃতে।
আদম(আ.) এর সময়ে কুরবানি কবুল হলে আকাশ থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিতো। কুরবানি করার সাথে সাথেই তাই রেজাল্ট হাজির-- কার কুরবানি কবুল হলো আর কার হয়নি ফলাফল হাতেনাতে।
এখন কুরবানি হয় লাখে-হাজারে। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের দয়া করে গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তা না হলে এই অসততার বাজারে মানুষের কাছে ধরা খেয়ে যাবার ভয়ে কুরবানি দিতো ক জনে?
এখন কুরবানি হয় একে অপরকে বড় গরুর ঠাঁট দেখাতে; ফলাফল টা যদি হাতেনাতে সে সময়ের মতো পাওয়া যেত তাহলে নিজের ভন্ডামি আর অসততা প্রকাশ হয়ে পড়ার ভয়ে কু…
আকাশে কিছু চিল পাক খাচ্ছে বারবার! ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ।
রহমত মিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দীর্ঘ রাতের ক্লান্তি আর বিষন্নতায় কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছেন মনে নেই। চারদিকে কেমন শান্তি শান্তি একটা ভাব। ভয়ংকর ঝড়ের শেষ কিংবা উৎসব শেষের হাহাকারের মতো চারদিক শান্ত। নিথর। সুর্যটা সবে আড়মোড়া ভাঙা শুরু করেছে। গা জুড়ানো বাতাস আর শব্দ বলতে কেবল কলাগাছের ভেলাটার গায়ে আছড়ে পড়া পানি। ছলাৎ ছলাৎ!
অদ্ভুত একটা সময়ে বেঁচে আছি। অতৃপ্ত আত্মার খেলা সর্বত্র। এত এত কম্প্যারিজনের খিস্তি-খাউরে নিজ আত্মা, নিজ জীবনটাকে নিয়ে ভাববার ফুরসৎ নেই কারও। স্বামী-স্ত্রীতে, বন্ধুত্বে, ভ্রাতৃত্বে সবখানে কী যেন একটা মিসিং। কি যেন একটা নেই...কি যেন একটা...অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে হতে কখন যে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"- এর প্রকাশ ছেড়ে কোলন ডি আর কোলন অ্যাস্টেরিক্সে আটকা পড়ে গেছে আমরা তার থোড়াই খবর রাখি। আমার প্রিয় কাজ মানুষ দেখা। দেখি। ঘুরেফিরে দেখি। বারবার দেখি। শুনি। ঘুরেফিরে শুনি। বারবার …
আরও পড়ুনঅফিস থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা পেরুলো। জুতোর ফিতাটা বেঁধে ওপরে চোখ তুলেই টের পেলাম ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে গেছে। আজ শহরের বিশেষ একটা দিন! শ্রাবণের আকাশটা অতিমাত্রায় ফকফকে; আর তার বুকে প্যারাসিটামল আকৃতির গোলগাল একটা হলদে চাঁদ ঝুলে আছে। ভয়ানক সুন্দর এক আকাশ। জগতের যে হাতে গোণা কয়টি বিষয় নিয়ে আমি অতিমাত্রায় আহ্লাদিত হয়ে পড়ি তার অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে—পূর্ণিমা। শহরের পূর্ণিমা বরাবরই আমার কাছে শো-পিস টাইপ লাগে।ডেকোরেটরের কাছ থেকে বিশেষ দিনে ভাড়া করে আনা প্যান্ডেল টাইপের ব্যাপ…
আরও পড়ুনপ্রিয় স্বাতী, "বৃষ্টি ছাড়া তোমাকে আমি কখনো লিখি না।" তোমার অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতেই আজ লিখতে বসেছি। গত দুদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে-- একঘেয়ে, একটানা। রাস্তা-ঘাটে পানি-টানি উঠে বিশ্রী অবস্থা, থলথলে কাঁদা, জুবজুবে ভেজা শার্টে ছেয়ে গেছে গোটা শহরটা। পত্রিকার ভাষায়-- "টানা বর্ষনে নাকাল শহরবাসী।" কথা ঠিক! আমি নাকাল হয়ে পড়ছি। আমি নাকাল পড়ছি এক অদ্ভুত ভালো লাগার ঘোরময় বিষন্নতায়, ঘরের জানালার কাছে থাকা গাছটার একটানা সরসর শব্দটায়, হীম করা বাতাস আর মাটির সোঁদা গন্ধটার ম…
আরও পড়ুনআমাদের ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়িভর্তি মানুষজন আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হুলস্থুল এক কারবার। একসাথে ঠেলা-ঠেলি, ঠাসাঠাসি করে কাঠের বাক্সে থান্ডার ইন প্যারাডাইজ, শুক্রবারের আলিফ লায়লা অথবা ঈদের ইত্যাদি অনুষ্ঠান ই ছিল আমাদের জীবনের মহৎ বিনোদন।
ও নাহ...আমার আরেকটা গোপন বিনোদন ছিল। বকা খাবার ভয়ে যেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম, আজীবন! এই গোপন বিনোদন টা ছিল-- ঝুম বৃষ্টির রাতগুলো! দেখা গেল মারামারি, কান্নাকাটি করতে করতে কোন এক রুমে ঘুমিয়ে পড়েছি। মামা, খালা কিংবা নানুর কাছে। (এধরণের পরিবারে সা…
এক সময় আমার খুব প্রিয় একটা লাইন ছিল-- "আমি তোমাকেই বলে দিবো, সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়"। লোকটা কিসের ভুল দরজায়, কার ভুলে কড়া নেড়ে উদাস হয়েছিলো আমি নিশ্চিত নই। তবু লাইনটা যতবার শুনেছি এক গভীর বিষন্নতায় ডুবে গেছি। আমার পুরোনো তীব্র মাথা ব্যাথাটা আজ আবার চেপে ধরেছে। এলোমেলো শব্দগুলো ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে।এদিক-ওদিক। এখানে-ওখানে। এক এক করে ধরে এনে সেলাই করতে হচ্ছে জোর করে। ঘর অন্ধকার করে ল্যাপটপটে খুটখুট। চোখে চাপ পড়ছে। খুব! মাথা ব্যথাটা আরও বাড়ছে। বাড়ুক। …
আরও পড়ুনবিবাহের কথা উঠলেই আচমকা আমাদের ভাইয়েরা সব সাহাবী হয়ে ওঠেন। হৈ হৈ রব ওঠে-- এক সাহাবা স্রেফ কুরআন দিয়ে মোহর দিসেন। আজকালকার বেত্তমিজ দুনিয়া, ১০-১৫ লাখের নিচে কথাই নাই। বিবাহ কঠিন, অতি কঠিন! সমাবেশের বাকিরা মাথা নাড়েন-- ঠিক বলেছেন! ঠিক বলেছেন!
ইদানিং এসব শুনলেই আমি নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জাজমেন্টাল হয়ে উঠি
'বেকসুর খালাস' শব্দটার ওপর আমার এমনিতেই এলার্জি আছে। এলার্জিটা আরও পাকাপোক্ত হয়েছিল ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন যখন বাড়ির গৃহকর্মীকে নির্যাতন করেও বেক্সুর খালাস পেয়ে গিয়েছিলেন, তখন। পিঠ, হাত, পা সর্বত্র কাটা-ছেঁড়া, খুনতির ছ্যাকার দাগ থাকা মেয়েটা নাকি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিল। শাহাদাতের বিরুদ্ধে আনা সকল প্রকার অভিযোগও নাকি মিথ্যা ছিল। এর কিছুদিন আগেই ক্রিকেটার রুবেল-হ্যাপির ঘটনা জাতি দেখেছিল। আর অল্প কিছুদিন পরেই সাব্বির রহমান, আল আমিন নামক আরও দুই ক্রিকেটার বিপিএল চলাকালীন…
আরও পড়ুনপ্রিয় স্বাতী, কখনও কি খেয়াল করে দেখেছো? মধ্য দুপুরের রোদে যে একটা গন্ধ আছে?কেমন নেশাধরা উদাসি একটা গন্ধ। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের নৈঃশব্দ্যের গন্ধটা মাথার ভেতরটা কেন যেনো এলোমেলো করে দিতে চায় বারবার। বুকের ভেতরটায় ছুরি চালিয়ে ফালি ফালি করে দিতে চায় হৃদপিন্ডটাকে। নির্জন আবাসিক এলাকাটার গলিতে হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা রিকশার ছন্দময় টুংটাং। গলির মোড়ের মোটর গাড়ির হুসহাস। আর ওপাশে গজিয়ে ওঠা বস্তিটা থেকে কোনো এক শিশুর শৈশব ঠেকিয়ে দিতে চাওয়া প্রৌঢ়ের হৈ হৈ চিৎকার। অথবা পেছনের মেহগনি গাছটায় নতুন বাস…
আরও পড়ুনমাগরিবের নামাজ শেষে টংয়ে বসে পোলাপান কে গভীর জীবনবোধ সম্পর্কিত লেকচার দিচ্ছি। অপু ভাইয়ের উচ্ছ্বসিত কন্ঠের ফোন-- আরমান, চাঁদ দেখসো?
চায়ের কাপে চুমুকু দিতে দিতে-- নাহ, উঠসে নাকি?
আরে মিয়া কি বলো? এত্ত বড় আর এত্ত ক্লিয়ার চাঁদ আমি জীবনে দেখি নাই। পশ্চিম আকাশে দেখো।
পশ্চিম দিক কোনটা? এইটাই তো চিনি না। (এদিকে ওদিক খুঁজতে খুঁজতে)...
ইকবাল চাচা হাত দিয়ে দিক নির্দেশ করতেই সেদিক ঘুরে উপরে তাকালাম, মনে মনে আশা-- "এত্ত বড় আর এত্ত ক্লিয়ার চাঁদটা" দেখবো। চাঁদ খুঁজে পাওয়া গেল না।…
সারাটাদিন গুমোট মেঘলা আকাশ। ঘরের ফ্যানটায় কোনো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার গতি ধীর। এতটাই ধীরে যে এর বাতাস শরীর পর্যন্ত এসে পৌঁছে না। স্থিতি আর গতির মাঝামাঝি একটা ব্যাপার। তবু নিজেকে প্রবঞ্চনা দেবার জন্য চালু ফ্যানের দিকে মনো্যোগ সহকারে তাকিয়ে গা জুড়ানোর চেষ্টা করছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। অতি বৃদ্ধ এই ফ্যানটার দিকে কখনও সময় করে তাকানো হয়নি। আজকের গুমোট হাওয়া আর সেই সাথে ফ্যানের যৌথ স্ট্রাইক বাধ্য করলো তাকে দেখতে। রোজাদারের দুআ নাকি কবুল হয়। বৃষ্টির দুআ করতে থাকলাম। দুআ কবুল হলো।…
আরও পড়ুনগ্রামের বাড়ি যাবার জন্য ছোটবেলায় আমার একটা লুকোনো লোভ ছিলো। জোনাক-লন্ঠন তৈরির লোভ। রাত হলেই সেজ চাচাকে সাথে নিয়ে স্কুল মাঠের পেছনের বাঁশ ঝাড়টা তে চলে যেতাম। ইলেকট্রিসিটির কেরামতিহীন অজ পাড়া গাঁ-টার ঘুটঘুটে আঁধার উপেক্ষা করে শত শত সবুজ জোনাকি জ্বলছে বাঁশঝাড়ের এখানে-ওখানে-সবখানে। আমি তীব্র উত্তেজনায় হরলিক্সের কৌটা হাতে করে ছুটছি।
খপ করে ২-৩ টা করে জোনাকি ধরে ফেলছি, আর পাচার করে দিচ্ছি হরলিক্সের বয়ামে। সেজ চাচা তাড়াহুড়ো কর বয়ামের মুখ লাগিয়ে ফেলছেন। ১৫-২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আমরা ম…
সেদিন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম— আমি আমার এই জীবনে তিনটা দশক দেখে ফেলেছি— ৮০, ৯০ এবং ২০০০। প্রায় তিনটা ভিন্ন ভিন্ন দশক, ভিন্ন ভিন্ন সময়। যতই মনে মনে নিজেকে ৯০ দশকের সেই অস্থির কিশোরটা হিসেবে কল্পনা করি না কেন আর মাত্র অল্প ক’টা দিন পরেই একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ হিসেবে সবাই আমাকে কৃত্রিম/অকৃত্রিম সম্মান প্রদর্শন করবে। নামের শেষে যুক্ত হবে ভদ্দরনকি—‘সাহেব’ খেতাব। জীবনের এতগুলো বছর কীভাবে চলে গেল সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে বাকিটা সময়ও যে এভাবেই জাস্ট ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যাবে সে …
আরও পড়ুনএকটা সময় মানুষের বদলে যাওয়া দেখে খুব অবাক হতাম। কী নৃশংসভাবে সব ছিঁড়ে-ফুঁড়ে সম্পর্কগুলোকে গলা টিপে হত্যা করার ক্ষমতা রাখে মানুষ, অথবা সব আর্দ্র অনুভূতি আর স্মৃতির গতিময় রঙ্গিন সময়গুলোকে অগ্রাহ্য করে ফেলতে পারে এক নিমিষে! কতটা অবলীলায়, কতটা নির্মমতায়...
মানুষের কাছ থেকে চোখ সরাই। আমি বরং প্রকৃতি দেখি। হতবাক হয়ে আবিষ্কার করি— মন্থর থাকা ব্যাপারটাই সৃষ্টির মাঝে নেই। গাছের কচি পাতাগুলো তার রঙ বদলায়, রঙ বদলায় আকাশ, নদী তার গতিপথ, নক্ষত্র আর প্রতিটা রাত তার মায়াবী ক্ষণগুলোকে বদলে ফ…
'Nothing Is impossible' টাইপ বিজ্ঞাপনীয় ভাষণগুলো আসলে একটি মহামারী প্রজাতির মিথ্যা কথা ৷ মানুষের নিজ সীমাবদ্ধতাই তাকে রুখে দেয় জীবনের প্রতিটি পদে পদে। অসম্ভব সবকিছু করে ফেলা তো দূর কি বাত, মানুষ চাইলে নিজ কনুইটাকেও জিভ দিয়ে স্পর্শ করে দেখাতে পারে না। ছ'ফুট উচ্চতার মানুষটা, প্রাণপন চেষ্টা করেও নিজগুণে দশফুট উচ্চতার ছাতটা ছুঁয়ে দেখাতে পারে না। শরীরের চামড়ায় গজিয়ে ওঠা ছোট্ট ফোঁড়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কিছুতেই। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে নিমিষেই, কিলবিল করে। মাথার চুল…
আরও পড়ুনদৃশ্য-১:
জুমু'আ শেষে আড্ডারত কয়েকটি যুবক।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। কথায় কথায় মুখ দিয়ে আংরেজি বুলি আওড়াচ্ছে একজন-- It was fu**ing.....বলতে বলতেই হাতে থাকা সবুজ মাউন্টেন ডিউয়ের অবশিষ্ট তরলটুকু গলায় পাচার করে দিয়ে বোতলটা ছুঁড়ে ফেললো রাস্তায়। টকাৎ....
দৃশ্য-২:
জীবনে কোনদিন পরিবর্তন না করা অতি ময়লা শাড়ি আর মুখ-চুল ভর্তি ফাউন্ডেশন অথবা হেয়ার কালারের বদলে কালি-ময়লার আস্তরন আর কাঁধে সাদা প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এগিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা। উপুড় হয়ে অতি সাবধানে তুলে নিলেন বোতলটা, যেন তার অতি আ…
নিউজ দেখলাম একটা মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করেছে। নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষা হবে। লাখ লাখ ছেলেমেয়ে এ+ পাবে আর মুদ্রার উল্টো পিঠে থাকা কিছু ছেলেমেয়ে অকৃতকার্য অথবা অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলাফল করে আত্মহত্যা করবে। সমাজের অতি সাধারণ, মুখস্থ একটি চিত্র। তবু বাআঁলি জাতির এতে কোনোদিন টনক নড়বে না। একটা ছাত্র/ছাত্রী খারাপ রেজাল্ট করা মাত্রই পুরো সমাজ তার উপর চেপে বসবে। হাসাহাসি-গালিগালাজ-মার কোনো কিছুই বাদ যাবে না মেন্যু থেকে। ১৫-১৬ বছরের একটা স্রেফ বাচ্চা ছো…
আরও পড়ুনআমার ফোনে কিছু মৃত মানুষের কন্টাক্ট নাম্বার আছে। নিয়মানুসারে সেগুলো ডিলেট করে আমার তাদের ভুলে যাওয়া উচিত। মৃত মানুষদের জন্য অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই, তাদের সকল আপাত স্মৃতি জোর করে দূরে ঠেলাটাই মানব সন্তানের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি।
আত্মহত্যা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা—
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যা নিয়ে যারা বারবার কথা বলে তারা আসলে এমন কিছু কখনোই করবে না।
বাস্তবতা: প্রায় প্রত্যেক আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিই কোনো না কোনো সতর্ক হবার মতো সংকেত তাদের কাছের মানুষদের দিয়ে থাকেন।
যেমন—“ আমি না থাকলে তুমি বুঝতে পারবে।”
“আমার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।”
সাধারণ ভাবে বা যতটাই হাস্যচ্ছলে এজাতীয় কথা বলা হোক না কেনো এর পেছনে ভয়ংকর আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের থাকে তারা …
আমাদের দেশে ভাস্কর্য নামক কিছু অদ্ভুত দর্শন জিনিস দেখা যায়। এগুলো যে আসলে ঠিক কি জিনিস সেটা যিনি তৈরি করেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেও শিউর থাকেন কিনা সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান। অবশ্য যে দেশে হাজার কোটি টাকার উড়াল সেতু বানিয়ে ফেলার পর টের পাওয়া যায়-- ইস সি রে! ভুল জিনিস বানিয়ে ফেলসি। সে দেশের ভাস্কর্যগুলো নিপুণ হাতে তৈরি হবে এমনটা আশা করাটা বাতুলতা বৈ কি! কোনো এক অদ্ভুত কারণে এসব শিল্পীদের ধারণা জন্মেছে যে বকের ঠ্যাং কাকের ঠ্যাং জাতীয় কিছু একটা বানিয়ে রাস্তায় সাটি…
আরও পড়ুন
Social Plugin